খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
কালো মানিক কিংবা একজন পেলে

মাহমুদুর রহমান: ১৯৪০ সালের ২১ অক্টোবর, দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের কোরাকোয়েসে জন্ম হয় একটি ছেলের। পরবর্তীতে সারা পৃথিবীতে ‘কালো মানিক’ এবং পেলে নামে সমধিক পরিচিত হওয়া মানুষটির পুরো নাম এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু। বর্তমান সময়ে কিংবা ম্যারাডোনার উত্থান এবং সফলতার পর ফুটবল দুনিয়ায় সর্বাধিক পরিচিত বিতর্ক ছিল, “কে সেরা-পেলে, না ম্যারাডোনা?” এ লেখায় প্রসঙ্গটি আরও পরে আসা উচিত ছিল, কিন্তু আগেই আনার কারণ রয়েছে এবং কারণটা বেশ আগ্রহদ্দীপক। কেননা, আর্জেন্টিনার ফুটবল ঈশ্বরের সাথে যে মানুষটিকে নিয়ে এতো বিতর্ক, সেই পেলের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় খোদ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই মারাকানায়, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। ২-১ ব্যবধানে হারা সেই ম্যাচে ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে ব্রাজিলের পক্ষে প্রথম গোল করে পেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার স্থান দখল করেন।
মজার ব্যপার, দিয়েগো ম্যারাডোনার জন্ম হয় এর আরও তিন বছর পর। পেলে ধীরে ধীরে নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করেন। পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করেন ফুটবলপ্রেমীদের। অভিষেকের পরের বছরই তার বিশ্বকাপ অভিষেকও সম্পন্ন হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে পেলে তাঁর প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেন। ১৯৫৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের সেই ম্যাচটা ছিল প্রতিযোগিতার তৃতীয় খেলা। পেলে ছিলেন সে বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ (এবং তখন পর্যন্ত যেকোন বিশ্বকাপ খেলায় সর্বকনিষ্ঠ) খেলোয়াড়। পেলের সতীর্থ ছিলেন আরেক কিংবদন্তী গ্যারিঞ্চা, এবং যিতো, ভাভা। ওয়েলসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা গোলটি ছিল প্রতিযোগিতায় পেলের প্রথম এবং সেই ম্যাচের একমাত্র গোল। বলে রাখা ভালো যে সেই গোলের সাহায্যে ব্রাজিল সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। ম্যাচের সময় পেলের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৩৯ দিন, বিশ্বকাপের গোলদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে কম।
১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ, পেলের জন্য হতাশার ছিল। আট বছর পেরিয়ে যাওয়া এই বিশ্ব আসরে কোচ তাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেননি। গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় ইনজুরি আক্রান্ত পেলেকে মাঠে নামানোর পাশাপাশি পুরো ফরমেশন বদলে দেওয়া সেই ম্যাচ, ব্রাজিলের ভাগ্যে কিছুই এনে দিতে পারেনি। কিন্তু যোগ্যতার বলে সে ব্যর্থতা পেলে কাটিয়ে উঠেছিলেন পরের বিশ্ব আসরে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে পেলে খেলেন তার চতুর্থ বিশ্ব আসর। আর শিরোপা জিতে নেয় পেলের ব্রাজিল। ইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে গুঁড়িয়ে দেয় ‘ক্যাপ্টেন’ কার্লোস আলবার্তো। দল তিনবার শিরোপা জেতায় জুলে রিমে ট্রফিটা একেবারেই দিয়ে দেওয়া হয় ব্রাজিলকে। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন পেলে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের পর নিজেকে সর্বকালের সেরা ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করেন পেলে।
কিন্তু ম্যারাডোনা কিংবা ব্যাজ্জিও, জিদান কিংবা রোনালদোর মতো পেলেকে নিয়ে অতো মাতামাতি দেখা যায় না কেন? কারণ জানতে হলে পেলের সময়টা বুঝতে হবে। চল্লিশের দশকে জন্ম নেওয়া ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির মানুষটা আধুনিক প্রযুক্তির পূর্বের মানুষ। রঙিন টেলিভিশন, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তিনি পৌঁছতে পারেননি পৃথিবীর অন্য প্রান্তে। কিন্তু তাই বলে গুণের কথা ঢাকাও থাকে না। আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই পেলে পৌঁছে গেছিলেন দেশ কালের সীমানা ছাড়িয়ে। তার তা সম্ভব হয়েছিল বলেই কুড়ি বছর পরে জন্ম নেওয়া ম্যারাডোনার সঙ্গে তার তুলনা হয়। কালো মানিক পেলের ব্যক্তি জীবন নিয়ে তেমন কোন বিতর্ক নেই। এমনিতে অন্যান্য খেলোয়াড়দের তুলনায় তিনি শান্ত, নির্ঝঞ্ঝাট। তার ছেলে এডসন চলবি দো নাসিমেন্টো ‘এডিনহো’ একজন ফুটবলার ছিলেন। তিনি মূলত গোলরক্ষকের ভূমিকায় খেলতেন। ২০০৫ সালে মাদকদ্রব্য পাচার সংক্রান্ত অভিযোগে জড়িয়ে তিনি গ্রেফতার হন। এছাড়া কালো পেলেকে নিয়ে বিতর্ক নেই বললেই চলে। ৭৮ বছর বয়সী মানুষটি এখনও কিংবদন্তী হয়ে বেঁচে আছেন।