বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
ইন্টারনেট ভিত্তিক স্ট্রিমিং সাইট কি সিনেমা হলের জন্য হুমকি?

মঞ্জুর দেওয়ান: একটু ভেবে বলুন তো; আধুনিক জীবন আমাদের মুক্ত করেছে, নাকি গৃহবন্দী করেছে? আমার কাছে মনে হয় ব্যাপারটা অনেকটা ‘Every action has reaction’ উক্তির মতো। ভালো এবং খারাপ দু’টি বিষয়ই এখানে বিদ্যমান। তবে কোনদিকের পাল্লা বেশি ভারী হবে সেটি-ই মূল কথা। এক অর্থে পৃথিবী এখন দুই দলে বিভক্ত। একদল বলছে ঘরে বসে থাকো, আমরা সব জিনিস তোমাকে ঘরে নিয়ে দিয়ে আসবো। আর এক দল বলছে বাইরে এসে দেখো, জীবন্ত অভিজ্ঞতা নাও! প্রযুক্তির বিকাশের ফলে সিনেমা কিংবা অন্যান্য বিনোদনের অবস্থাও হয়েছে অনেকটা সেরকম। সিনেমা হল আর ইন্টারনেটের বিভিন্ন স্ট্রিমিং সাইটের সাথে একধরনের বিবাদ শুরু হয়েছে। সিনেমা হল বলছে জীবন্ত অভিজ্ঞতা নিতে। বার্তা দিচ্ছে বড় পরিসরের সিনেমার স্বাদ অন্যরকম। অন্যদিকে ইন্টারনেট ভিত্তিক সব স্ট্রিমিং সাইট বলছে, কষ্ট করে সিনেমা হলে আসার কি দরকার; আমরা থাকতেন!
হলিউডে অনেক আগে থেকে ইন্টারনেট ভিত্তিক জনপ্রিয়তা বাড়লেও বাংলাদেশে এর বিকাশ হতে শুরু করেছে বেশি দিন হয়নি। ইন্টারনেট ভিত্তিক স্ট্রিমিংয়ের কারণে হুমকিতে পড়েছে সিনেমা হল গুলো! দীর্ঘদিন ধরেই ভার্চুয়াল বিনোদনের বড় মাধ্যম হিসেবে কাজ করে আসছে ইউটিউব। ইন্টারনেটের পরিসর দেখে বেড়েছে অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটের। সারাবিশ্বে নেটফ্লিক্স জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনেকদিন হয়েছে। বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা দেখে আমাদের দেশেও বেশ কয়েকটি অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটের আবির্ভাব হয়েছে। আইফ্লিক্স, বায়োস্কোপ, বঙ্গ, থার্ডবেল তাদেরই বড় উদাহরণ। ধীরে ধীরে এসব সাইট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর শনির দশা ভর করতে শুরু করেছে সিনেমা হলের ঘাড়ে!
ওয়েব সিরিজ শব্দটি এখন শুধু বিদেশে না, বাংলাদেশেও জনপ্রিয় নাম। দর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নিয়মিত বিরতিতে তৈরি হচ্ছে নাটক, টেলিফিল্ম, চলচ্চিত্র। বেশ কিছু বাংলা সিনেমাকে দেখা গেছে ভার্চুয়াল স্ট্রিমিংয়ে। সিনেমা হলে না গিয়ে ঘরে বসে সিনেমা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করেননি দর্শকরাও। আগ্রহ বেড়েছে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানেরও।
বড় পর্দায় সিনেমা দেখতে হলে ঘটা করে আয়োজন ছাড়া হয়না। ব্যস্ত শহরে আয়োজন করে টিকেট কেটে সিনেমা দেখা অনেক সময় সম্ভব হয়না বলেও সিনেমা হল বিমুখ হচ্ছে। মানুষ হলের মর্জিতে না চলে নিজের মর্জিতে যখন খুশি সিনেমা দেখতে বেশি আগ্রহী। বিনোদনকে হাতের মুঠোয় পেতে এমন সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে যুগোপযোগী!
কিন্তু দিনশেষে একটা কথা থেকেই যায়। দুধের স্বাদ ঘোল দিয়ে পুরোপুরি মিটানো সম্ভব নয়। বড় পর্দায় হৈ হুল্লোড় করে সিনেমা দেখার স্বাদ মুঠোফোনে দেখা সম্ভব হবেনা। কনসার্টে সশরীরে শিল্পীদের গান শোনা আর রেকর্ড শোনা ভিন্ন জিনিস। ঠিক একইভাবে সিনেমা হলের স্বাদ মুঠোফোনে অ্যাপ দিয়ে কিংবা টিভিতে পাওয়া সম্ভব হবেনা। তবে মানুষের ব্যস্ততা যেভাবে বেড়ে চলেছে, সিনেমা হলের দশা শোচনীয় হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। মানুষ এখন সিনেমা হলের না, নিজের ইচ্ছামতো বিনোদন নিতে বেশি আগ্রহী!