বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
চৌরঙ্গী থেকে শাহজাহান রিজেন্সি

মাহমুদুর রহমান: পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শংকর। নিজের ছদ্মনামটা এভাবেই লেখেন তিনি। অবশ্য পুরোপুরি ছদ্মনাম নয়। তবে যাই হোক, অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে নিজের লেখায় মানুষকে হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন তিনি। বহু অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ লেখক তার লেখায় এনেছেন সেসব। এমনই এক চমৎকার বই, ‘চৌরঙ্গী’। কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে ‘শাহজাহান হোটেল’ নামে একটি হোটেলে কাজ করার সুবাদে নিজের অভিজ্ঞতার বয়ান ছিল এই বই। শংকরের সে বই থেকে ১৯৬৮ সালে একটি সিনেমা তৈরি হয়। পিনাকীভূষণ মুখার্জি পরিচালিত সিনেমায় অভিনয় করেন উৎপল দত্ত, উত্তম কুমার, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া দেবী, বিশ্বজিৎ, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। শংকরের গল্পকে খুব সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছিলেন পরিচালক। সেই সঙ্গে অভিনেতা অভিনেত্রীদের অসাধারণ শিল্পনৈপুণ্যে সে সিনেমা মানুষের মনে দাগ ফেলে আজও।
২০১৯ সালে এসে সে সিনেমার রিমেক করলেন সৃজিত মুখার্জি। কিন্তু ছুঁতে পারলেন না পিনাকী মুখার্জিকে। সেটা প্রয়োজনও ছিন না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সৃজিতের মতো কুশলী পরিচালক, শংকরের গল্পটা কিংবা তার চরিত্রদের প্রতিও সুবিচার করেননি। যেহেতু রিমেক, তাই পুরনো সিনেমার সাথে তুলনা চলেই আসে। চৌরঙ্গীর স্যাটা বোস চরিত্রে নতুন সিনেমায় আবীর চ্যাটার্জি। পুরনো সিনেমার উত্তমের সাথে তার তুলনা করা যায় না তবে কিছুটা হলেও ভালো করেছেন। উৎপল দত্তর করা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মার্কো পোলোকে বিবর্তিত করে সৃজিত মকরন্দ পাল করেছেন। আপন গুণে উৎরে গেছেন অঞ্জন। সুপ্রিয়ার করবী চরিত্রটি স্বস্তিকায় এসে হয়েছে কমলিনী, বিশ্বজিতের চরিত্র অনির্বাণের। আধুনিক কর্পোরেট রক্ষিতা বা এসকর্ট গার্ল চরিত্রে স্বস্তিকা চমৎকার করেছেন। পাল্লা দিয়ে ভালো করেছেন অনির্বাণ। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। সমস্যাটা করলেন পরমব্রত। কিংবা নেপথ্যে সৃজিত। শংকরের শিক্ষানবিশি কাজ, নিপাত গোবেচারা ভাব যেটা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের মুখে ছিল, তা পরমে পুরোপুরি অনুপস্থিত। সৃজিতের সিনেমায় থাকা রুদ্র চরিত্রে সেটা কিছুটা হলেও প্রয়োজন ছিল।
মকরন্দ পালের মুশকিল আসানকারী বরুণ রাহা চরিত্রে রুদ্রনীল গড়পড়তা কাজ করেছেন। ভালো কাজ করেছেন মমতা শঙ্কর। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের রিপ্লেসমেন্ট হয় না। ভানুর করা নিত্যহরি চরিত্রটি সুজয় প্রসাদে নিতাই হয়ে পুরোপুরি হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। ‘শাহজাহান রিজেন্সি’তে ঋতুপর্ণার করা চরিত্রটি পিনাকী পরিচালিত সিনেমায় ছিল একটি পুরুষের। বেহালাবাদক লোকটি চমৎকার দার্শনিক। নানা সময়ে শঙ্করকে সে দর্শনের কথা বলেন তিনি। কিন্তু ঋতুপর্ণায় এসে সেটিও পূর্ণতা পায় না। নিজেকে প্রতিভাবান পরিচালক হিসেবে প্রমাণ করার পরই যেন সে প্রতিভা খুইয়ে বসেছেন সৃজিত।
একের পর এক সিনেমা দিয়ে হতাশ করে চলেছেন তিনি। ‘কাকাবাবু সিরিজ’ থেকে দুটো সিনেমা একদম অখাদ্য হওয়ার পর ‘এক যে ছিল রাজা’ যে সম্ভাবনা তৈরি করেছিল সেখানেও পুরো সফল নন সৃজিত। এরপর ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ পুরোপুরি একটা ব্যর্থ প্রোজেক্ট বলা যায়। তুলনায় না গিয়ে কেবল সিনেমা হিসেবে দেখতে গেলেও ‘শাহ্জাহান রিজেন্সি’ দর্শক প্রত্যাশা মেটায় না। স্বস্তিকা, মমতা শঙ্কর, অঞ্জন, অনির্বাণের অভিনয়। দুই একটা গান ছাড়া তেমন কিছুই মনে রাখার মতো নয়। বস্তুত শংকরের ‘চৌরঙ্গী’ যে একাকীত্ব বহন করে সে সুর আনতে গিয়েও আনতে পারেননি পরিচালক কিংবা শিল্পীরা।