খেলা
অন্য রোনালদোর গল্প

এস. কে. শাওন: রোনালদো! নামটি শুনলেই ভেসে উঠে পর্তুগালের রাজপুত্র, বিশ্ব ফুটবলের পোষ্টার বয় ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর ছবি। কিন্তু কয়েক বছর আগের চিত্র ছিলো পুরোপুরি আলাদা। তখন রোনালদো বললেই ভেসে উঠতো কিংবদন্তী স্ট্রাইকার, ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানো রোনালদোর ছবি। বলছি সাবেক ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার রোনালদোর গল্প।
ম্যাচের পুরো সময় জুড়ে অলস ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের আশেপাশে হেঁটে বেড়ালেও বল পাওয়া মাত্রই রক্ষণভাগের ফুটবলারদের ফাঁকি দিয়ে গোল করার মতো অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর! এভাবে গোল করার সক্ষমতাই তাঁকে সমসাময়িক অন্যান্য খেলোয়াড়দের চেয়ে আলাদা করেছে। যার পুরো নাম রোনালদো লুইস নাজারিও ডি লিমা। মাত্র ১৭ বছর বয়সে অভিষেক হওয়া রোনালদো ১৯৯৪ বিশ্বকাপে জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যান। যদিওবা তখন কোন ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু ১৯৯৮ বিশ্বকাপে রোনালদোকে আর সাইড লাইনে বসে থাকতে হয়নি। সে বিশ্বকাপে তিনি গোল করেছেন ৪টি, করিয়েছেন ৩টি।এই আসরে ব্রাজিল রানার্সআপ হলেও বিশ্বকাপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপুটে ফুটবল খেলেছেন রোনালদো।

২০০২ বিশ্বকাপে রোনালদোকে ‘বিশ্বকাপ ট্রফি’ থেকে বঞ্চিত হতে হয়নি। এই আসরে শুধুমাত্র ইংল্যান্ড ছাড়া বাকি সব দলের বিপক্ষে গোলের দেখা পান তিনি। এমনকি ফাইনালেও তাঁর জোড়া গোলেই পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় ব্রাজিল।
তখন তিনি পুরো আসরে ৮টি গোল করে অর্জন করেছিলেন গোল্ডেন বুটের সম্মান। ২০০৬ সালে জার্মান বিশ্বকাপেও খেলেন তিনি।ওই আসরে ৩টি গোল করে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড স্পর্শ করেন রোনালদো। বিশ্বকাপে রোনালদোর সর্বোচ্চ ১৫টি গোলের রেকর্ড এখনও অম্লান! শুধু তাই নয়,মাত্র ২০ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার। ২০০৭ সালে রোনালদো ফরাসি ফুটবলে সর্বকালের সেরা একাদশের একজন হিসেবে স্থান পান। ২০১০ সালে বিখ্যাত অনলাইন পোর্টাল গোল ডট কম এর অনলাইন ভোটের ৪৩.৬৩% ভোট পেয়ে ‘প্লেয়ার অব দ্য ডিকেড ‘ পুরস্কার পান।
এমনকি মেসি ও জিদানের সঙ্গে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে তিন বা তার অধিকবার ফিফার বর্ষসেরা খেতাব জিতেছেন।ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে ৯৭টি ম্যাচে মাঠে নেমে ৬২টি গোল করেন। ক্লাব ফুটবলেও ছিল স্ট্রাইকারের জয়জয়কার। খেলেছেন বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের মতো বিখ্যাত ক্লাবে। তাছাড়াও ইন্টার মিলান ও এসি মিলান ছিল উল্লেখযোগ্য ক্লাব।

তবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে খেলেছেন ব্রাজিলীয় ক্লাব ক্রুজিরোতে। এমনকি ক্যারিয়ারের শেষ দিকেও খেলেছেন স্বদেশী ক্লাব করিন্থিয়াসের হয়ে। ২০১১ সালে রোনালদো ফুটবলের সবুজ গালিচা থেকে অবসর নিলেও ফুটবলকে বিদায় জানাননি!২০১৮ সালে তিনি লা- লিগা ক্লাব রিয়াল ভাল্লাডোলিদের ৫১% মালিকানা কিনে নেন। এছাড়াও ২০১৪ সালে ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপে রোনালদো অ্যাম্বাসেডরের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেছেন। খেলাধুলা থেকে অবসর নেওয়ার পর ৪৩ বছর বয়সী এই জীবন্ত কিংবদন্তী জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিতে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।