বিনোদন
দিব্যা ভারতীর মত্যু আজও অজানা রহস্য

মুম্বাই: ৯০-এর দশকে অনেক পুরুষেরই হার্টথ্রব ছিল দিব্যা ভারতী। তবে অকালেই বলিউড হারিয়েছিল এই নায়িকাকে৷ আজ থেকে ২৫ বছর আগে মাত্র ১৯ বছর বয়েসে দিব্যা মারা যান৷ আর তার মৃত্যুটাও স্বাভাবিক ছিল না৷
মুম্বাইতে তার পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নিচে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়৷ জানা গিয়েছিল মত্ত অবস্থায় তিনি ভারসাম্য হারিয়ে গ্রিলবিহীন জানলা থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিলেন। তবে তার এই আকস্মিক মৃত্যু আত্মহত্যা, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু না হত্যাকাণ্ড তা অস্পষ্ট রয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার আগে কয়েকটা বছর তার সৌন্দর্য এবং অভিনয়ে মাতিয়ে রেখে ছিলেন রূপোলি পর্দা৷
১৯৯০ সালে তেলুগু বব্বিলি রাজা ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জগতের কর্মজীবন শুরু। এরপর ১৯৯২ সালে বিশ্বাত্মা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে হিন্দি চলচ্চিত্রে প্রবেশ। শোলা অর শবনম (১৯৯২) এবং দিওয়ানা (১৯৯২) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়ে তারকা বনে যান৷ যার জন্যে এই সময় ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ মহিলা অভিষেক পুরস্কারও পান৷ ১৯৯২ এবং ১৯৯৩-এর প্রথমার্ধে তিনি ১৪টি হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যা আজ পর্যন্ত বলিউডে অভিষেক হিসেবে তার রেকর্ড৷
১৯৭৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে দিব্যার জন্ম। চলচ্চিত্র জগতে দিব্যা ভারতী নামে পরিচিত হলেও তাঁর আসল নাম দিব্যা ওম প্রকাশ ভারতী৷ এক বিমা আধিকারিক ওম প্রকাশ ভারতীর মেয়ে হলেন দিব্যা ভারতী। হিন্দি, ইংরাজি এবং মারাঠী তিন ভাষায় সাবলীল ছিলেন তিনি। দিব্যা মুম্বইয়ে মানিকজী কুপার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন এবং সাধারণ মানে ছাত্রী ছিলেন৷ কিন্তু নবম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই অভিনয়ের জগতে পা রাখেন। তবে শোনা যায় কয়েক বছরের মধ্যেই বলিউডে রাজ করলেও দিব্যা নাকি কখনই অভিনেত্রী হতে চাননি। পড়াশোনা থেকে মুক্তি পেতেই নাকি তাঁর ছায়াছবির জগতে প্রবেশ৷
আজ থেকে সিকি শতাব্দী আগে ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল ছিল দিব্যা ভারতীর জীবনের শেষ দিন। সেদিন মুম্বইয়ের ভারসোভার তুলসী অ্যাপাটমেন্টের পাঁচ তলা বিল্ডিং থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। মুম্বই পুলিশ এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে ঠিকমতো প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে ১৯৯৮ সালে এই মামলা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু পুরো বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখেছিলেন অনেকে৷ এমনকি দিব্যার স্বামী সাজিদ নাদিয়াডওয়ালার উপর অভিযোগের আঙুল ওঠে। আন্ডারওয়াল্ডের সাথে মামলাটি জুড়ে দেখা হচ্ছিল। যদিও অন্যদিকে আত্মহত্যা বলেও মনে করা হয়েছিল৷ সাজিদ নাদিয়াডওয়ালার সঙ্গে দিব্যার সম্পর্ক এবং ফিল্মে অপ্রত্যাশিত সাফল্য তাঁকে তাঁর মা-বাবার থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছিল। এই কারণে তিনি হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করে নেন। যা এখনও রহস্যই থেকে গিয়েছে।
বলা হয়ে থাকে, যে রাতে এই ঘটনা ঘটেছিল সেই দিন দিব্যা ভারতী নিজের জন্য মুম্বইতে একটি বড় ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। ফ্ল্যাট কেনার জন্য সেইদিন শ্যুটিং বাতিল করে দেন। যদিও আবার শোনা যায় পায়ের চোটের কারণে তিনি শ্যুটিং করেননি।তবে ওইদিন রাতে দিব্যা ভারতী বন্ধু তথা ডিজাইনার নীতা লুল্লা এবং তার স্বামীর সাথে ভারসোভার ফ্লাটে বৈঠক করেন।
সেদিন রাত ১০টা নাগাদ নীতা ও তার স্বামী দিব্যার ফ্ল্যাটে যান। বসার ঘরে বসে নীতাদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন এবং কিছুটা মদ্যপানও হয়েছিল। তারপর তিনি রান্না ঘরের দিকে যান কিছু আনতে৷ সেই সময় নিতা এবং তার স্বামী টিভি দেখছিলেন। দিব্যার বসার ঘরে কোনও বারান্দা ছিল না ছিল শুধুমাত্র একটি বড় জানালা এবং দুর্ভাগ্যবশত ওই জানলাতে আবার কোনও গ্রিল ছিল না ৷ তার নীচে গাড়ি পার্কিং এর জায়গা ছিল। বলা হয় যে রান্নাঘর থকে আসার পর দিব্যা সেই জানলার পাতলা দেওয়ালের ওপর বসে পড়েন। কিন্তু ভারসাম্য হারিয়ে তিনি পড়ে যান।
অত উঁচু থেকে পড়ে যাওয়ার পর রক্তাত্ত অবস্হায় পার্কিং এলাকায় পড়েছিলেন। শীঘ্রই তাকে মুম্বইয়ের কুপার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু শেষরক্ষা হয় না, সেখানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নতুন বার্তা/কেকে