ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
পৃথিবীর স্বর্গ থেকে ঘুরে আসুন সহজেই

পলাশ আলবার্ট: ছোটবেলা থেকেই এই কথাটা শুনে আসছিলাম। পৃথিবীতে যদি কোথাও স্বর্গ থেকে থাকে সেটা হচ্ছে ভারেতর কাশ্মীর। সেই সময় থেকেই বুকের ভেতর স্বপ্ন বুনতে থাকি কাশ্মীর যাওয়ার। বড় হওয়ার সাথে সাথে ভ্রমণের নেশা আরো তীব্রতর হতে থাকে তার সাথে কাশ্মীর ও হাত ছানি দিয়ে ডাকতে শুরু করে।
চার বন্ধু মিলে কাশ্মীর যাওয়ার প্ল্যান করে ফেলি। আমি(পলাশ), অভিজিৎ, বাশার আর শুভ। যেহেতু আমরা চারজন-ই ছাত্র তাই কিভাবে সস্তায় যাওয়া যায় সেই তথ্য আমরা ভালোভাবে জেনে নেই। আমরা এক রাতে কলকাতার উদ্দ্যেশে বাসে উঠি। পর দিন সকালে বেনাপোল বর্ডারের ঝামেলা শেষ করে দুপুর নাগাদ কলকাতা পোঁছে যাই। আমাদের ট্রেনের টিকেট আটাশ তারিখের কাটা ছিল, প্রায় এক মাস আগে। কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় হোটেলে একদিন বিশ্রাম নিয়ে আঠাশ তারিখ দুপুর ১২:৪৫ মিনিটে আমরা ট্রেনে উঠি। প্রথমে প্রায় তিন দিনের ট্রেন জার্নি্র কথা ভেবে মাথা তিন পাক অবশ্য মেরেছিল তবে ট্রেনে উঠার সাথে সাথেই কাশ্মীর যাওয়ার উত্তেজনায় সব ক্লান্তি আর চিন্তা ম্লান করে দিয়েছিল। ট্রেন চলছে তার আপন গতিতে। একের পর এক স্টেশন আর একের পর এক প্রদেশ পার হতে থাকি আমরা।
ট্রেনের মধ্যেই চলতে থাকে আমাদের গোসল, খাওয়া সব কিছু। ট্রেনে যতটা বিরক্ত লাগবে ভেবেছিলাম তার ছিটেফুটাও আমাদের লাগে নি। কারণ আমি দেখছিলাম নানান রকম মানুষের নানান রকম অভ্যাস। শিশুরা যেমন তার চারপাশে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তেমনি আমরা ও তাকিয়ে দেখছিলাম চারপাশ, আর শিখছিলাম। অবশেষে ত্রিশ তারিখ বিকেল পাঁচটায় আমরা নামি জম্মু তাউয়াই স্টেশনে। এখানে নেমেই আমরা প্রথম যে সমস্যার সম্মুখীন হই তা হচ্ছে আমাদের চার জনের সিম বিকল হয়ে পরে। কাশ্মীরে শুধু ওই কাশ্মীরের নিজস্ব সিম-ই চলে আর ওখান থেকে সিম নিতে হলে চাই আলাদা কার্ড। তাই অামরা কোন প্রকার সিম ম্যানেজ না করেত পেরে কোন রকম নেটের মাধ্যমে আমাদের পৌঁছানো খবর টা দিয়ে সন্ধ্যার বাসে উঠে রওনা হই শ্রীনগরের উদ্যেশে। শ্রীনগর পৌঁছাই সকাল সাত ঘটিকায়। এখান থেকেই আমাদের কাশ্মীর দেখা শুরু।
কাশ্মীর ছিল মোগল সম্রাটেদর সব চেয়ে প্রিয় অবকাশ যাপনের স্থান । যদিও বাস থেকে নেমে ঠান্ডার কারেণে নিজেদের আর মোগল মনে হচ্ছিল না। মাইনাস ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা আমাদের সকল চিন্তা শক্তিকে ও যেনো জমিয়ে দিয়েছিলো।
প্রথম দিনঃ ডাল লেকে হোটেল বুক করে ফ্রেশ হয়ে আমরা বের হয়ে পড়ি আশে পাশের স্থান গুলো ঘুরে দেখার জন্য। ডাল লেকের আশে পাশে মনোমুগ্ধকর অনেক স্থান রয়েছে যা সত্যি-ই কল্পনার চেয়ে ও অনেক সুন্দর। এই স্থান গুলো শিকারা(নৌকা) দিয়ে ভ্রমণে সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য। ডাললেকে থেকে আশে পাশের স্থান সমূহ হচ্ছেঃ হজরত মসজিদ, নেহেরু পার্ক, মিনা বাজার(ভাসমান), মোগল গার্ডেন,পরীমহল।
মিনা বাজার থেকে আপনি যাবতীয় কেনাকাটা সেরে নিতে পারেন। কাশ্মীরী চাদরের কদর গোটা পৃথিবী ব্যাপী। এই ভাসমান মিনা বাজারে পাওয়া যাবে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে দশ লক্ষ টাকা দামের চাদর।
দ্বিতীয় দিনঃ পর দিন আমরা পেহেলগামের উদ্দ্যেশে রওনা হই। সাধারণত বেশিভাগ মানুষ সেখানে গাড়ি রির্জাভ করে যায় তবে আমরা গিয়েছিলাম আলাদা আলাদা। ডাল লেক থেকে আনান্তনাগ, আনান্তনাগ থেকে বাসে পেহেলামগাম। পেহেলগাম দেখে মনে হচ্ছিল এ এক আইসক্রিমের শহরে এসছি কারণ পুরো শহরটাই শুভ্র বরফে ঢাকা। চারপাশে উঁচু উঁচু পর্বত। পেহেলগামে ঘুরে দেখার স্থান সমূহ হচ্ছে আরু ভ্যালী, বেতাব ভ্যালী, চন্দনওয়ারী। এই স্থান গুলো গাড়ী দিয়ে যেতে হয়।এই স্থান গুলো ঘুরতে ভাড়া পরবে ১৫০০ টাকা। মিনি সুইজারল্যান্ড, লিডার নদী, পাইনের অরণ্য এই স্থান গুলোতে যেতে হলে আপনাকে ঘোড়া নিতে হবে যার জন্য জন প্রতি খরচ করতে হবে ১৫,০০-২,০০০ টাকা। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যেতে হয় বলে এই যায়গা গুলোতে ঘোড়া করে যেতে হয়।

তৃতীয় দিনঃ পর দিন সকাল বেলায় আমরা হোটেল ছেড়ে দিয়ে চলে আসি ডাল লেক সেখান থেকে গুলমার্গ যাওয়ার জন্য পনেরশ টাকায় গাড়ী ঠিক করি। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য গুলমার্গ সব চেয়ে উত্তম। কারণ এখান থেকে উঁচু পাহাড় হতে স্কেটিং এর সু ব্যাবস্থা রয়েছে। অার ও অাছে প্রায় ২০ মিনিটের একটি ক্যাবল কার রাইড।
অামরা সে দিন গুলমার্গ থেকে ফেরত এসে শ্রীনগরে চলে অাসি। রাতের বাসে চের জাম্মু তারপর দিন সেই এক-ই ট্রেন ধরে কলকাতা। তবে সমেয়ের অভাবে অদেখা-ই রয়ে যায় সোনমার্গ, শ্রীনগর থেকে দুইশ কিলোমিটার দূরে কার্গীল।
সর্তকবার্তাঃ কাশ্মীর নিয়ে যতই খারাপ খবর-ই আমরা শুনি না কেনো টুরিস্টদের জন্য একশত ভাগ নিরাপদ। অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণ শীতের কাপড় সাথে নিয়ে যেতে হবে।
যেভাবে যাবেনঃ
. কলকাতা থেকে জম্মু যেতে হলে পরিবহন হিসেবে বেছে নিন জম্মু তাওয়ি এক্সপ্রেস। এদের স্লিপার ক্লাসে ৭২০ রূপিতে যেতে পারবেন। ফিরতি পথেও একই ভাড়া। ট্রেনে আইআরসিটিসি এর ব্রেকফাস্ট ৪০ রূপি। লাঞ্চ/ডিনার ১৬০ রূপি।
২. জম্মু থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত ৩ সিটের গাড়িগুলোতে যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৭০০ রূপি জনপ্রতি।
৩. থাকার জন্য চমৎকার জায়গা শ্রীনগর। শ্রীনগরে ডাল লেকের আশেপাশে ২ জনের হোটেল রুম ৮০০-১৫০০ রুপির মধ্যে মিলবে।
৪. ডালগেট থেকে শহরের সব দর্শনীয় স্থানে শেয়ারড ট্যাক্সিতে তে ১০-২৫ রূপিতে যাওয়া আসা করা যায়।
৫. শালিমার, নিশাত, হারওয়ান প্রভৃতি বাগানে প্রবেশ মূল্য ২০ রূপি।
৬. শ্রীনগর স্টেশন থেকে ডেমু ট্রেনে অনন্তনাগ একদিনে ঘুরে আসা যায়। এক্ষেত্রেও সস্তা পড়বে ডালগেট থেকে শেয়ার ট্যাক্সি। ৩০ রূপিতে স্টেশন যাওয়া যাবে।
৭. সন্ধ্যার পরে খায়াম চকে ৮০-১৬০ রূপিতে অনেক মজাদার কাবাব আইটেম খেতে পারেন।
৮. একটু দরদাম করলে ১৫০ রূপিতেই ২ ঘন্টার শিকারা ভ্রমণ হয়ে যাবে। শিকারা হলো কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা। ডাল লেকে গেলে শিকারায় ভ্রমণ করবেন অবশ্যই।
৯. শপিংয়ের জন্য চলে যান ডাল লেকে। সন্ধ্যার পরে ডাল লেকের দুই পাশে রাস্তার ওপরের দোকান থেকে কেনাকাটা করতে পারেন। যথেষ্ট দর কষাকষি করে কিনবেন।
১০. আখরোট আর বাদাম ২৮০ রূপি কেজি দরে কিনতে পারেন, সাথে ১৫০ গ্রামের কাশ্মীরি কহয়া চা এর ক্যান ১৪০ রূপিতে নিতে পারেন।
এই পথে ভ্রমণে আপনার হাতে থাকা চাই একটু বেশি সময়। যাত্রাপথেই লাগবে ৩ দিন করে মোট ৬ দিন। অর্থাৎ, আজকে দুপুরে ট্রেনে উঠলে জম্মুতে পৌছবেন পরশু সকাল ৯টায়। এরপর সেখান থেকে গাড়িতে রওনা দিয়ে শ্রীনগর আসতে বেজে যাবে রাত প্রায় ৮টা।