বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
ট্রাকের স্টিয়ারিং ছেড়ে অস্কারজয়ী পরিচালকের আসনে

মাহমুদুর রহমান: একটি ডুবে যাওয়া জাহাজ, সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে সহস্র যাত্রী। এরই মাঝে এক প্রেমিক, তার প্রেমিকাকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলো। কিংবা এই পৃথিবীর সময় থেকে অন্য সময়ে, অন্য এক জগতের গল্প। অদ্ভুত সেই সময়, অদ্ভুত সে সময়ে বসবাসকারী।
প্রথম, দৃশ্যটি বিশ্বখ্যাত ‘টাইটানিক’ সিনেমার, সেটা সকলেই বুঝেছেন। দ্বিতীয়টি ‘অ্যাভাটার’। দুটি চলচ্চিত্রেরই পরিচালক জেমস ক্যামেরন। এক নামে যিনি আজ বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু জানেন কি, তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল একজন ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে?

জেমস ক্যামেরনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৬ আগষ্ট কানাডা’র অন্টারিও’র কাপাস্কিং এ। পিতা ফিলিপ ক্যামেরন এবং মাতা শার্লি ক্যামেরন। অন্টারিওর স্ট্যামফোর্ড কলিজিয়েট স্কুল থেকে তিনি তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর ভর্তি হন ট্রয় হাই স্কুলে। সেখান থেকে স্কুল শিক্ষা সমাপ্ত করে ক্যালিফোর্নিয়ার ফুলার্টন কলেজে পদার্থবিদ্যায় ভর্তি হন তিনি।
কিন্তু হুট করে একদিন কলেজকে ছুটি জানিয়ে তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন ট্রাক চালকের জীবন। কিন্তু নিয়তি তাঁর নির্ধারিত ছিল সিনেমার সঙ্গে। স্টিয়ারিং তাই বেশিদিন হাতে রইলো না।
১৯৭৮ সাল। ব্রিটিশ অভিনেতা স্যাড ফিয়েল্ডের বই ‘স্ক্রিন প্লে’ এলো ক্যামেরনের হাতে। মুগ্ধ ক্যামেরন চিত্রনাট্যে রুপ দিয়ে ফেললেন বইটিকে। সেখানেই থেমে থাকলেন না। বানিয়ে ফেলেন তার প্রথম চলচ্চিত্র। নাম, ‘জেনজেনেসিস’। ৩৫ মিলিমিটারে শ্যুট করা এই চলচ্চিত্রটির দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র দশ মিনিট।
ট্রাক চালক থেকে যেভাবে জন্ম হলো নির্মাতা জেমস ক্যামেরনের
সিনেমা জগতে ক্যারিয়ারের প্রথমে তিনি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নিউ ওয়ার্ল্ড পিকচার্সে চাকরি পান। এখানে কিন্তু শুরুতেই তিনি পরিচালক হিসেবে কাজের সুযোগ পাননি। ‘ব্যাটল বিয়ন্ড দ্য স্টারস’ সিনেমায় আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯৮১ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘পিরানহা ২ঃ দ্য স্পয়লিং’-এ নির্মাতা হিসেবে ছিলেন তিনি।
ক্যামেরনের প্রথম সাফল্য ১৯৮৪ সালে। তিনি নির্মাণ করেন সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র ‘দ্য টার্মিনেটর’। আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার অভিনীত এই চলচ্চিত্রটিই রাতারাতি বিশ্ববিখ্যাত বানিয়ে দেয় জেমসকে। মুক্তির পর সিনেমাটি গোটা বিশ্বে আলোড়ন তৈরি করেছিল। রোবটের সাথে মানুষের সংঘাত নিয়ে তৈরী এই চলচ্চিত্রটি পৃথিবীর সকল সিনেমাপ্রেমীরা হুমড়ি খেয়ে লুফে নেয়। মাত্র ৬.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি আয় করে ৭৮ মিলিয়নেরও অধিক।
এরপর আর থেমে থাকেননি ক্যামেরন। টার্মিনেটরের দ্বিতীয় কিস্তি নির্মাণ করেছেন। কেবল নামের কল্যানেই মুক্তি পাওয়ার আগেই শোর তোলে। ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যায়ে নির্মিত এই মুভিটি সকল রেকর্ড ভেঙে ঘরে তুলে নেয় ২০০ মিলিয়ন ডলার। কেবল অর্থ নয়, সায়েন্স ফিকশন সিনেমার জন্য পেয়েছেন ব্র্যাডবেরি অ্যাওয়ার্ড। পরিচালনার পাশাপাশি চিত্রনাট্য লেখেন তিনি। সেখানেও সমান সফল ক্যামেরন।
ক্যামেরনের সবচেয়ে বড় সাফল্য ‘টাইটানিক’। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা, সিনেমার ইতিহাসেই কিংবদন্তী হয়ে থাকবে। ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যায়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে রীতিমত এক আলাদা দুনিয়া গড়ে তুলেছিলেন ক্যামেরন। টাইটানিকের বিপর্যয়ের দৃশ্যগুলো তৈরি করার জন্য ক্যামেরন একটি বিশেষ স্টুডিও নির্মাণ করেছিলেন মেক্সিকোতে। এতে ১৭ মিলিয়ন গ্যালন পানি ব্যবহৃত হয়েছিল টাইটানিকের ডুবে যাওয়া ফুটিয়ে তুলতে। সিনেমার জন্য জন্য তিনি মূল টাইটানিকের ৭৭৫ ফুটের একটি প্রতিরূপ তৈরী করেছিলেন।
মুক্তির পর টাইটানিক ঘরে তুলে নেয় ১ বিলিয়ন ডলার। ১৪ টি অ্যাকাডেমী অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত এই চলচ্চিত্রটি সেরা পরিচালক, বেষ্ট ফিল্ম এডিটিং এবং বেষ্ট পিকচার ক্যাটাগরিতে অস্কার পুরস্কার লাভ করে।
ক্যামেরন স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করেন। তাঁর কল্পনার জগত বিস্তৃত। সেই কল্পনা আর বিজ্ঞানের মিশ্রণে ২০০৯ সালে নির্মাণ করেন ‘অ্যাভাটার’। সিনেমা আর বাস্তব দুই জগত কাঁপিয়ে ক্যামেরন নিজেকে প্রমাণ করেন আবার। টাইটানিকের সব রেকর্ড ভেঙে নিজেকেই ছাড়িয়ে ক্যামেরন আজ জীবন্ত কিংবদন্তী।