ছুটি
ঘুরে আসুন ঐতিহ্যবাহী বিউটিং বোর্ডিং

মৃন্ময়ী মোহনা: কেমন অনুভূতি হবে আপনার; যদি এমন এক জায়গায় হঠাৎ করে খেতে যান, যেখানে খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডাবাজি করতেন বাংলার প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী আর বুদ্ধিজীবীরা? না, না; একদম বানিয়ে বলছিনা। পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের ১ নম্বর শ্রীশদাস লেনের বিউটি বোর্ডিং এমনই এক জায়গা। যেখানে নিয়ম করে আড্ডাবাজি আর খাওয়া দাওয়া চলতো দেশের নামকরা ব্যক্তিবর্গের।

শামসুর রাহমান তাঁর এক কবিতায়ও বলেছেন বিউটি বোর্ডিং-এর কথা। সৈয়দ শামসুল হক, আসাদ চৌধুরী, শহীদ কাদরী, আবদুল গাফফার চৌধুরী, হাসান হাফিজুর রহমান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আল মাহমুদ, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, সমর দাশ, সত্য সাহা, গোলাম মুস্তফা, খান আতা, জহির রায়হান, বেলাল চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, সন্তোষ গুপ্ত, ফজল শাহাবুদ্দিন, কবি ইমরুল চৌধুরী, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, শফিক রেহমান, ফয়েজ আহমদ, আহমদ ছফা, ফজলে লোহানী, দেবদাস চক্রবর্তী, কাইয়ুম চৌধুরী, জুয়েল আইচ-এমন হাজারো জ্ঞানী গুণীর আড্ডার প্রাণকেন্দ্র ছিলো এই রেস্তোরাঁ।

এখন সেসব অতীত হলেও বর্তমানের চাকচিক্যময় রেস্টুরেন্টগুলোর দাপটে এর গ্রহণযোগ্যতা এতোটুকু কমেনি।প্রতিদিন হাজারো লোকের ভীড় এমনটাই প্রমাণ করে। দেশভাগের আগে এটি ছিলো পত্রিকার অফিস। দেশভাগের সময় যা কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। পঞ্চাশের দশকে বাড়িটি ভাড়া নেন প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা এবং নলিনী মোহন সাহা নামের দুইভাই। তাঁরাই মূলত গড়ে তোলেন বিউটি বোর্ডিং। উল্লেখ্য, বিউটি ছিলো প্রহ্লাদ চন্দ্রের বড় মেয়ের নাম। যুদ্ধের পর প্রহ্লাদ চন্দ্রের স্ত্রী-পুত্র হাল ধরেন এই বিউটি বোর্ডিং এর। বিউটি বোর্ডিং এ খাওয়ার সাথে সাথে থাকার ব্যবস্থাও আছে বিউটি বোর্ডিং এ।
এখানে রয়েছে ২৫টি কক্ষ।ভাড়া ২০০-৩০০/- এর মধ্যে। এই জায়গার অন্যতম আকর্ষণ ইলিশ মাছের তরকারি। সকালের নাস্তা থেকে রাতের খাবার- সবই পাওয়া যায় এখানে। যার স্বাদও মুখে লেগে থাকার মতো। পুরোনো জমিদার বাড়ি, বাঙালি ধাঁচে পরিবেশন, মজাদার রান্না- সব মিলিয়ে এ এক দুর্দান্ত প্যাকেজ। সপ্তাহের সাতদিনই খোলা থাকে বিউটি বোর্ডিং। যেকোনদিন আপনিও ঘুরে আসতে পারেন চমৎকার এই রেস্তোরাঁয়।