ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
ছবির মতো সুন্দর দেশ লিচটেনস্টেইন

ল্যান্ডলক’ লিচটেনস্টেইন দেশটি বিশ্বের ষষ্ঠ ক্ষুদ্রতম এবং ইউরোপের চতুর্থ ক্ষুদ্রতম দেশ। দেশটির আয়তন বাংলাদেশের যেকোনো জেলার আয়তনের চাইতেও কম। ইউরোপের দীর্ঘতম রাইন নদী এঁকেবেঁকে চলেছে দেশটির পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে। আর এর পূর্বপ্রান্তে রয়েছে আল্পস পর্বতমালা। ছবির মতো সুন্দর এ দেশের নাগরিকেরা জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ মান উপভোগ করে থাকেন।দেশটি ঘিরে রয়েছে পাহাড়ি প্রকৃতির অপরূপ ছোঁয়া। ভাদুজ শহরে রয়েছে পাহাড়ে ঘেরা ভাদুজ ক্যাসেল।
এটি পুরো রাজধানীর প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। শহরের প্রায় যেকোনো জায়গা থেকে এই দুর্গের দেখা পাওয়া যায়। এই দুর্গেই বাস করেন দেশটির রাজারানি।ভ্রমণের জন্যে তেমনভাবে আলোচিত না হলেও দেশটিতে রয়েছে অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি।লিচটেনস্টেইনের মোট আয়তন মাত্র ১৬০ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। দক্ষিণ ও পশ্চিমে সুইজারল্যান্ড এবং পূর্বে অস্ট্রিয়া এই দেশটিকে ঘিরে রয়েছে।। এর রাজধানী হলো ভাদুজ এবং বৃহত্তম শহর শানান। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে এটি পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ। এর মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ প্রায় ১৩৯ হাজার ১০০ ডলার। এখনো রাজতন্ত্রের শাসনব্যবস্থা বহাল রয়েছে এ দেশে।
লিচটেনস্টেইনের বর্তমান রাজার নাম সংক্ষেপে হান্স অ্যাডাম (দ্বিতীয়)। এদেশের নিজস্ব কোনো ভাষা নেই। জার্মানি ভাষা দেশের সর্বত্র প্রচলিত আছে। এছাড়াও ফরাসি এবং ইংরেজির ব্যবহার দেখা যায়। দেশটিতে সুইস ফ্রাঁ ও ইউরো মুদ্রার প্রচলন রয়েছে। ছোট হলেও দেশটির রয়েছে বেশ প্রাচীন ইতিহাস। দেশটির রাজধানী ভাদুজের প্রাচীন নাম ছিল ফার্দুজেস। ১৩২২ সালে গড়ে ওঠে ভার্দুজ দুর্গ। ১৩৪২ সালে ওয়েরডেনবার্গ প্রদেশের শাসকদের হাতে এই দেশের গোড়াপত্তন হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ১৪৯৯ সালের দিকে সোয়াবিয়ার যুদ্ধে সুইস রাজারা ভাদুজ আক্রমণ করে দখল করে। ১৭ শতকের দিকে লিশটেনস্টেইনের বর্তমান শাসক পরিবাররা ভাদুজে আসেন।
পরবর্তীকালে যুবরাজ জোহান অ্যাডাম আনড্রিয়াস সেলেনবার্গ এবং ভাদুজকে একত্র করে ১৭১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে লিশটেনস্টেইনকে স্বীকৃতি দেন। কিন্তু ১৭১৯ সালে রোমান সম্রাটরা নিজেদের অধীনে এই অঞ্চলের শাসনভার তুলে নেন। প্রায় ১০০ বছরের কাছাকাছি শাসন করার পর ১৮০৬ সালে দেশটিকে পরিপূর্ণ স্বাধীন ঘোষণা করা হয়। ইউরোপের অন্যান্য অনেক দেশের মতো এই দেশেরও নিজস্ব কোনো সামরিক শক্তি নেই। সেনাবাহিনী না রাখার ব্যাপারে মূলত অর্থনৈতিক দিকটাই প্রাধান্য পেয়েছে।
প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তোলা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ করা, পাশাপাশি অস্ত্রশস্ত্র কেনা বেশ ব্যয়বহুল। সেই কারণে দেশটি থেকে সেনাবাহিনী পুরোপুরি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশটির সার্বিক আইনশৃঙ্খলার তত্ত্বাবধানে কেবল ‘ন্যাশনাল পুলিশ প্রিন্সিপালিটি’ নামে একটি পুলিশ বাহিনী রয়েছে। তবে যেকোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত সাহায্য সহযোগিতা সুইজারল্যান্ড দিয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। ১৫ আগস্ট দেশটি জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে। এই দিনটি মূলত পুরো দেশের আনন্দ উৎসবের দিন। দুর্গের প্রাঙ্গনে নানা রকম নাচ, গান,মেলা,আতশবাজি হয়ে থাকে।
সুইজারল্যান্ডের মতো এ দেশেরও ব্যাংকিং ব্যবস্থা বেশ উন্নত। ছোট্ট দেশটিতে আছে প্রায় ১৫টি ব্যাংক। দেশটির মোট জিডিপি’র এক-চতুর্থাংশ আসে এই ব্যাংকিং খাত থেকে। এছাড়াও কৃত্রিম দাঁত তৈরি এবং সংস্থাপনে লিশটেনস্টেইন প্রথম অবস্থান ধরে রেখেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বা ব্যবসায়িকভাবেও দেশটির বেশ গুরুত্ব রয়েছে। দেশটির মধ্যে ৩০টিরও বেশি বড় বড় কোম্পানি রয়েছে যাতে প্রায় ৮০০০ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণায় দেশটির উন্নতি দৃশ্যমান। দেশটিতে চারটি গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং নয়টি উচ্চবিদ্যালয় রয়েছে।
লিশটেনস্টেইনের নিজস্ব কোনো বিমানবন্দর নেই। এখানে রয়েছে ব্যাটারিচালিত সিটি ট্রয় ট্রেন। দু’কামরার এই ট্রেনে করে ঘুরে আসা যায় ভাদুজের পুরনো শহর, প্রান্তর বিস্তৃত আঙুরক্ষেত, প্যানোরোমা ভিউ পয়েন্ট, রাইন পার্ক স্টেডিয়াম, ভাদুজ সিটি সেন্টার আরো কত কী! ভাদুজ থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে লিশটেনস্টাইনের দক্ষিণ-পূর্বে আল্পস পর্বতের দক্ষিণ গিরিশিরায় গড়ে উঠেছে অনন্য সুন্দর এক গ্রাম মালবুন। এখান থেকে চারপাশে বহু হিমশৃঙ্গের দেখা মেলে।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো