বই Talkসাহিত্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
গডফাদার: ফিকশনের চেয়েও বেশি কিছু

ওয়ারিদ আহমেদ তরিন: সাহায্যের জন্য সবাই ডন ভিটো কর্লিয়নির কাছে আসে, কাউকে তিনি ফিরিয়ে দেন না, কাউকে তিনি ভুয়া প্রতিশ্রুতি দেন না, কাপুরুষের মতো এ-কথাও বলেন না যে তার চাইতেও প্রবল কোন শক্তির কারণে তার হাত-পা বাঁধা। সাহায্য পাইতে হলে তার সাথে সম্পর্ক থাকারও দরকার নাই, তার সেই ঋণ শোধ করার সামর্থ না থাকলেও কিছু যায় আসেনা। সে যত দূর্বল আর দরিদ্রই হোকনা কেন, ডন ভিটো কর্লিয়নি বুক পেতে তার সমস্ত দুশ্চিন্তা নিজে গ্রহণ করে। আর তার সেই সেই দুঃখের কারণ দূর করার জন্য কোন বাঁধাকেই তিনি মানেন না।
বহির্জগতের ঠুলি তার চোখে বাঁধা না থাকাতে তিনি স্পষ্ট দেখলেন একটা বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন, তার অর্থটা কেমন দাঁড়াবে তাও তিনি আঁচ করে নিলেন। নিজের জগৎটুকু আগলে রাখতে হবে, আশেপাশের মানুষ গুলোকে। বাইরের দুনিয়ায় যাই হোক এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য ডন ভিটো কর্লিয়নির। মারিও পূজোর বিখ্যাত উপন্যাস দ্য গডফাদার এর ডন কর্লিয়নির কাছে যারা বশ্যতা স্বীকার করেছিলো, তার জগতে তারা সকলে নিরাপদে ছিল, ভালো ছিল। গডফাদার সবার খেয়াল রাখতো। সবাইকে ডন ভিটো কর্লিয়নি সাহায্য করতেন।
শুধু তাইনা, খুশি হয়ে দুটো উৎসাহের কথাও বলতেন। বড় ছেলেকে পাঠ দেবার অভিপ্রায়ে, কি করে সাফল্য লাভ করতে হয় এই বিষয়ে ডন ভিটো কর্লিয়নি প্রায়ই বক্তব্য দিতেন। ডন সবসময়ই যা বলতেন, মানুষের একটাই নিয়তি থাকে আর সেটা ঘটনাক্রমে তৈরি হয়….. অন্যদিকে হুট করে রেগে উঠার জন্য সনিকে প্রায়ই তিরস্কার করতেন। গডফাদার মনে করতেন, কাউকে শাসানো হলো নিজের দূর্বলতা প্রকাশের মূঢ়তম উপায়। না ভেবেচিন্তে রাগ দেখানো যেকোনো মানুষের সবচাইতে বিপজ্জনক অভ্যাস।
ডনকে কেউ কখনো কাউকে খোলাখুলি ভয় দেখাতে শোনেনি, রেগে সংযম হারাতে তাকে কেউ কখনো দেখেনি। তার পক্ষে সে রকম ব্যবহার চিন্তার বাইরে ছিল। এলাকার লোকজন রাজ্যের সংসদে, কিংবা পৌর সভায়, কিংবা কংগ্রেসে ওদের প্রতিনিধিত্ব করতে কাকে ভোট দিবে এইসব পরামর্শের জন্য ওদের গডফাদার ডন কর্লিয়নির কাছে ছুটে আসতো। এইভাবে তিনি ক্রমে রাজনৈতিক গডফাদার হয়ে উঠলেন। তার কাছে বাস্তববুদ্ধি সম্পন্ন দলীয় নেতারা পরামর্শ করতে আসতো। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনীতিবিদের বুদ্ধি দিয়ে নানাভাবে তিনি এই ক্ষমতাটাকে আরো জোরদার করে তুললেন।
গরীব ইতালীয় পরিবারের গুণী ছেলেদের কলেজে পড়ার খরচ চালাতেন। এই ছেলেরাই পড়ে উকিল, সহকারী আঞ্চলিক এটর্নির, এমনকি আদালতের বিচারকের পদ পেতো। একজন জাতীয় নেতার মতো তিনি দূরদৃষ্টি দিয়ে নিজের সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতেন। শুধুমাত্র এমন চিন্তাভাবনা আর কর্ম ও গুণের জন্যই মারিও পূজোর, দ্য গডফাদার ফিকশনের চেয়েও বেশি কিছু।