বাক্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য উৎসর্গিত যে জীবন

কোন কোন মানুষের মৃত্যু তাঁকে জীবিত অবস্থার চেয়েও বেশি জীবন্ত করে তোলে। এদেরই একজন চে গুয়েভারা। আজ এই মহান বিপ্লবীর ৮২তম জন্মদিন। চে’র জন্ম ১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনাতে। স্প্যানিশ এবং আইরিশ পিতা-মাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন চে। ছোটবেলা থেকেই হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হলেও দৃঢ় মনোবলের কারণেই খ্যাতি পেয়েছিলেন একজন অ্যাথলেট হিসেবে।
পেশায় ডাক্তার হলেও তাঁর জীবনের প্রধান লক্ষ্য ছিল নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তি। তার এই মুক্তির বাসনা কোন নির্দিষ্ট দেশকে ঘিরে আবর্তিত হয় নি। সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তি সংগ্রামের স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। তাই তো আর্জেন্টিনার নাগরিক হয়েও কিউবা বিপ্লবে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে হটিয়েছিলেন স্বৈরাচারী বাতিস্তা সরকারকে। ১৯৫৯ সালে বিপ্লব সফল হওয়ার পর ক্যাস্ত্রো তাঁকে নাগরিকত্ব প্রদান করে নিয়োগ দেন ন্যশনাল ব্যাংক অব কিউবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে।
কোন কিছু বদলাতে হলে তা আগে ভালোভাবে চিনতে হবে। তাই তো তরুণ বয়সেই মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন বন্ধুকে সাথে করে। নয় মাসের এই ভ্রমণে আর্জেন্টিনা থেকে যাত্রা শুরু করে ঘুরে বেরিয়েছেন পেরু, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, চিলি ইত্যাদি দেশ। তার এই ভ্রমণকথা একটি ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন, যেটিকে কেন্দ্র করে পরে সিনেমাও তৈরী হয়েছে The Motorcycle Diaries নামে। কৌতুহলী পাঠক এটি ইউটিউব থেকে দেখে নিতে পারেন।
বিপ্লব যেখানে, চে গুয়েভারা সেখানে। কঙ্গোর বিপ্লবী নেতা প্যাট্রিস লুমুম্বার নেতৃত্বে কঙ্গো বেলজিয়ামের কাছ থেকে মুক্তি লাভ করে এবং লুমুম্বা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন ১৯৬০ সালের জুন মাসে। এর মাত্র আড়াই মাস পরে মার্কিন পোষ্য জেনারেল মবুতুর নেতৃত্বে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁকে উচ্ছেদ করে ১৯৬১ সালের ১৭ জানুয়ারী তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।তারপর শুরু হয় মবুতুর এক ভয়ঙ্কর শাসনপর্ব। এরকম স্বৈরশাসনের মধ্যেই ১৯৬৫ সালে ছদ্মবেশে কঙ্গোতে গিয়ে উপস্থিত হন চে গুয়েভারা এবং বিপ্লবী যুদ্ধ সংগঠিত করায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
ডিসেম্বরে গোপনে দেশে ফিরেন এবং ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে পৌঁছান বলিভিয়ায়। বলিভিয়ায় মার্কিন সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ সংগঠিত করার চেষ্টা করেন চে। এরকম এক যুদ্ধেই গুরুতর আহত হয়ে তিনি আটক হন ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর এবং পরেরদিন তাঁকে হত্যা করে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত বলিভিয়া সামরিক বাহিনী। বর্বর মার্কিনীদের উপদেশ অনুযায়ী চে’র হাত কেটে আলাদা করে ফেলা হয় ডিএনএ টেস্ট এর মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য। এভাবেই সমাপ্তি ঘটে চে গুয়েভারার বর্ণাঢ্য জীবনের।
চে’র প্রতিটা ছবিই প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর, মনে হয় যেন সকল প্রতিকূলতা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াই করার চাইতে আনন্দের আর কিছু নেই। তার এই অবিরাম প্রাণশক্তিই নিতান্ত হতাশ মানুষকেও করে তোলে মহান স্বাপ্নিক।
- কাওছার ইবনে আসাদ