বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
দেবী আতঙ্ক আর মিসির আলির সমাধানে মুগ্ধ দর্শক!

রানু ও আনিসের সুখের সংসার। রানুর বয়স ২৬ বছর। ১৩ মাস হলো তাদের বিয়ে হয়েছে। এর মাঝে আনিস খেয়াল করলো যে রানু মাঝেমাঝে অস্বাভাবিক আচরণ করে। সে নাকি কারো আওয়াজ শুনতে পায়। তাদের দেখে। এই সমস্যা সমাধান করার জন্যে আনিস তার এক সহকর্মীর কথা শুনে মিসির আলির কাছে যায়। মিসির আলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির গেস্ট টিচার।
মিসির আলি আনিস সাহেবের কথা শুনে বললেন রানুকে নিয়ে আসতে। রানুকে নিয়ে আসা হলে মিসির আলি তাকে জিজ্ঞেস করলেন এ রকম কেন হচ্ছে। তিনি তার উপর কিছু পরীক্ষা করলেন। আর রানুর কাছ থেকে যা শুনলেন তাতে তিনি কিছু গরমিল পেলেন। তাই ঠিক করলেন তিনি রানুর গ্রামে যাবেন। ঘটনা মূলটা হয়ত সেখানে লুকিয়ে আছে।
মিসির আলি কি রানুর সমস্যা সমাধান করতে পেরেছিলেন? রানুর কি হয়েছে? রানু কি শুধু ভূত দেখে নাকি এর পিছনে অন্যকিছু আছে। থাকলে সেটা কি? রানু কিভাবে ভবিষৎবাণী করতে পারে? সে কি আসলে ভবিষ্যৎ দেখতে পারে?
এইরকম অনেক প্রশ্ন নিয়ে সিনেমার গল্প এগিয়ে যায়।
.
বাংলাদেশে হরর জনরা নিয়ে খুব কম কাজ হয়েছে। নাটক সিনেমা মিলে। সিনেমায় কাজটা হয়ত হাতে গুণে শেষ করা যাবে। আর যা হয়েছে তা হয়ত তেমন মান সম্মত হয়নি।
বাংলা সিনেমায় হরর এলিমেন্ট ছিলো না বললেই চলে।
এই সিনেমায় হরর এলিমেন্ট পাওয়া গেছে হররের আবহটা ভালো করে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। সাউন্ড, লাইটিং ভালো ছিল। যার কারনে দৃশ্য গুলো মনোযোগ পেয়েছে।
.
মিসির আলি চরিত্রটি করে চঞ্চল চৌধুরী। এই অভিনেতা সিনেমায় আসলে অন্যলোক হয়ে যায়। সিনেমার জন্যে তার ডেডিকেশন আছে। আর সেটা পর্দায় ফুটে উঠে। মিসির আলি চরিত্রে চঞ্চল ভালো ছিল। আমার কাছে ভালো লেগেছে। তার বডি ল্যাংগুয়েজ খুব ভালো ছিল। মিসির আলির সাথে রানুর প্রথম দেখা হওয়ার অংশটা মুভির অন্যতম ভালো লাগার সিন। সেখানে মিসির আলির কাজ করার ধরনটা খুব সুন্দর করে ফুটে উঠেছে। শুধু জিজ্ঞাসাবাদ না বরং ওভারঅল মিসির আলি কিভাবে কাজ করে সেটা ফুটে উঠেছে। আর সে অংশে রানুর অভিনয় অসাধারণ ছিল।
আমার কাছে মনে হয় মিসির আলি চরিত্রটির জন্য চঞ্চল অনেকদিন দর্শক মনে জায়গা করে থাকবে।
.
রানু মুভির অন্যতম প্রধান চরিত্র। এই চরিত্রটি করে জয়া আহসান। রানু চরিত্রের জন্যে অন্য কেউ এত পারফেক্ট হতনা যতটা জয়া আহসান হয়েছে। রানু চরিত্রটি অনেক কমপ্লিকেডেট। অনেকগুলো লেয়ার আছে চরিত্রটির মধ্যে। কিশোরীর সরলতা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন জয়া আহসান। আবার ভয়ের সিনগুলোতে তার এক্সপ্রেশন প্রশংসার যোগ্য। জয়া আহসানের চরিত্রটি যেন একের ভিতর অনেক। আর এই কারনে ভয় ছিল যদি সেভাবে চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলা না যায় তাহলে মুভির মজা অনেকটা নষ্ট হয়ে যাবে। কারন মুভিটা যতখানি মিসির আলির তার চেয়ে বেশি রানুর। আর জয়া আহসান তার চরিত্রটি সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। রানু চরিত্রটি তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা চরিত্র হয়ে থাকবে।
.
নীলু চরিত্রটি করে শবনম ফারিয়া। দারুণ অভিনয় করেছে। ন্যাকামি ছাড়া অভিনয় ছিল। আর নীলু চরিত্রটি এমন যে সে অনেক সুন্দরী হলেও নিজেকে নিয়ে তার একটু আক্ষেপ থাকে। নীলু চরিত্রটি আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। চরিত্র এই সময়ের হলেও কোথায় জানি একটু আলাদা। আর চরিত্রটির সরলতা আমাকে বেশি মুগ্ধ করে
.
সাবেত চরিত্রটি করে ইরেশ জাকের। এর অভিনয় ভালো ছিল। খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। একে নিয়ে কম কথা বলা ভালো। না খারাপ অভিনয় করেনি। কম কথা বলা উচিত এই কারনে যে, এই চরিত্র নিয়ে যত কম জানবেন তত ভালো লাগবে। তত বেশি মজা পাবেন মুভি দেখে।
.
অনম বিশ্বাসের পরিচালনা ভালো লেগেছে। ইন্ডাস্ট্রি ভালো একটা ডিরেক্টর পেল তা বলা যায়। ক্যামেরার কাজ ভালো ছিল। সাউন্ড, লাইটিং ভালো। যতবার জয়া আহসানের রুমের মধ্যে বা রুমের দিকে ক্যামেরা মুভ করছিলো মনোযোগ তখন বেড়ে যাচ্ছিলো। অতীত আর বর্তমানের সাথে কানেকশন সেভাবে শেষে দেখায় সেটা ভালো লেগেছে।
আর গানটা দেখানো ভালো ছিল। রানু আর আনিসের সম্পর্কটা ফুটে উঠেছে সে গানে। দেবী দেখা শেষে সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে যে, সবমিলিয়ে দেবী বাংলা সিনেমায় এক নতুন সৌন্দর্য নিয়ে এসেছে।