জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রোদ্দুর হয়ে গেলেন

মাহমুদুর রহমান: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চলে গেলেন বড়দিনে। বর্তমান সময়ে তাঁকে কয়জন চেনেন তাতে সন্দেহ আছে। আমিও খুব যে চিনি তাও না। কিন্তু আমি ‘অমলকান্তি’কে চিনতাম। সেই অমলকান্তি, যে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। অমলকান্তি আর কেউ না, আমি অমলকান্তি, কিংবা আপনি। বাঙালী পাঠক মাত্রেই অমলকান্তিকে চেনে।
‘২৪ এর হেমন্তে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্ম ফরিদপুরে। হয়ত হেমন্তের রোদ্দুর তাঁর মাঝে কাব্যের বীজ বুনেছিল, কে জানে। পিতামহ কলকাতার কর্মস্থল ছেড়ে ফরিদপুরে মৌরসিপাট্টা গেড়েছিলেন। একদম ছেলেবেলায় সেখানেই ছিলেন নীরেন বাবু। তার বাবা কলকাতাতেই ছিলেন। কলকাতার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কাজ করতেন। দুই বছর বয়সে কবির মা বাবার কর্মস্থল কলকাতায় চলে যান। কবি থেকে যান তাঁর ঠাকুরদা লোকনাথ চক্রবর্তীর কাছে। গ্রামে কাটিয়েছেন মহা স্বাধীনতা—ইচ্ছেমতো দৌড়ঝাঁপ করে। কখনো গাছে উঠছেন; কখনো আপন মনে ঘুরেছে গ্রামের এই প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। চার বছর বয়সে কবির কাকিমা বলছিলেন, ‘তুই তো দেখছি কবিদের মতোন কথা বলছিস!’ সেই সময়েই মুখস্থ করেছিল গ্রামে কবিয়ালরা, কবিগান,রামায়ণ গান। গ্রামের দিনগুলো খুব সুন্দর কেটেছেন তাই তিনি এ গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় যেতে চাইতেন না। তবে ঠাকুরদার মৃত্যুর পর গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় চলে যান।
ছোটবেলা থেকেই ছড়া লিখতেন নীরেন্দ্রনাথ। ১৯৫৪ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘নীল নির্জন’। তখন কবির বয়স ৩০। তার পর একে একে প্রকাশ পায় ‘অন্ধকার বারান্দা’, ‘নিরক্ত করবী’, ‘নক্ষত্র জয়ের জন্য’, ‘আজ সকালে’… অজস্র কবিতার বই। পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি। ১৯৯০-এ বিশ্ব কবি সম্মেলনে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। একটা সময়ে ‘দেশ’ পত্রিকায় বেশ কিছু ছোটগল্প লিখেছেন। সেই লেখাও পাঠক মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। তাঁর লেখা কবিতা ‘অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল…’ বা ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়…’ বাঙালির কাছে রীতিমতো প্রবাদে পরিণত হয়েছে।
মূলত তিনি কবি। সঙ্গে লিখেছেন উপন্যাস, গল্প। বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দা তালিকায় যুক্ত করেছেন নতুন নাম, ভাদুড়ি। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বহুদিন। সম্পদনা করেছেন নানা পত্রিকা, পূজা বার্ষিকী। ভূষিত হয়েছেন নানা পুরস্কারে।
বহুদিন ভিটে-ছাড়া হলেও বাঙাল রক্তের টান যায়নি। আত্মজীবনী ‘নীরবিন্দু’ শুরুই করেছেন ফরিদপুরের ‘চান্দ্রা’ থেকে। কবি বুঝি শিকড়ের সঙ্গে বাঁধা ছিলেন সব সময়।