ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর স্থান

সাকিব রহমান সিদ্দিকী শুভ: ২১ শে অগাস্ট ১৯৮৬ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত এবং রহস্যময় প্রাকৃতিক দূর্যোগটি আঘাত হানে উত্তর পূর্ব ক্যামেরুনের লেক নিয়সে। লেক নিয়স একটি জ্বালামুখীয় হ্রদ বা ভলকানিক ক্রেটার লেক। (ভলকানিক ক্রেটার হল, আগ্নেয়গিরির উদ্গিরনের ফলে জ্বালামুখের মাথায় যে বৃত্তাকার গর্ত তৈরি হয়।)

কোন প্রকার সংকেত ছাড়াই হুট করে এই লেক শত হাজার টন বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে দেয়। ধারণা করা হয় এর পরিমান প্রায় ৩০০০০০ থেকে ১.৬ মিলিয়ন টন। এবং এই বিষাক্ত কার্বন ১০০ কিলোমিটার পার আওয়ার গতিতে চারিদিকে ছড়িয়ে পরে এবং মূহুর্তের মধ্যে ১৭৪৬ জন মানুষ এবং ৩৫০০ এরও বেশী গবাদি পশুর জীবন কেড়ে নেয়। লেকের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে যেসব গ্রাম ছিলো, চা, নিওস এবং সুবুম, সেখানকার মানুষেরা ঘুমের মধ্যেই দম বন্ধ হয়ে মারা যেতে শুরু করে, কারো কারো নাক এবং মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে। যেসব ভাগ্যবান মানুষ বেঁচে যান, তারা ঘুম ভেঙ্গে উঠে দেখেন, চারিদিকে কোন অস্বাভাবিকতা নেই, কিন্তু শুধু লাশ আর লাশ।
এটি পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ধারণা করা হয় এবং বিজ্ঞানীরা আজও এর পেছনের কারণ নিয়ে একমত হতে পারেন নি। তাহলে এই সম্পর্কে আমরা কি জানি?

গবেষকগণ ধারণা করে থাকেন, লেকটি প্রায় ৯ পিপিএম এর মত কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। যেহেতু বাতাসের তুলনায় কার্বন ডাইঅক্সাইড ভারী তাই ভ্যালীকে ৫০ মিটার পুরু চাদরে ঢেকে দিয়েছিল, যা লেকের মধ্যে জমা ছিল, কিছু একটা এই শত শত টন কার্বন ডাইঅক্সাইড চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়।
সাইন্টেফিক আমেরিকান পত্রিকায় ডেভিড ব্রেসানের বর্ণনা অনুযায়ী, আগ্নেয়গিরির মধ্যকার গ্যাস এই বিশাল হ্রদে দ্রবীভূত হতে থাকে, এবং গভীর অংশের পানিতে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। উপরের অংশের গরম পানি এই দ্রবীভূত পানির একধরনের ক্যাপের মত আবরন। কিভাবে এই নিচের পানি উপরে উঠে আসলো তা আজো জানা সম্ভব হয় নি। ধারণা করা হয়, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস অথবা আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণ থেকেই এই পানিকে উপরে তুলে নিয়ে আসে। নিঃশব্দে শুরু হলেও এর প্রভাব ছিল ভয়াবহ বিধ্বংসী। বৈজ্ঞানিক যুক্তির অভাব থাকলেও এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। হুট করেই একটা গুজব ছড়ায় যে ক্যামেরুন আর ইসরাইলের সম্মিলিত এক বোমা পরীক্ষার ফলেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে, যদিও এর কোনো শক্ত ভিত্তি পাওয়া যায় নি। এরকমই একটি ঘটনা ঘটে লেক মনৌনে, যেখানে একই রকম এক উদ্গিরনের ফলে ৩৭ জন লোকের প্রাণহানি ঘটে, যারও কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আজো মেলে নি।

এ ধরনের ঘটনা রোধে ২০০১ সালে এই হ্রদগুলোর তলা থেকে পাইপ লাগিয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড সরিয়ে আনার ব্যাবস্থা করা হয়। যে পাইপ দিয়ে খুবই অল্প পরিমানে ধীরে ধীরে কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে যায়। এরপর ২০১১ সালে আরো এক সেট পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। তবে এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে নতুন আরেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। লেক নিয়সের চারপাশের প্রাকৃতিক দেয়াল (যেহেতু এটি পাহাড়ের উপরে আগ্নেয়গিরির মুখে অবস্থিত) আস্তে আস্তে দূর্বল হতে শুরু করে, যার ফলে যেকোনো সময় যদি ভূমিকম্প হয় তবে বলাই বাহুল্য যে কত ভয়াবহ পরিনতি হবে। এই সমস্যা দূর করার জন্য চারপাশে বাঁধের ব্যবস্থা করা হলেও গবেষকদের ভয় আছে ওয়েদারিং বা লেক অভারফ্লোর মর সমস্যা নিয়েও।
সমস্যার কারণ না জানা গেলেও বিজ্ঞানীরা এই হ্রদের আচার আচরণ বোঝার চেষ্টা করছেন এবং বিগত ত্রিশ বছরে এইধরনের কোনো সমস্যা দেখাও যায় নি।
Source: science alart