ক্রিকেটখেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
প্রথম জয়ের গল্প

এস.কে.শাওন: সফরকারী বাংলাদেশ যখন ইনিংসের শেষ ওভারে ব্যাটিং করছিল তখন ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে বলছিলেন,সাকিব ও তামিম দলে নেই। এমনকি বিশ্বকাপে ভারতের সাথে ভালো পারফরম্যান্স করা সাইফউদ্দীনও নেই। তাদের ছাড়াই বাংলাদেশ ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে। ভোগলের এ কথার পরই কাপ্তান মাহমুদউল্লাহ অভিষিক্ত শিবম দুবের তৃতীয় বলটিকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করলেন। হ্যাঁ! বাংলাদেশ ইতিহাস গড়েছে।
বাংলাদেশ টি-২০ ইতিহাসের ১০০০তম ম্যাচ জিতে ইতিহাসের পাতায় নাম তুলেছে। এমনকি ভারতের বিপক্ষে টি-২০ তে এটাই টিম বাংলাদেশের প্রথম জয়। বাংলাদেশ তো শুধুমাত্র ভারতের ১১জনের বিরুদ্ধে খেলেনি! খেলেছে দিল্লির বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে, খেলেছে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ভারতীয় দর্শকদের বিরুদ্ধে! ১৪৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় টিম টাইগার্স। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে দীপক চাহারের শিকার হন লিটন। ৪ বলে ৭ রান করে লোকেশ রাহুলের তালুবন্দী হন এই ওপেনার। লিটনের বিদায়ের পর অভিষিক্ত নাঈম শেখ আর সৌম্য মিলে ৪৬ রানের জুটি গড়েন।
ধীর গতিতে ব্যাটিং করতে থাকা নাঈম ২৮ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২৬ রান করে লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালের কাছে উইকেট দেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে মুশফিক- সৌম্য মিলে ৬০ রানের জুটি গড়েন। সৌম্য ১ চার ও ২ ছয়ে ৩৫ বলে ৩৯ রান করে খলিল আহমেদের স্লোয়ারে বোল্ড হন। ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকের কথাটা আলাদা করে বলতেই হয়! কারণ তাঁর ওপর ডিপেন্ড করেই যে ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছে।
মুশফিক ব্যাটিংয়ে নেমে চাহালের বলে রানই বের করতে পারছিলেন না। ঐ সময়ে মুশফিকের বিপক্ষে একটি জোড়ালো এলবিডব্লিউয়ের আবেদন উঠেছিল। আম্পায়ার আউট দেননি, ভারতও রিভিউ নেয়নি। তারপর জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখা গেছে রিভিউ নিলেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হতো মুশফিককে। ভাগ্য সহায় থাকায় নিজের ৩৯ রানের সময় মুশফিক ডিপ মিড উইকেটে ক্রোনাল পান্ডিয়ার হাতে জীবন পান। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সৌম্য ফেরার পর ১৯ তম ওভারে বীরের বেশে খলিলকে ৪ বলে ৪ বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ বাঁচান মুশফিক। ৪৩ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৬০ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতেন তিনি। আর কাপ্তান মাহমুদউল্লাহ ৭ বলে ১৫ রান করে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন। দুই ভায়রার ফিনিশিংয়ে ৩ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের দাপুটে জয় পায় ডমিঙ্গো শিষ্যরা।
ভারতের হয়ে চাহার, খলিল ও চাহাল ১টি করে উইকেট নেন। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৪৮ রানের পুঁজি পায় স্বাগতিকরা। ভারতের হয়ে ৪১ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রান করেন শিখর ধাওয়ান। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রাহুল(১৫),আইয়ার (২২) ও পন্ত (২৭) রান করেন। এছাড়া ইনিংসের শেষদিকে পান্ডিয়া(১৫) ও সুন্দার (১৪) মিলে ১০ বলে ২৮ রানের জুটি গড়েন। তবে মজার ব্যাপার হলো তিন জন প্রফেশনাল পেস বোলার ও এক জন স্পিনার থাকা সত্বেও এ ম্যাচে দলপতি মাহমুদউল্লাহ মোট ৮ জন বোলার ব্যবহার করেন। কিন্তু এর সুফলও তিনি পান।
কারণ ভারতের মতো দলকে মধ্যে ১৫০ রানে আটকে ফেলা অতটা সহজও নয়। তাছাড়াও সাকিব তো দলে ছিলেন না।ভারতের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বেশি থাকায় অফ ব্রেক বোলার আফিফ, মোসাদ্দেক এমনকি মাহমুদউল্লাহ নিজেও হাত ঘুরিয়েছেন। ক্যারিয়ারের ২য় ম্যাচেই লেগ স্পিনার বিপ্লব রাহুল ও আইয়ারের উইকেট নিয়ে নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। বিপ্লব ৩ ওভারে ২২ রান দিয়েছেন। আফিফ কিপ্টে বোলিং করে ৩ ওভারে ১১ রান দিয়ে ১ উইকেট শিকার করেন। শফিউল ৪ ওভারে ৩৬ রান খরচায় নেন ২টি উইকেট।
ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনের ছিল টালমাটাল অবস্থা।এ পরিস্থিতিতে এই জয়টা যে খুব দরকার ছিল! ভারতের বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচ হলে হয়তো পাঠকরা তীরে এসে তরী ডুবানোর গল্প পড়ার আগাম প্রস্তুতি নিতে থাকেন! কারণ তিন বছর আগে ব্যাঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে ৩ বলে ২ রানের সমীকরণটা যে মিলাতে পারেনি মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু এবার আর আগের ভুল করেনি ওরা। ইতিহাস গড়েই ভারতকে টি-২০তে প্রথমবারের মতো হারিয়ে গৌরবগাঁথা লিখলো টাইগাররা।