আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণপ্রযুক্তিহোমপেজ স্লাইড ছবি
উইকিলিকস এবং একজন সুপার হিরোর গল্প

মাহমুদুর রহমান: এই সেদিন পত্রিকায় এলো একটা ছবি। সাদা চুল, সাদা দাড়িওয়ালা একটা লোককে ধরে জোর করে পুলিশ ভ্যানে তোলা হচ্ছে। সান্তা ক্লজের মতো দেখতে লোকটাকে হঠাৎ এমন কাণ্ড করছে কেন লন্ডন পুলিশ?
হ্যাঁ, প্রথম দেখায় তাকে চেনা যায় না। চেহারা অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে এতদিনের অজ্ঞাতবাসে। আর অজ্ঞাতবাস করতে হবেই বা না কেন, তিনি যে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন শক্তির অন্যতম বড় শত্রু। মানুষটি আর কেউ না, দুনিয়া কাঁপানো উইকিলিকসের সেই জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অ্যাসাঞ্জ, ২০১০ সালে পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন যেসব নথির মধ্যে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধসম্পর্কিত ৭৬ হাজার এবং ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত আরো ৪০ হাজার নথি ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও পেন্টাগনকে চরম বেকায়দায় ফেলে দেয়।
জুলিয়ান আসাঞ্জ হলেন উইকিলিকস এর প্রধান মুখপাত্র। তাকে উইকিলিকসের পরিচালক হলা চলে। উইকিলিস মূলত একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রচার মাধ্যম, যা বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য দলিল, অপ্রকাশিত সূত্র ও মাধ্যম থেকে প্রকাশ করে। একথা বলা বাহুল্য যে এসব দলিল কোন সাধারণ দলিল নয় বরং অনেক গোপন বিষয়ে জড়িত। ২০০৬ সালে উইকিলিকস-এর ওয়েবসাইট ‘দ্য সানশাইন প্রেস’ কর্তৃক তৈরী হয়ে এখন পর্যন্ত পরিচালিত হচ্ছে।
পরিচালনার এক বছরের মধ্যেই সাইটটি দাবী করে যে তাদের ডাটাবেজে ১.২ মিলিয়নেরও বেশি ডকুমেন্টস বা দলিল রক্ষিত আছে এবং প্রতিদিনই তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের দাবী যে মিথ্যা নয় তা প্রতিষ্ঠানটি অনেক আগেই প্রমাণ করেছে। মানুষের সামনে প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সহ আরও অনেক দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী মানুষদের কৃত অনেক গোপন কাজের ফিরিস্তি যা অনেক ক্ষেত্রে অপরাধের সামিল। এসবের মধ্যে রয়েছে নানা যুদ্ধ সহ অর্থনৈতিক পরিবর্তন এনে দেওয়া অনেক পরিকল্পনার কথা।
এসব তথ্য ও দলিল প্রকাশিত হতে শুরু করলে বিশ্বব্যাপী সাড়া পড়ে যায়। রাতারাতি জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ হয়ে যান কিছু মানুষের নায়ক। তাদের কাছে তিনি একালের রবিনহুড। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অন্যতম শত্রু হয়ে দাঁড়ান অ্যাসাঞ্জ। তাকে নাস্তানাবুদ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে সবাই।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে ২০১২ সালে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন। তারপর থেকে তিনি সেখানেই ছিলেন। সুইডেনের সে মামলা খারিজ হলেও ব্রিটিশ আইন ভাঙায় আবার গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে অ্যাসাঞ্জ বের হতে পারছিলেন না। এবার তাকে গ্রেপ্তারের পেছনে যুক্তি দেখানো হয়েছে আদালতে তার অনুপস্থিতি।
উইকিলিকসের দাবি, ভিন্ন মতাবলম্বী চীনা, বিশেষ করে সাংবাদিক, গণিতবিদ এবং প্রযুক্তিবিদ হিসেবে যারা যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তারাই মূলত উইকিলিকস এর সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন! যাদের প্রধান আসাঞ্জ।
অ্যাস্যাঞ্জ ১৯৭১ সালের ৩ জুলাই কুইনসল্যান্ডে জন্ম গ্রহণ করেন। তার জন্মদাতা পিতার নাম হচ্ছে জন সিপটন ও মাতার নাম হচ্ছে ক্রিষ্টিন। জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জের দত্তক পিতার নাম ব্রেট অ্যাস্যাঞ্জ।