বিদেশ
আইনস্টাইনের জন্মদিনেই চলে গেলেন হকিং

১৯৬৩ সালে চিকিত্সকেরা জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন— দু’বছরের বেশি আর বাঁচবেন না। তাঁর বয়স তখন মাত্র ২২। চিকিত্সকদের ধারণা সত্যি হলে, মহাবিশ্বের রহস্য সন্ধানী তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, চিন্তাবিদ, এবং উচ্চশিক্ষিত নন এমন উত্সাহী পাঠকের জন্য বিজ্ঞান-তত্ত্বের জনপ্রিয় লেখক স্টিফেন হকিংকে পেতামই না আমরা। কিন্তু মারাত্মক স্নায়ুর অসুখ এএলএস (অ্যামিয়োট্রপিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস) সঙ্গে নিয়েই ৭৬ বছর বয়স পর্যন্ত লড়ে গেলেন তিনি। শুধু লড়াই নয়, কাজ করে গেলেন আমৃত্যু। অবশেষে শেষ হল সেই মহাজীবনের। বুধবার ভোররাতে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে, নিজের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন স্টিফেন হকিং।
জীবদ্দশাতেই তিনি কিংবদন্তী হয়ে উঠেছিলেন। ঘটনাচক্রে তাঁর জন্ম আর মৃত্যুর সঙ্গে জুড়ে রইল বিজ্ঞানের আরও দুই কিংবদন্তী পদার্থবিদের নাম। তাঁর জন্মদিন ৮ জানুয়ারি গ্যালিলিও গ্যালিলির মৃত্যুদিন। আর যে দিন মারা গেলেন হকিং, সেই ১৪ মার্চ অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিন।
১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্ম প্রবাদপ্রতীম এই বিজ্ঞানীর। ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’-এর লেখকের আপেক্ষিকতাবাদ, কসমোলজি, কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং ব্ল্যাকহোলের উপর গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান প্রফেসর অব ম্যাথামেটিক্সের আসনে দীর্ঘ ৩০ বছর (১৯৭৯-২০০৯) ছিলেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এই অ্যাকাডেমিক পদে এক সময় বসেছিলেন আইজাক নিউটন।
স্টিফেন হকিং রেখে গেলেন তিন ছেলে লুসি, রবার্ট এবং টিম-কে। বিজ্ঞানীর মৃত্যুতে তাঁর ছেলেদের তরফে জানানো হয়েছে, “বাবার মৃত্যুতে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত। এক জন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হওয়ার পাশাপাশি তিনি এক জন অসাধারণ মানুষও ছিলেন।”
অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের পর, আর কোনও বিজ্ঞানী বিশ্ব জোড়া এত জনপ্রিয়তা পাননি। তাঁর জীবন নিয়ে সিনেমা পর্যন্ত হয়েছে। তবে যে বই তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে তুলেছিল, তা অবশ্যই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’। ক্লাস টেনের অঙ্ক জানা ছাত্রও আধুনিক মহাকাশবিজ্ঞান বা ব্রহ্মাণ্ডচিন্তার তত্ত্ব জেনেছেন এই বই পড়ে।
আসলে পদার্থবিদ্যা যত বেশি বেশি জটিল অঙ্কনির্ভর হয়েছে, তত বেশি এর বিযুক্তি ঘটেছে বিশেষজ্ঞ নন এমন মানুষদের থেকে। হকিংয়ের আগেও বহু বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞানলেখক এই সমস্যার কথা মাথায় রেখে, কঠিন তত্ত্বকথাকে যথাসম্ভব সহজবোধ্য করে লেখার কাজ করেছেন। স্বয়ং আইনস্টাইন নিজের অপেক্ষবাদ নিয়ে পপুলার সায়েন্সের লেখা লিখেছেন। কিন্তু হকিং-এর বইটির জনপ্রিয়তা অতীতের সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত এই বই শুধু ইংরেজিতেই বিক্রি হয়েছে কোটির উপর। টানা পাঁচ বছরের উপর লন্ডন সানডে টাইমসের বেস্টসেলার তালিকায় থেকেছে এই বই। অনুবাদ হয়েছে বাংলা-সহ বহু ভাষায়।
নতুন বার্তা/এমআর