ব্যবসা ও বাণিজ্য
পাঠাও অথবা স্বপ্নজয়ের গল্প

বাশার আল আসাদ: একজন উদ্যোক্তা পারে একটি সমাজের বা একটি দেশের অবস্থা পাল্টে দিতে। তরুণেরা অন্যের কাছে চাকরির জন্য না ঘুরে নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং তারা যেন লাখো তরুণ সমাজ কে কাজের সুযোগ করে দিতে পারে। ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশের কয়েকজন স্বাপ্নিক তরুণ মোটরসাইকেলে পাঠাও রাইড শেয়ারিং আ্যাপ চালু করে সাড়া জাগিয়ে ফেলে। তাদের ভিতরে হুসাইন এম ইলিয়াস একজন। বাংলাদেশে বর্তমানে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং জনপ্রিয় হয়েছে। অনেকগুলো রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্ম এ সেবা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে বেশি পরিচিতি পেয়েছে পাঠাও। আজ আমরা জানবো পাঠাও এর সিইও হুসাইন এম ইলিয়াস এর পাঠাও রাইড শেয়ারিং এর গল্প।
২০১৫ সালে হুসাইন এম ইলিয়াস এবং সিফাত আদনানের উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে পাঠাও। অবকাঠামোগত সমস্যা কমিয়ে বাস্তব ভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করা পাঠাও এশিয়ার দ্রুত সম্প্রসারিত স্টার্টআপ গুলোর অন্যতম। উদ্যোক্তাদের সাথে গ্রাহকদের সংযোগ ঘটানোর অনন্য প্লাটফর্ম পাঠাও, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে তরান্বিত করছে। তার আগে ফেসবুকে গ্রুপ খুলে নিজেদের মধ্যে এর চাহিদা যাচাই করে দেখেন। তখন অ্যাপস্ ছিলো না, পাঠাও নামে তাদের ডেলিভারি সার্ভিস চালু ছিল। তারা আলিবাবা গ্রুপের দারাজ ও রকেট ইন্টারনেটের অংশ হিসেবে তাদের ই-বাণিজ্য সেবা প্রদান শুরু করে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাঠাও তাদের রাইড শেয়ারিং সেবা চালু করে। পাঠাও তাদের সেবাসমূহ একটি মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকে। পাঠাও মূলত বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম , সিলেট,নারায়নগঞ্জ,গাজীপুর ও নেপালে তাদের রাইড শেয়ারিং সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়াও এটি ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু উপশহরে ও নেপালে তাদের সেবা দিচ্ছে। পাঠাও রাইড শেয়ারিং সেবার পাশাপাশি ই-বাণিজ্য, কুরিয়ার ও খাদ্য সরবরাহ সেবাও দিয়ে যাচ্ছে। তারা তাদের অ্যাপসটি আরও উন্নত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে হালনাগাদ করে থাকে।
দেশের অন্যতম অবকাঠামোগত সমস্যাকে কমিয়ে উন্নয়নের জন্যে এটি একটি বাস্তবধর্মী সমাধান হিসেবে ইতোমধ্যে প্রমাণ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে দেশে অনেকগুলো রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরিও নাগরিক সমস্যার সমাধান করাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতারও কমতি ছিল না। পাঠাও এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেছে যেখানে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং বাংলাদেশের কয়েক লক্ষ গ্রাহককে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তারা যখন নতুন কার্যক্রম চালু করেছিল তখন অনেকে এটিকে একটু আলাদা করে দেখেছে। অনেকেই মন্তব্য করেছে , এই ধরনের কার্যক্রম বেশিদিন চলবে না। তাদের এই সেবাটি সম্পূর্ণ স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ও গুগল ভিত্তিক। অনেকেই বলেছে, দেশে যথেষ্ট পরিমাণে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী নেই আবার যারা আছেন তারা ইন্টারনেট চালান না। তাহলে অ্যাপ ভিত্তিক ও ইন্টারনেট নির্ভর এই সেবা কীভাবে জনপ্রিয় হবে? তারা সেই প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠেছে। মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, অ্যাপ ব্যবহার করছে, রাইড শেয়ারিং সেবাও ব্যবহার করছে । পাঠাও মোটরসাইকেল ও গাড়ীর মাধ্যমে তাদের রাইড শেয়ারিং সেবা দিয়ে থাকে। এই সেবাটি গ্রহণের জন্য পাঠাও অ্যাপসের পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড অথবা অ্যাপল ফোনে চালক ও যাত্রী উভয়ের কাছে ইন্টারনেট এবং জিপিএস ব্যবস্থা চালু থাকতে হবে। পাঠাও পাওয়া যাচ্ছে গাজীপুর,চট্টগ্রাম,গাজীপুর ঢাকা নারায়ণগঞ্জ, কাঠমান্ডু- নেপাল এই শহর গুলোতে।

দেশের এই টেক স্টার্টআপকে সফলতার চূড়ায় পৌঁছাতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ঠ সহযোগিতা করা হয়েছে। রাইড শেয়ারিং সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নীতিমালা যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাঠাও বরাবরই ব্যবহারকারী ও রাইডারদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে আসছে। সব সময় হেলমেট ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলতে বিপুল পরিমাণ হেলমেট ফ্রি বিতরণ করছে। বর্তমানে রাইডার ও রাইড শেয়ারিং সেবা গ্রহীতা উভয়েই হেলমেট ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। দেশসেরা পাঠাও কুরিয়ার এখন হোম ডেলিভারি সার্ভিস দিচ্ছে ৫৩ জেলায়। এছাড়া এখন থেকে পাঠাও অ্যাপ থেকেই সহজে বিকাশ পেমেন্টে ভাড়া পরিশোধ করা যায় । রাইডের পেমেন্ট বিকাশ করতে গ্রাহক কে রাইড শেষে পেমেন্ট অপশন হিসেবে ‘ডিজিটাল পেমেন্ট’ নির্বাচন করতে হবে। পরবর্তী ধাপে অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট অপশন গুলোর মধ্যে থেকে বিকাশ নির্বাচন করলে সুরক্ষিত বিকাশ পেমেন্ট পেজ ভেসে উঠবে পাঠাও অ্যাপ-এ। সবশেষে বিকাশ পেমেন্ট পেজ-এ বিকাশ একাউন্ট নম্বর, ভেরিফিকেশন কোড এবং বিকাশ পিন দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে।
সম্প্রতি পাঠাও দেশের গন্ডি পেরিয়ে নেপালে তাদের কার্যক্রম চালু করেছে। ইতোমধ্যে এই বিষয়টি বিভিন্ন মহলে বেশ প্রশংসিতও হয়েছে। দেশে পাঠাওয়ের বিভিন্ন সেবা দিয়ে তারা ইতোমধ্যে সফলতা ও আস্থা অর্জন করেছে। তাদের সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি সেবার পরিধিও বৃদ্ধি করছে। দেশের সফলতা অর্জনের পর পাঠাও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের বাইরে কীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় এবং দেশের সুনাম বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দেয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় নেপালে পাঠাও কার্যক্রম চালু করেছে। বেশ কয়েকমাস ধরে পাঠাও রাইডশেয়ারিং নিয়ে নেপালে কাজ করছে।