বাক্য
গুলবদন বেগম: প্রথম মহিলা ইতিহাসবিদ

জন্মের পর থেকে ১৫৫৭ সাল পর্যন্ত কাবুলে ছিলেন গুলবদন। পরে সম্রাট আকবর গুলবদনকে আগ্রায় নিয়ে আসলেন। তার গল্পবলার খ্যাতিতে মুগ্ধ ছিলেন সম্রাট। অনুরোধ করলেন তার পিতা হুমায়ূনের জীবনী লিখবার জন্য। আবুল ফজলের ‘আকবরনামা’ ও পিতা বাবরের লেখা ‘বাবরনামা’র অনুপ্রেরণায় গুলবদন বেগম লিখে ফেললেন ঐতিহাসিক ‘হুমায়ূননামা’। তবে গুলবদন বেগম ষাট বছর বয়সে তার ভাই হুমায়ূনের শাসনকাল নিয়ে স্মৃতিকথা লিখতে গিয়ে কিছুটা ছোটখাটো ভুল অনেক তথ্য দিয়েছেন, যা পরবর্তীতে ইতিহাসবিদরা সংশোধন করে দেন। ষাট বছর বয়সে এতসব কিছু মনে করাও কিন্তু চাট্টিখানি কথা না।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে, ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে লিপ্ত হলেও মুঘলসম্রাটরা অল্পকিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া সর্বক্ষেত্রে তাদের কন্যা ও বোনদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে গেছেন। জানা যায় যে, গুলবদন আকবরের দ্বীন-ই-এলাহি’র সমর্থক ছিলেন না। আবার গুলবদন অনেকটা স্বেচ্ছায় সম্রাট আকবরের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ১৫৭৬ সালে হজব্রত পালন করতে মক্কা সফর করেন।
একজন সংবেদনশীল নারী হিসেবে ইতিহাস লিখতে গিয়ে গুলবদন বেগম সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছিলেন হুমায়ূনের আমলে সংঘটিত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও নিষ্ঠুর প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের অনেক খুঁটিনাটি। মূলত বলতে গেলে, হুমায়ূনের ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি মুঘল সাম্রাজের সামাজিক,সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি অবস্থা লিখে গেছেন তিনি। (গুলবদনের লেখায় রাজনৈতিক ঘটনার বর্ণনা থাকলেও তিনি বর্ণনায় দুর্বল ও পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন হুমায়ূনের পক্ষে।)
মুঘল ইতিহাসে বাবর কন্যা শাহজাদী গুলবদন বেগমের অবদান অসামান্য। ১৬০৩ সালে গুলবদন মৃত্যুবরণ করেন। সম্রাট আকবর তাকে সম্বোধন করতেন ‘প্রিন্সেস রোজবডি’ নামে।