জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশ এবং এবারের ‘ফণী’

মাহমুদুর রহমান: বাংলাদেশ বরাবরই দুর্যোগ প্রবণ দেশ। নানা রকম দুর্যোগে বিপর্যস্ত হয় প্রতি বছর। বন্যা, অতিবৃষ্টির পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রলয়ঙ্করী রূপ নিয়ে আসে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। বিষুবীয় অঞ্চলে অবস্থানের কারণে গ্রীষ্মকালে এখানে প্রখর সূর্যতাপে, ভূমি ভাগ উত্তপ্ত হয় এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের অবস্থিতির কারণে নিম্নচাপ দেখা দেয়। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস অবধারিত। বাংলাদেশে স্মরণকালের মধ্যে ২০০৭ সালে ‘সিডর’ এবং পরবর্তীতে ‘আইলা’ অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল।
ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে প্রাণহানি, সম্পদহানি হলেও মানুষের কাছে একটি কারণে এই দুর্যোগটি আগ্রহ জাগায়। তা হলো এর নাম। সিডর, আইলা ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের নানা নাম রয়েছে। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি ‘নার্গিস’, ‘অগ্নি’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব নাম কোথা থেকে আসে বা কেন এমন নামকরণ? এর মাঝে কিছু নিয়ম আছে। এলাকা ভেদে নাম ভিন্ন হয়। যেমন, গত কয়েকশ’ বছর ধরে আটলান্টিক মহাসাগর এলাকায় উৎপন্ন হওয়া ঝড়গুলোর নাম দিয়ে আসছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মানুষেরা। শুরুতে নিজেদের অঞ্চলের ঝড়গুলোকে বিভিন্ন নামে দিতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি না বদলালেও ১৯৪৫ সাল থেকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে শুরু হয় ঝড়ের আনুষ্ঠানিক নামকরণ। বিভিন্ন দেশের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল নামকরণ চূড়ান্ত করে থাকে।
কিন্তু নাম দেওয়ার প্রয়োজন কি? প্রথমত পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা এবং সাধারণ মানুষের কাছে পূর্বাভাস ও সতর্কতা বোধগম্য করতেই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়ে থাকে। এছাড়া পরবর্তী সময়ে ক্ষয়ক্ষতি এবং অন্যান্য রেকর্ড রাখার জন্য অবশ্যই একটি নাম প্রয়োজন। এবং সে নাম আসে ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি বা আঘাত হানার স্থান হতেই। সেখানকার মানুষই নামকরণ করে। তবে বৈশ্বিক ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশের পাঠানো নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নামকরণ করা হয়। একেক অঞ্চলের ঝড়ের নাম চূড়ান্ত করার দায়িত্বটি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে ন্যস্ত থাকে। যেমন-উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঝড়গুলোর নামকরণের দায়িত্ব ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের।
এক্ষেত্রে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আট দেশ বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড থেকে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রস্তাব করা হয়। নামের প্রস্তাব আসার পর ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরে বৈঠকের মাধ্যমে প্রস্তাবিত নামের মধ্য থেকে তৈরি হয় তালিকা। আর সে তালিকা অনুযায়ীই পর্যায়ক্রমে নামকরণ হয়। এবং এভাবেই একেকটি ঝড়ের নাম দেওয়া হয়। সিডর, আইলা থেকে বর্তমান ‘ফণী’ এভাবেই এসেছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতের উড়িষ্যার উপর দিয়ে বাংলাদেশ হয়ে যাওয়া ঝড়ের এ নামটি দিয়েছে বাংলাদেশ। ‘ফণী’ অর্থ সাপ বা ফণা তুলতে পারে এমন প্রাণী। পরবর্তী ঝড়ের নাম হবে ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী ভায়ু বা ‘বায়ু’। তারপরে আরো ছয়টি ঝড়ের জন্য এখনও নাম তালিকায় রয়েছে। সেগুলো হলো হিক্কা, কায়ার, মাহা, বুলবুল, পাউয়ান এবং আম্ফান।