ব্যবসা ও বাণিজ্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
গল্পটা নতুন দিনের!

বাশার আল আসাদ: নাজমা খাতুন প্যারামেডিক্যাল কোর্স শেষে ২০০০ সালে ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানির চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিরত অবস্থায়ই ২০০৫ সালে একটি সমিতি থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছোট্ট পরিসরে স্থাপন করেন জুতা তৈরির কারখানা। অফিস শেষে নিজের কারখানায় কাজ করতেন। তাঁর সেই শ্রম বৃথা যায়নি। নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে নাজমা খাতুন আজ কোটিপতি। আসুন জেনে আসি নাজমা খাতুনের নতুন দিনের গল্প।
দিনবদলের শুরু যেভাবে
ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন নাজমা খাতুন। অল্প বেতনের চাকরি। স্বামীসহ দুজনে মিলে বেতন যা পেতেন, তা দিয়ে ঢাকায় বাসা ভাড়া ও মেয়ের খরচ জুগিয়ে কোনোমতে সংসার চলত। ভাবতেন, এভাবে আর কত দিন! ভাগ্যবদলে অন্য কিছু ভাবতে হবে। তার স্বামী কাজ করত ঢাকার একটি জুতার ফ্যাক্টরিতে। ভাবলেন, ছোট পরিসরে একটা জুতার ফ্যাক্টরি দিলে কেমন হয়। তার স্বামীর জুতার ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সুবাদে প্রায়ই এ নিয়ে কথা হতো। অবশেষে সাহস করে কাজে হাত দিলেন। একটি সমিতি থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে ২০০৫ সালে নিজ উদ্যোগে একটি রুম ভাড়া নিয়ে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন ‘কুসুম কলি শু ফ্যাক্টরি’ নামে একটি জুতা তৈরির কারখানা। মাত্র দুজন শ্রমিক নিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়।
২০০৭ সালে নাজমা খাতুন প্যারামেডিক্যালের চাকরি ছেড়ে কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে নিজের পুরো সময় দিতে থাকেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজ হাতে নানা ধরনের কাজ করেন। কাজের টুকটাক অর্ডার আসতে থাকে। এর মধ্যে বে-অ্যাম্পেরিয়াম থেকে বেশ বড় একটি কাজের অর্ডার পান। কর্মীসংখ্যা বাড়িয়ে অর্ডারটা ঠিক সময়ের মধ্যেই শেষ করেন। তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে অর্ডার বাড়াতে থাকে। ২০১০ সালে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ পায় নাজমা। তা দিয়ে তিনি কর্মীসংখ্যা ও স্পেস বাড়ান। তার কাজের সাফল্য দেখে ইসলামী ব্যাংক এক বছরের মধ্যে ঋণের পরিধি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ায়। ঋণ পেয়ে ক্রমেই বাড়তে থাকে নাজমার কাজের পরিধিও।
বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ালেন যেভাবে
২০১২ সালের ২৫ জুন রাতে হঠাৎ আগুন লেগে কারখানার সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সঙ্গে কর্মহীন হয়ে পড়ে কারখানায় কর্মরত সব শ্রমিক। তখন নাজমা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বেতন এবং আবার চাকরির আশ্বাস দিয়ে আসে। তার আত্মবিশ্বাস ছিল,সে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তখন বাটাসহ অন্য বেশ কিছু নামকরা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এক বছরের মধ্যে তার চাচা শ্বশুরের একটি জায়গায় আবার কারখানা আগের মতো করে গড়ে তুলে নাজমা। এর পরপরই বাটা থেকে প্রচুর কাজের অর্ডার পায়। সঙ্গে অন্যদের অর্ডার তো আছেই। এভাবেই দিন-রাত চলতে থাকল কাজ। তারপরের গল্প শুধুই সফলতার।
বর্তমানে গাজীপুরে নাজমার কারখানায় কাজ করে ২০০-র বেশি শ্রমিক। যাদের বেশির ভাগই নারী। এক্সপোর্ট প্রডাক্ট তৈরির জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে ১০ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর স্পেস। ইসলামী ব্যাংক ব্যবসা আরো সম্প্রসারণের জন্য ঋণ পরিধি বাড়িয়েছে আড়াই কোটি টাকা। বর্তমানে নাজমা কাজ করছে বাটা, বে, জিলসসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। কর্মীদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে খরচ হয় ১০ লাখ টাকার মতো। রয়েছে নিজের কারখানা ভবন। কেনা হয়েছে আরো একটি কারখানার জমি।
দেশের বাইরেও সফলতা
২০১৩ সালের নভেম্বরে নাজমা আক্তার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে গিয়ে সেখানকার বিজনেস প্ল্যান, সম্ভাবনা, সুবিধা ইত্যাদি যাচাই করে আসে। পরে ২০১৪ সালের শুরুর দিকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ট্রেডিং বিজনেস শুরু করে। নিজের কারখানার তৈরি প্রডাক্ট হোলসেল বিক্রির জন্য নেওয়া হয়েছে শোরুম ও স্টোর স্পেস। সেখানে নেওয়া শোরুম চালান এ দেশের র্কমচারীরা।