বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
ছয় তারের ছয় জাদুকর

মৃন্ময়ী মোহনা: সঙ্গীতজগতে কেবল কণ্ঠ দিয়ে নয়, বরং বাদ্যযন্ত্রের নিপুণতা দিয়েও যে মানুষের মন অর্জন করা যায় তা দেশের সেরা কিছু গিটারিস্ট এর প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখলেই বোঝা যায়! আজকের এ লেখায় রয়েছে ছয় তারের ছয় জাদুকরের গল্প।
আইয়ুব বাচ্চু: বাংলাদেশে আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন এক অনন্য সংগীতজ্ঞ। তিনি রক ব্যান্ড এলআরবির গায়ক ও গীটারিস্ট হিসেবে পুরো বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ‘দ্যা টপ টেনস’ তাকে বাংলাদেশের ‘শ্রেষ্ঠ ১০ জন গীটারবাদক’ এর তালিকায় ২য় স্থান প্রদান করে। তাঁর ‘এই রুপালি গিটার ফেলে একদিন চলে যাব দূরে বহু দূরে, সেদিন চোখে অশ্রু তুমি রেখো গোপন করে’ গাওয়া গানটি যেন গিটারের প্রতি তাঁর ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ! ১৯৭৫ সালে বাবার উপহার দেওয়া গিটার দিয়ে তার এ জগতে পা রাখা। সেসময়কার সেরা গিটারবাদক জিমি হ্যানড্রিকস, রিচি ব্রাকমোর, কার্লোস স্যানটানা, নয়ন মুন্সী প্রভৃতি ব্যক্তিদের দেখে আইয়ুব বাচ্চু অনুপ্রেরণা লাভ করেন। বেঁচে থাকতে বিশ্বের খ্যাতনামা কোম্পানিগুলোর গিটার ছিলো তাঁর সংগ্রহে। কোথাও পছন্দের কোনো গিটার পেলেই কিনে ফেলতেন তিনি।মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত একটি কনসার্টে একবার টানা ২৫ মিনিট গিটার বাজিয়েছিলেন তিনি। গিটারের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চুর কথা বাংলাদেশ কোনদিন ভুলবে না।
ইব্রাহীম আহমেদ কমল: ১৯৮৪ সালে ‘ওয়ারফেইজ’ ব্যান্ড দিয়ে মিউজিক ক্যারিয়ারে গিটারিস্ট এবং কম্পোজার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন তিনি। স্বয়ং আইয়ুব বাচ্চু যার সম্পর্কে বলে গেছেন, ‘He is the best!’ বাংলাদেশের মানুষ তাকে ভালোবেসে ‘গিটারম্যান’ বলে ডাকে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের ব্যান্ড ও গিটারজগতে তিনি নানা ভাবে অবদান রেখে যাচ্ছেন। তার ছোঁয়ায় গিটারের তারগুলো যেন হাসতে থাকে।
এরশাদ জামান: ২০০১ সালে রিলিজ হয় ‘আর্টসেল’ ব্যান্ডের ডেব্যু অ্যালবাম ‘অন্য সময়।’ সেসময় যে ব্যক্তিটি সবার নজরে আসেন তিনি হলেন গিটারিস্ট এরশাদ জামান। আর্টসেলে বাজানোর আগে বা পরে যার নিজের কোনো ইলেক্ট্রিক গিটারই ছিল না। তবে, তিনি নিজেকে অ্যাকুস্টিক গিটারিস্ট বলতেই ভালোবাসেন। তার অনুপ্রেরণা ডায়ার স্ট্রেইটসের মার্ফ নফলার। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে এরশাদ জামান এক ভালোবাসার নাম।
অনি হাসান: ১৮ বছর বয়স থেকে গিটারের জগতে তার যাত্রা শুরু। অসাধারণ গিটার বাজানো তো আছেই, সাথে তার গেটআপ আর বডি ল্যাংগুয়েজ দেশের রক মেটাল প্রেমীদের কাছে তাকে করে তুলেছে তুমুল জনপ্রিয়। প্রথম গিটার হাতে নেওয়ার তিন বছরের মধ্যেই তিনি ওয়ারফেইজ, আর্টসেল, অর্থহীন, মেটাল মেইজ, ভাইভ ইত্যাদি ব্যান্ডের সাথে বাজিয়েছেন। ইব্রাহিম আহমেদ কমল দ্য গিটারম্যানের আমন্ত্রণে ২০০৭ সালে অনি হাসান ওয়ারফেইজে পূর্ণ রুপে যোগ দেন এবং এখনো তিনি ওয়ারফেইজে আছেন। ওয়ারফেজে তার প্রথম এলবাম ‘পথচলা।’
ফয়সাল আহমেদ: ফয়সাল আহমেদ ১৯৯৫ সালে গড়ে তোলেন ‘মেটালমেজ’ ব্যান্ড। তখন থেকেই তার গিটারের সুর নিজস্ব ভক্ত তৈরি করে। ২০১৮ সালে এই ব্যান্ডের কার্যক্রম সম্পূর্ন রুপে বন্ধ হয়ে গেলে তিনি যোগ দেন আর্টসেলে। সেখানেই বর্তমানে তিনি তার গিটার নৈপুণ্যের সুদক্ষ ব্যবহার করে চলছেন। তাকে বাংলাদেশের সেরা ‘versatile guitarist ‘ বললে অত্যুক্তি হবে না।
সামির হাফিজ: সফট রক থেকে ডেথ মেটাল সব কিছুতেই দারুণ দক্ষতা তার। শুরুটা ড্রাম আর কিবোর্ড দিয়ে হলেও গিটারে হাতেখড়ি ফিডব্যাকের লাবু রহমানের কাছে। ২০০৭ সালে ডিজুসের এক মিউজিকের অনুষ্ঠানে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার ব্যান্ড পাওয়ারসার্জের। শ্রবণশক্তিতে কিছুটা সমস্যা নিয়েও প্রায় ৫/৬ টা ব্যান্ডে গিটার বাজান তিনি। ইলেকট্রিক গিটারের প্রতি প্রবল ভালোবাসা এবং একাগ্রতা তাকে তরুণ প্রজন্মের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।