
বাশার আল আসাদ: জাতি হিসেবে বাঙালির আনন্দ-উৎসবের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ বইমেলা। ঐতিহ্যবাহী বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রান্তর বইপ্রেমী হাজারো মানুষের পদচারণায় এখন মুখর হয়ে থাকছে প্রতিদিন। প্রতি বছরই মেলায় পুরনো কবি-লেখকদের সঙ্গে সঙ্গে নতুন লেখকদের নতুন বা প্রথম গ্রন্থের উপস্থিতি বাড়ছে। এটা বড়ই আনন্দের সংবাদ আর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য তো সুখকর বটেই। প্রতিবারের মত এবারও মেলায় এসেছে অনেক নতুন কবি-লেখকের বিভিন্ন ধরণের উপন্যাস নাটক কবিতা ও গল্পের বই। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্মুক্ত আকাশে এইসব নতুন সংযোজন অপ্রত্যাশিত সমৃদ্ধি বয়ে আনবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই বইমেলায় প্রকাশিত নতুন দুই লেখকের প্রথম দুইটি বই নিয়ে আজকের আয়োজন।
বন্ধু তোমার হাতটি বাড়াও
বিপ্লব রেজা
লেখকদের সারিতে এবার সংযোজন ঘটেছে আরও একজন তরুণ কবির। নাম বিপ্লব রেজা। প্রতি মুহূর্তে তার মননে নীরবে কাজ করে কবিতার ছত্র। অসম্ভব তারুণ্যদীপ্ত এই নবীণ কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বন্ধু তোমার হাতটি বাড়াও’ এবার মেলায় এসেছে। সাধারণত অক্ষরবৃত্তে লেখা এই গ্রন্থের অধিকাংশ কবিতা মূলত প্রেমজ। প্রেমকে ঘিরেই কবি ‘বিপ্লব রেজার কবিতায় উঠে এসেছে নর-নারীর নানাবিধ মনো-দৈহিক মিথস্ক্রিয়া। যেমন ধরা যাক- কবি তার প্রেয়সীর উদ্দেশ্যে বন্ধু তোমার হাতটি বাড়াও কবিতায় লিখেছেন, “তোমার পরশ কোমল ছোঁয়া, তোমার নিবিড় ভালবাসা, চাই যে মনে চাই যে প্রাণে, দাও গো আমায় – করি আশা। আবার কবি ‘লাল টিপ’ কবিতায় লিখছেন,“ কপালে গাঢ় লাল টিপ, যেন সন্ধ্যা প্রদীপ”। এমনি আরও অসংখ্য কবিতায় কবি তার প্রেম ও দ্রোহের প্রকাশ ঘটিয়েছেন নানান উপমায় এবং ভিন্ন আঙ্গিকে। প্রেম দ্রোহ সুন্দর- এই তিনে যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে কবি বিপ্লব রেজার কবিতায়।
প্রখ্যাত আঁকিয়ে ধ্রুব এষ তাঁর পাকা হাতের মুন্সীয়ানায় সাজিয়েছেন ‘বন্ধু তোমার হাতটি বাড়াও’ বইটির অনন্য সুন্দর প্রচ্ছদ। জনপ্রিয় এই শিল্পীর সুকোমল হাতের ছোঁয়া যেন বইটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। অন্যধারা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত এই কবিতা গ্রন্থটি আপনার ভাবনার জগতে আলোড়ন তুলবেই।
লেখিকা
শাহরিয়ার সোহাগ
নির্মম বাস্তবতার কাছে আঘাত পেয়ে নিজের জীবনের গল্প লিখে সারা দেশ জুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এক লেখিকার গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই গ্রন্থটিতে। তার এ গ্রন্থটি ইতিমধ্যেই পাঠক সমাজে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া একজন লেখিকা, যিনি তার লেখা দিয়ে ইতিমধ্যে পাঠক হৃদয়ের চূড়ান্ত কেন্দ্রবিন্দু হয়েছেন। তিনি তার লেখনী দিয়েই জয় করেছেন সহস্র পাঠকের মন। তবে তিনি নিজেকে একটি অধরা চরিত্রে পূর্ণতা দিতে চান। তাকে নিয়ে পাঠকের নানা প্রশ্ন জমা পড়তে থাকে পত্রিকা অফিসে। তার লেখাকেই মানুষ চিনতো কিন্তু তাকে কেউ চিনতো না।লেখিকা থাকতো সকলেরে অগচরে। এমনকি তিনি যে পত্রিকাতে তার লেখা ছাপানো হতো সেই পত্রিকার কেউ তাকে চিননতো না। পত্রিকা অফিসে সারা দেশ থেকে হাজারো অনুরোধ আসতে থাকে এই তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া লেখিকার সম্পর্কে জানার জন্য। কিন্তু লেখিকার কোনো ঠিকানা ছিল না, শুধু এক মফস্বল এক শহরের হলুদ রঙের একটি বাড়ির বর্ণনা দেওয়া ছিল লেখিকার পরিচয় হিসাবে।
পত্রিকা অফিস তাদের জেলা প্রতিনিধি নাহিদ পারভেজ কে পত্রিকাতে লেখিকার দেওয়া ঠিকানাতে খুঁজে বের করার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। বহু চেষ্টায় সাংবাদিক নাহিদ লেখিকাকে খুঁজে বের করে। লেখিকার অনুমতিতে শুরু হয় লেখিকাকে নিয়ে পাঠকের শত প্রশ্ন। লেখিকার শৈশব, বাল্যবেলা,তার স্কুলজীবন, প্রেম কিংবা পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত। লেখিকার আজকে লেখিকা হয়ে ওঠার পেছনের গল্পগুলো লেখিকা অকপটে বলতে থাকেন সাংবাদিককে। লেখিকার না পাওয়া আর হারানোর গল্প। আর সেখান থেকে জীবন যুদ্ধে মেয়ে সাইরা কে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। লেখিকা, লেখনী আর সাইরা এই তিনটা ব্যাপার একত্রে অভিভূত করে সাংবাদিক কে। লেখিকাকে নিয়ে এই কয়েকদিনের মাত্রারিক্ত ভাবনা গুলোতে নাহিদ তার মস্তিষ্কে লেখিকার জন্য ভালোবাসা অনুভব করে। তারপর যেদিন লেখিকার লেখাটি নাহিদের পত্রিকাতে প্রকাশ পায়, সাংবাদিক নাহিদ সেদিন খুব সকালে লেখিকার পছন্দের জবা ফুল, নীল পাঞ্জাবি আর সেদিনের পত্রিকা নিয়ে লেখিকার হলুদ রঙের বাড়িতে যায় খুব আয়োজন করেই…কিন্তু……। লেখিকা বইটি পাওয়া যাচ্ছে ছায়াবিথী প্রকাশনীতে।