চলতি হাওয়াজাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
করোনা- কালের ডায়েরি

ঘড়ির কাঁটা শুক্রবারে ঢুকতে ঢুকতেই বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যু ৩ লাখ ছাড়ায় গেল। এত এত মানুষের মৃত্যুর মিছিল। কত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বিদায় নিল, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, শিক্ষক, নার্স, গবেষক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বুদ্ধিজীবী, রাজকন্যা, মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, সেনা কর্মকর্তা, বড় তারকা, খেলোয়াড় কে নাই এই তালিকায়। গত জানুয়ারির শেষের দিকে চীনে একশ মানুষ মারা গেল। চীন ছাড়িয়ে ইতালিতে মার্চের শুরুতে একশ হলো। এসব নিউজ করতে করতে পাঁচমাস পার করে দিলাম।
ইরানে স্পেনে ফ্রান্সে আমেরিকায় যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু। হাজার পেরুলেই আলাদা আলাদা নিউজ, পাঁচ দশ হাজারে আলাদা নিউজ৷ প্রতিদিন নতুন নতুন ব্রেকিং। বিশ্বজুড়ে প্রতিদিনের আপডেট৷ প্রতিদিন নতুন নতুন কফিন আর কবরস্থানের ছবি খুঁজে বের করা। শুরুতে এক দুই তিন হাজারের হিসাব করার সময় কত উত্তেজনা কাজ করত, কখনো ছবি দেখে চোখ ভিজে উঠতো। কখন যে পঞ্চাশ হাজার, এক লাখ, দেড় লাখ, দুই লাখ, আড়াই লাখ, তিন লাখ ছাড়িয়ে গেল। পাঁচ মাসের মধ্যে এমন কোনো দেশ নাই যেখানে মহামারি ছড়ায় পড়ে নাই৷ কত কত প্রস্তুতি, কত রাজনীতি, কত সার্ভেইল্যান্স, কত খবরদারি, কত পরিকল্পনাহীনতা, কত গবেষণা, কত সতর্কতা সেইসঙ্গে কী ভয়াবহ অসহায়ত্ব পৃথিবীরবাসীর।
এর মধ্যে অনেক দেশ করোনাকে জয় করে স্বাভাবিক জীবনের দিকে ফিরছে আর আমরা এখনো ঠিকমতো টেস্টই করাতে সক্ষম হচ্ছি না। টেস্টের জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে, হাসপাতালের সামনে হাজারো মানুষের লাইন। টেস্টের রেজাল্ট পাইতে সপ্তাহ পার। তাইলে চব্বিশ ঘন্টার যে আপডেট সেই মৃত আর আক্রান্তের হিসাব কয়দিন আগের সেটাও জানি না। এখন আর পিপিই, এন৯৫ মাস্ক, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন, আইসিইউ, টেস্ট কিট, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, চাল চুরি, দুর্নীতি নিয়ে আর কোনো আওয়াজ নেই৷ চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে মানুষ মারা যাচ্ছে৷
দেশের বেসরকারি মেডিকেল সেক্টর বলতে গেলে প্রায় পুরাটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। ডিজিটাল আইনের ভয় দেখিয়ে সিন্দাবাদে ভূত হয়ে ঘাড়ে চেপে বসেছে রাষ্ট্র। এত কিছু করেও রাষ্ট্রের প্রধানতম বুদ্ধিজীবীকে বাঁচাতে পারল না সরকার। তিনিও করোনায় আক্রান্ত হলেন। একইদিন খবর আসল বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পে করোনা ঢুকে পড়েছে। আজকেও তিন জন আক্রান্ত সেখানে৷ লাখ লাখ মানুষ এখন মৃত্যু ঝুঁকিতে৷ দেশের মানুষ ঘরের বাইরে আসতে উন্মুখ হয়ে আছে। ঈদের বাজারের জন্যও কত ব্যস্ততা অনেকের। মানুষ না খেয়ে মরছে। খেটে খাওয়া মানুষ ভিক্ষা করতে বাসাবাড়ির সামনে ভিড় করছে প্রতিমুহূর্তে।
গার্মেন্টস কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে দলে দলে। প্রণোদনার লোভ দেখিয়ে কয়েক দফায় ঢাকায় আনা নেয়া করিয়ে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে তাদের। মৃতদের কবরস্থানে দাফন করতে দেয়া হচ্ছে না অনেক জায়গা, আত্মীয় স্বজন লাশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, কত কিছু ঘটে যাচ্ছে। এত সীমিত আকারে টেস্ট চালিয়েও আক্রান্তের সংখ্যা বিশ হাজার পার হয়ে গেল। বিশ্বের আক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় ত্রিশ নম্বরে চলে আসছি আমরা। মৃত্যুর সংখ্যা আর দুই হলেই তিনশ ছাড়িয়ে যাব৷ সেটা এখন কয় হাজারে গিয়ে থামে যেটাই দেখার অপেক্ষা। এর মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রায় হাজার মানুষ মারা গেল। হিসাবের বাইরেই থাকল তারা। সরকারি হিসাব আর পুরো দেশের কবরস্থানে করোনা রোগীদের দাফন সংখ্যাতেও বিশাল পার্থক্য। এসব নিয়া এখন আওয়াজ করার সুযোগ নেই। পরিচিত মানুষজন আক্রান্ত হওয়া শুরু করেছে, এমনকি মারাও গেছে কেউ কেউ। শেষপর্যন্ত নিজেই টিকে থাকতে পারব তো সর্বশেষ দেখার জন্য? কোনো নিউজে ঠাঁই মিলবে কি আমার মৃত্যু?