জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
আনিসুল হক: যে স্বপ্নের সমান বড়

‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’ এই কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন তিনি। তিনি বলতেন, মানুষ কখনো একা সুখী হতে পারে না সবাইকে নিয়েই সুখী হতে হয়। তিনি শুধু নিজের কথা চিন্তা না করে মানুষের কথা ভাবতেন। মানুষের অধিকার আদায়ের মিছিলে তিনি ছিলেন অগ্রগামী সৈনিক। এই সহজিয়া মানুষ টি ভালোবাসতেন স্বপ্ন দেখতে; স্বপ্ন দেখাতে। ইট পাথরের শহর ঢাকা কে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন বিশ্বমানের এক আধুনিক সবুজ শহর হিসাবে। তার চোখে স্বপ্ন দেখেছিলো সমগ্র ঢাকাবাসী। কিন্তু ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর স্বপ্নভঙ্গ হয় ঢাকাবাসীর। বেদনার কালো মেঘ ঢেকে যায় বাংলাদেশের আকাশ।
এই দিন অনন্ত শূণ্যতায় পাড়ি জমান স্বপ্নবাজ মানুষ টা। তিনি আর কেউ নন মানবিক মেয়র, ব্যবসায়ী, উপস্থাপক আনিসুল হক। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল এই মানুষের হৃদয় ছিলো শিশুর সারল্যে ভরা। মানুষের দুঃখ তাকে স্পর্শ করতো। একজন মানবিক রাজনীতিবিদ আনিসুল হকের শূণ্যতা অসীম। তিনি ভালোবাসাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তি মনে করতেন। তিনি ভালোবাসা দিয়ে জয় করেছিলেন কোটি মানুষের হৃদয়। মৃত্যু নামে এক চিরন্তন খেয়ায় পার হয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন মানুষের ভালোবাসায়।
সত্যিই তিনি তার স্বপ্নের সমান বড় ছিলেন। কারণ তার স্বপ্ন ছিলো মানুষের কল্যাণে কাজ করা। তিনি তা করেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। উপস্থাপনা থেকে শুরু করে ব্যবসা,রাজনীতি সহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল এই মানুষের বেড়ে উঠার পথ ছিলো বন্ধুর। তার ছিলো সংগ্রামী জীবন। যে জীবনের পথে পথে ছিলো অনিশ্চয়তা। অনিশ্চয়তার পথে স্বপ্ন তাকে বাতিঘরের মত পথ দেখিয়েছে। জীবন যোদ্ধা আনিসুল হকের জীবন আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার বাইবেল। তার প্রয়াণ দিবসে আমাদের অসীম শ্রদ্ধা। অনন্ত শূণ্যতায় ভালো থাকুন মানবিক মেয়র আনিসুল হক।
যেভাবে আজকের আনিসুল হক
টিভি ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী নেতা এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র আনিসুল হকের জন্ম অক্টোবর ২৭, ১৯৫২ সালে। তাঁর বাবা মরহুম মোহাম্মদ শরিফুল হক এবং মা মরহুমা রওশন আরা হক। দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে ১৯৭০ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক(সম্মান) ডিগ্রী অর্জন করেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
৮০ থেকে ৯০র দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন আনিসুল হক। টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর উপস্থিতি আর অনুষ্ঠানে তাঁর আনা ভিন্নতা টিভিতে এনেছিল নতুন রূপ।
আনিসুল হক বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট ছিলেন ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। তিনি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত।২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এই সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট ছিলেন আনিসুল হক।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলে। নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও ‘স্মার্ট’ নগরী হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রচারের শুরু থেকেই তিনি বলতেন, ঢাকার সমস্যা চিহ্নিত, এখন সমাধান করতে হবে। সেই অনুসারে নির্বাচিত হওয়ার পর শুরু করেন ‘সমাধান যাত্রা’।
২০১৭ সালে ২৯ জুলাই সপরিবারে লন্ডনে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন আনিসুল হক। অসুস্থ বোধ করায় লন্ডনের একটি হাসপাতালে গেলে সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষা চলার মধ্যেই সংজ্ঞা হারান তিনি। পরে চিকিৎসকরা তার মস্তিস্কের রক্তনালীতে প্রদাহজনিত সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিস শনাক্ত করেন। অবস্থার উন্নতি ঘটলে ৩১ অক্টোবর তাকে আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশনে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমান্বয়ে অবনতি হতে থাকে। ৩০ নভেম্বর লন্ডন সময় ৪টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই স্বাপ্নিক।