খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
দাবা খেলা শুরু হওয়ার বিচিত্র ইতিহাস

মঞ্জুর দেওয়ান: দাবা! খেলাটির কথা মনে হলেই ভেসে আসে চারকোণা আকৃতির খোপ খোপ কোট আর কিছু গুটির কথা। দুইপাশে দুই ভাবুক আপন মনে চিন্তা করছে, কোন গুটিটা চালা যায়! কি চাল দিলে প্রতিপক্ষ হবে কুপোকাত। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এই খেলাটিতে অন্যান্য খেলার মতো পেশিশক্তির কোনো দরকার নেই। বুদ্ধির খেলা হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে আসছে দাবা। ব্যাটল গ্রাউন্ড ছোট হলেও কৌশলের কমতি থাকলে চলবে না। একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিপক্ষের নাকানিচুাবানি খেতে হবে! পৃথিবীজুড়ে মজার এই ইনডোর খেলাটি দুই চার দিনে জনপ্রিয় হয়নি। মানুষের আগ্রহের শীর্ষে থাকা দাবা কয়েকটি দেশ ঘুরে আজকের এই অবস্থানে পৌছেছে। চলুন জেনে আসি দাবা খেলা শুরু হওয়ার ইতিহাস!
দাবা খেলার উৎপত্তিস্থল নিয়ে বিতর্ক আছে। শুরুর দিকের দাবা আর বর্তমান সময়ের দাবার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। একটু খুলে বললেই বুঝতে পারবেন। দাবার ইতিহাস ঘাটতে গেলে ১৪০০ বছর আগে ফিরে যেতে হবে। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টীয় ৭ শতকে ভারতে দাবা খেলা শুরু হয়। তবে সেসময় দাবা খেলার নাম ছিলো ‘চতুরঙ্গ’। শব্দটিকে ভেঙে বললে, ‘চতু’ এবং ‘অঙ্গ’। চতু মানে চার আর অঙ্গ মানে অংশ। ব্যাটল গ্রাউন্ডে কেবল হাতি, ঘোড়া, রথ ও সৈন্য এই চারটি অংশ থাকায় একে চতুরঙ্গ বলা হতো। ধারণা করা হয়, চারটি অংশ থাকায় খেলাটিতে চারজন অংশগ্রহণ করতে পারতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দাবা খেলায় পরিবর্তন এসেছে। একসময় পারস্য সাম্রাজ্যের (বর্তমানে ইরান) সঙ্গে উপমহাদেশের বাণিজ্যিক কারবার বেশ ভালো ছিলো। সেসময় মুসলিম বণিকেরা নিয়মিত বিরতিতে ভারতে আসতো। ভারতে এই খেলা দেখার পর তাদেরও মনে ধরে যায় দাবা। আগত বণিকদের হাত ধরে পারস্যের অতিথি হয়ে আরব দেশে যায় দাবা। পারস্যে আগমনের পরই নাম বদলে যায়। ‘শতরঞ্জ’ নামে পরিচিতি পেতে থাকে দাবা।
মজার ব্যাপার হলো, পারস্য ও চীনে প্রায় একই সময়ে যাত্রা শুরু করে দাবা। কিন্তু চাইনিজরা একে ভিন্ন নামে ডাকতে শুরু করে। চীনদেশে গিয়ে ‘জিয়ানকি’ নাম পায় দাবা। এবং চাইনিজরা একে নিজেদের আবিষ্কৃত খেলা হিসেবে দাবী করে! ভারতবর্ষ থেকে পারস্য ও চীনে যাওয়ার পরও দাবার প্রচলন প্রসারিত হয়নি। সময় লেগেছে আরোও। তবে দাবাকে পৃথিবীতে পরিচিত করার ক্ষেত্রে পারস্যদেশকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। প্রাচীন পারস্য তথা বর্তমানের ইরান থেকে এই খেলাটি বিভিন্ন মুসলিম দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি ইউরোপের কিছু দেশেও ছিলো মুসলিমদের শাসনামল। যার মধ্যে স্পেন ছিলো অন্যতম। শতরঞ্জ তাই স্পেনেও একসময় জনপ্রিয় হয়ে যায়। আর বরাবরের মতো নতুন দেশে গিয়ে আরোও একটি নতুন নাম পায় দাবা। স্পেনে গিয়ে ‘আজেদ্রিজ’ নামক ‘আদুরে’ এক নাম পায় শতরঞ্জ! ইউরোপে গিয়ে যেনো, আরোও দ্রুতগামী হয় দাবা। ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশে। নানাবিধ কারণে দাবার নতুন নতুন নাম আসলেও রাশিয়া এসে এক বৈশ্বিক নাম পেয়ে যায় দাবা।
ইউরোপ ও রাশিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর ‘চেজ’ নামে পরিচিতি পেতে থাকে দাবা। যে ‘চেজ’ শব্দটি মূলত পুরাতন ফরাসী ভাষা থেকে নেয়া। নতুন নামের পাশাপাশি খেলাতেও বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। চতুরঞ্জ খেলায় থাকা হাতি, ঘোড়া, রথ ও সৈন্যের সাথে ইউরোপে এসে যোগ হয় হাতি। একসময় রাণীকেও যোগ করা হয় দাবার বোর্ডে। তুমুল জনপ্রিয় এই খেলাকে নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে ১৯২৪ সালে ‘দ্য ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডেস চেস’ (এফ আই ডিই) গঠন করা হয়। যা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত। দাবা খেলার আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করে থাকে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক সার্কিটে সব ধরনের আয়োজন করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। দাবা খেলোয়াড়দের দক্ষতা বিবেচনায় ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার ও গ্রান্ডমাষ্টার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে এফআইডিই।