ফিচারহোমপেজ স্লাইড ছবি
অমিত চাকমাঃ যাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে বাংলাদেশ!

কামরুজ জামান: “গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ! আমার মন ভোলায় রে।”
এই রকম মন ভোলানো অপরুপ মায়াময় পথ ধরে প্রতিদিন স্কুলে যেতো এক আদিবাসী ছেলে। বুক ভরা স্বপ্ন তার!
একদিন ঠিকই সে আকাশ স্পর্শ করবে। ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সে আজ স্বপ্ন জয়ী এক আলোর মশাল।
যে শুধু রাঙামাটির আদিবাসী নয় আজ সমগ্র বাংলাদেশের গর্ব।বিশ্বের দরবারে যে বাংলাদেশ কে প্রতিনিধিত্ব করছে গৌরবের সাথে। যে ছেলেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেনি। সেই ছেলেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে এসেছে প্রধান বক্তা হয়ে। অবাক করার মত ঘটনা! এমন অনেক অবাক করা ঘটনা যিনি ঘটিয়ে চলছেন তার নাম অমিত চাকমা। শুনতে রুপকথার গল্পের মত মনে হলে ও তার জীবন টা রুপকথা ছিলো না।
অমিত চাকমার জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৫ এপ্রিল এক চাকমা পরিবারে। জন্মস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলা শহরের পশ্চিম ট্রাইবেল আদমে।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে উদ্বাস্তুদের মধ্যে ছিল তাদের পরিবারও। তার বাবা প্রভাত কুমার চাকমা মৃত্যুবরণ করেন কয়েক বছর আগে। মাতা আলোরাণী চাকমা এখনও বেঁচে আছেন।
অমিত চাকমা ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করে আলজেরিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেদেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় আলজেরিয়ান পেট্রলিয়াম ইনস্টিটিউটে পড়তে যান। সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন ‘রাসায়নিক প্রকৌশল’ বিভাগে। ১৯৭৭ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কানাডায় চলে যান মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে এমএএস এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ।
এরপর ১৯৮৮-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগারির রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপনা করার পর ১৯৯৬ সালেই চলে যান ইউনিভার্সিটি অব রেগিনাতে। সেখানে নিযুক্ত হন রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে। ১৯৯৯-২০০১ সাল পর্যন্ত রেগিনার ভাইস প্রেসিডেন্ট রিসার্চ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে থাকার সময়ই অমিত চাকমা কানাডার ‘টপ ৪০ আন্ডার ৪০’ এ স্থান করে নেন।
এরপর ২০০১ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু’র অ্যাকাডেমিক ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং প্রভোস্টের দায়িত্ব নেন। অমিত চাকমার মূল গবেষণার বিষয় প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকৌশল এবং পেট্রলিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
২০০৯ সালের ১ জুলাই প্রফেসর ড. অমিত চাকমা ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও’র প্রেসিডেন্ট ও উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনে তাকে করা হয় প্রধান বক্তা।
একই অনুষ্ঠানে অমিত চাকমাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
সম্প্রতি তিনি ভূষিত হয়েছেন এক বিরল সন্মানে।
কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির একটি ভবনের নাম অমিত চাকমার নামানুসারে অমিত চাকমা ইঞ্জিনিয়ার স্কুল বিল্ডিং অর্থাৎ ‘অমিত চাকমা প্রকৌশল ভবন’ করা হয়েছে। এই বিরল সন্মান একজন বাংলাদেশির জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
অমিত চাকমা নামের এই স্বাপ্নিক শিক্ষক স্বপ্ন দেখেন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাবে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে।