ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
এরিয়া-৫১ নিয়ে যত রহস্য

মাহমুদুর রহমান: হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা বিষয় ভাইরাল হলো। আমেরিকার কোন এক অতি সুরক্ষিত যায়গায় মানুষ ‘রেইড’ করতে চায়। ঘোষণা দেওয়া হলো যেন কয়েক লক্ষ মানুষ একত্রে মার্চ করে, তাহলে ওই এলাকায় মানুষকে ঢুকতে দিতে বাধ্য হবে। কোন সে জায়গা? কেন সেখানে জনমানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে এবং লাস ভেগাস থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম রেকেল গ্রামের কাছে অবস্থিত এই জায়গাটির নামই ‘এরিয়া ৫১’। এটি আমেরিকার গোপনীয় একটি সামরিক ঘাঁটি। জনমানুষের জন্য নিষিদ্ধ এই এলাকা।
সাধারণত সামরিক ঘাঁটি সব সময়েই নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকে। কিন্তু এরিয়া ৫১ নিয়ে মানুষের বিশেষ কৌতূহলের কারন রয়েছে। প্রথমত এই ঘাঁটি রীতিমত বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। গ্রুম হ্রদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত এ ঘাঁটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল পরীক্ষামূলক উড়োজাহাজ তৈরি, অস্ত্রশস্ত্রের সক্ষমতা পরীক্ষা করা এবং আরও উন্নত করার ব্যবস্থা করা।
২৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ ঘাঁটির রয়েছে বিভিন্ন নাম। ড্রিমল্যান্ড, প্যারাডাইস র্যাঞ্চ, হোম বেজ এবং ওয়াটারটাউন নামেও এ অঞ্চল পরিচিত। শুরু থেকেই নানা কারণে এরিয়া ৫১ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কৌতূহল থেকে তৈরি হয়েছে গুজব। এবং এমনটা হওয়ার কারন এ অঞ্চলকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। এমনকি ১৯৮৯ সালে এক ব্যক্তি দাবি করেন তিনি এরিয়া ৫১ এ কাজ করেছেন কিন্তু তাকে যে বাসে করে নেওয়া হত তাঁর জানলা কালো কাপড়ে আবৃত থাকতো। যেন কর্মীরা এর ভেতরের পথঘাট চিনতে না পারে।
এরিয়া ৫১ সম্পর্কে অন্যতম প্রচলিত গুজব হলো এখান থেকে ইউএফও তৈরি করা হয়। তা প্রেরণ করা হয়। এমনকি পৃথিবীতে কোন ইউএফও এলে তা শনাক্ত করা হয়। গুজব এতো দূর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যে মানুষ বলতে শুরু করে এলিয়েনদের ধরে এনে এখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১৯৯৭ সালে ভিক্টর নাম এক ‘এরিয়া ৫১’ কর্মী এমন দৃশ্য দেখেছিলেন বলে দাবি করেন। এছাড়াও এলিয়েনদের ময়নাতদন্ত করা হয় এমন কথাও ছড়ায়।
এসবের বাইরে আরও অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রয়েছে। যেমন অনেকে বলেন চাঁদে অবতরণের ঘটনা আমেরিকার মনগড়া। আসলে এরিয়া ৫১ এর অভ্যন্তরে এ নাটক সজ্জিত হয়েছিল কেননা চাঁদে অবতরণ মানুষের পক্ষে সম্ভব না। এর বাইরে বলা হয়ে থাকে এই অঞ্চলে মাটির তলায় ৪০ তলা বাঙ্কার রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই অঞ্চলে মানুষ-এলিয়েন সংকর তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। এমনকি গত ছয় দশক ধরে কিছু বিজ্ঞানী চেষ্টা করছে উন্নত মানুষ এবং এলিয়েন সৃষ্টির। আরও নানা গুজব রয়েছে এরিয়া ৫১ নিয়ে।
মূলত এরিয়া ৫১ একটি সামরিক ঘাঁটি। হতে পারে এখানে অনেক ধরনের গোপন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। তৈরি হয় নতুন ধরনের অস্ত্র। এলিয়েন না হোক, জীববিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা অসম্ভব নয়। প্রতিটি দেশের, বিশেষত ক্ষমতাবান দেশগুলো এমন অনেক প্রোজেক্ট হাতে নিয়ে থাকে যা অত্যন্ত গোপনীয়। এরিয়া ৫১ তেও তাই হয়।
মূলত এ বিমান ঘাঁটি হতে সাতটি বিমান উড্ডায়ন পথ রয়েছে। এর মধ্যে একটি বন্ধ বলে মনে হয়। বিমান অবস্থানের জায়গা ব্যতিরেকে বন্ধ উড্ডায়ন পথটি হল 14R/32L, যার দৈর্ঘ্য ৭,১০০ মিটার (২৩,৩০০ ফুট)। অন্য উড্ডায়ন পথ দু’টি খুব কালো রঙের। 14R/32L নামের উড্ডায়ন পথটির দৈর্ঘ্য ৩,৬৫০ মিটার (১২,০০০ ফুট) এবং 12/30 উড্ডায়ন পথটির দৈর্ঘ্য ১,৬৫০ মিটার (৫,৪০০ ফুট)। অন্য উড্ডায়ন পথ চারটি লবণ হ্রদের সামনে অবস্থিত। এই চারটি উড্ডায়ন পথ হল 09R/27L এবং 09R/27L, যার উভয়েই দৈর্ঘ্য ৩,৫০০ মিটার (১১,৪৫০ ফুট) এবং 03L/21R আর 03R/21L, যার উভয়েই দৈর্ঘ্য ৩,০৫০ মিটার (১০,০০০ ফুট)। ভেতরে হেলিকপ্টার নামার জন্য একটি জায়গাও রয়েছে।
এরিয়া ৫১ এ আসলে কি হয় তা জানা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় বলেই এতো গুজব, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তৈরি হয়েছে একে নিয়ে। গুজব এবং কৌতূহলের ভিত্তিতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এরিয়া ৫১ তে রেইড করার আহ্বান জানানো হয়। মজার ব্যপার এই বিষয়টিকে অনুকরণ করে বিভিন্ন দেশে তাদের গোপনীয় অঞ্চল, সামরিক দপ্তরে রেইড করার আহ্বান জানানো হয়। পরবর্তীতে ব্যপারটি নিয়ে মানুষ মজা করতে শুরু করে। এমনকি বাংলাদেশে ফেসবুকে বিভিন্ন দামি রেস্টুরেন্টে রেইড করার ইভেন্ট খোলা হয়।