ব্যবসা ও বাণিজ্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
টাকা খরচ ছাড়া টেসলার যত মার্কেটিং!

মুনীর হাসান: এলন মাস্ক ও তার টেসলা মটরের নাম জানে না এমন লোকের সংখ্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুবই কম। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো শত চেষ্টা করেও আপনি টেসলার কোন পেইড বিজ্ঞাপনের কথা মনে করতে পারবেন না। কারণ সেটা নেই! এর মানে হলো টেসলা কোম্পানির কোন চিফ মার্কেটিং অফিসার নেই বা তাদের কোন এড এজেন্সী নেই। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন গাড়ি ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা বিজ্ঞাপনে টেকা-টুকা খরচ করে না। তো, এমনটা মেনে নেওয়ার আগে আসুন জেনে আসি কিছু তথ্য! খালি ২০১৫ সালে তিনটে কোম্পানি মিলে ১০+ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে বিজ্ঞাপনে। ভুলে যাবেন না যে, বিলিয়ন ডলার মানে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। মানে তিন কোম্পানির বিজ্ঞাপনের টাকা দিয়ে গোটা তিনেক পদ্মা ব্রিজ বানানো যাবে।
২০১৭ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন একটা বিশ্লেষণে দেখিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেসলার ২০ লক্ষ ইন্টারেকশন হয়েছে। এবং সে জন্য তারা কোন টাকা খরচ করে নাই। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো ফেসবুকে এলন মাস্ক বা টেসলার কোন একাউন্টই নেই। অথচ ২০২০ সালে, করোনা কালে যে সকল কোম্পানির শেয়ারের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তার মধ্যে টেসলা অন্যতম। এলন মাস্ক এখন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনকুবের। ২০২০ সালে টেসলার বানানো গাড়ি সব বিক্রি হয়ে গেছে। মার্কেটিং ছাড়াই!
প্রশ্ন হলো টেসলা বা মাস্ক কী করেন? কাজের জিনিষ বানান – তাদের বানানো গাড়িগুলো ভাল এবং কার্যকরী। তবে, আপনি যদি মাস্ককে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে উনি বলবেন – আমি তো গাড়ি বানাই না। আমরা সফটওয়্যার বানাই যা রাস্তায় চলে! ইলেকট্রিক গাড়ির একটা কঠিন অংশ হলো সফটওয়্যার। সেটা তারা ঠিকঠাক মতো বানান বলেই দাবী করেন। স্বপ্ন পূরণ – টেসলা ইলেকট্রিক গাড়ি বানানোর আগে সবাই মনে করতো এই গাড়ি কেবল অতি বড়লোকেরা ব্যবহার করবে। কিন্তু দিনশেষে দেখা গেল গাড়ির দাম সেই রকম নয়। গ্রাহক ও ভবি-গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ – টুইটারে এলন মাস্কের একাউন্টে ৪১.৩ মিলিয়ন ফলোয়ার আছে। মানে ৪ কোটি ১৩ লক্ষ। যে কোন প্রোডাক্টের বেলায় ডিজাইন থেকে প্রোডাক্ট বাজারে না আসা পর্যন্ত মাস্ক টুইট করে সেটি সম্পর্কে আপডেট দেন। অনেকে ফীডব্যাক দেন। এভাবে একটা এনগেজমেন্ট তৈরি হয়। টুইটারে টেসলার একাউন্টে প্রায় ৬৭ লক্ষ ফলোয়ার আছে। ইউটিউব – টেসলার একটি নিজেদের ইউটিউব চ্যানেল আছে। তবে, সেটার থেকে বড় কথা হলো ওদের ভিডিও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজার হাজার ইউটিউব চ্যানেলে।আর ইউটিউবে এলন মাস্কের ইন্টারভিউ আছে শয়ে শয়ে। মাঝে মধ্যেই তারা ফরমাল এনগেজমেন্টও করে।
পিআর – টেসলা আর মাস্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই পিআর টেকনিকটা কাজে লেগেছে প্রবলভাবে। নানা উসিলায় পত্রিকাওয়ালাদের আকৃষ্ট করতে পারেন মাস্ক। মনে আছে তো, থাইল্যান্ডে একদল শিশু একটি সমুদ্রের গুহায় আটকা পরে। সে সময় এলন মাস্ক তাদের উদ্ধারের জন্য একটা প্রজেক্টের কথা বলেছেন। যেহেতু মাস্ক আগে যা যা বলেছন তার অনেকেখানি করেছেন, কাজে সবাই তাকে ফলো করতে চায়, তার কথা ছাপতে চায়। এতদূর পর্যন্ত যারা পড়ে ফেললেন তারা টের পেয়েছেন মাস্কের এই টেকনিকের পোষাকী নামই হচ্ছে গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং।