ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
প্রাচীন ঐতিহ্যের খোঁজে ষাট গম্বুজ মসজিদে

শামিম ইমতিয়াজ: হঠাৎ করেই ঠিক করেছিলাম বাগেরহাট যাবো। আমরা ভবঘুরের দল। যে কোন সময় ইচ্ছে হলে আর পকেটে কিছু টাকা থাকলে হুট করে প্ল্যান করে বেরিয়ে পড়ি। সেবারের যাত্রা ঠিক হয়েছিল যাত্রার নির্দিষ্ট দিনের দু’দিন আগে। সে যাত্রায় দেখা গদখালীর ফুলের রাজ্যের কথা তো আপনারা জানেন। যশোর থেকে আমরা বাইকে রওনা হয়েছিলাম। দুটো বাইকে চার জন। সকাল ছয়টায় রওনা করে রাস্তায় এটা সেটা দেখতে দেখতে বাগেরহাট যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় দশটা বাজে। সরাসরি ষাট গম্বুজ মসজিদ।
যথারীতি আমাদের ইতিহাসবিদ রাতুলের কাছ থেকে শুনলাম ষাট গম্বুজ মসজিদের ইতিহাস। সজীব তখন ক্যামেরা নিয়ে খটাস খটাস ছবি তোলা শুরু করেছে। আর রাতুল বলছিলো, মসজিদে কোন শিলালিপি নেই বলে এর নির্মাণকাল স্পষ্ট জানা যায় না। তবে নির্মাণ শৈলী দেখে কোন সন্দেহ থাকে না যে এটি খান জাহান আলীর তৈরি। এবং এটি তৈরি হয়েছিল পনেরশ’ শতকে।
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু। মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ১১টি বিরাট আকারের দরজা আছে যার সবই খিলানযুক্ত। মাঝের দরজাটি সবচেয়ে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে আরও ৭টি করে দরজা। মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা, ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আজান দেবার ব্যবস্থা ছিল। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নাম আন্ধার কোঠা।

নামে ষাট গম্বুজ মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ আছে ৭৭ টি। এ ছাড়াও মিনারে আছে আরও চারটি গম্বুজ। সব মিলে গম্বুজের সংখ্যা ৮১ টি। এর মধ্যে ৭০ টি গম্বুজ গোলাকার। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মেহরাব আছে। মাঝের মেহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকাজ করা। এ মেহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মেহরাব আছে। মাঝের মেহরাবের ঠিক পরের জায়গায় উত্তর পাশে মেহরাবের জায়গায় ১টি ছোট দরজা আছে। ধারণা করা হয়, খান জাহান এই মসজিদটিকে নামাজ ছাড়াও দরবার হিসেবে ব্যবহার করতেন এবং এই দরজাটি ছিল দরবারের প্রবেশ পথ।
মসজিদটির তুঘলকী এবং জৌনপুরি নির্মাণশৈলী দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম, মুগ্ধ হবেন আপনারাও। সেই সঙ্গে ভেবে অবাক হবেন সুলতান নসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) আমলে খান আল-আজম উলুগ খানজাহান সুন্দরবনে ঘেঁষে কি করে খলিফাবাদ রাজ্য গড়ে তোলেন। যেখানে জলে কুমির ডাঙায় বাঘ সেখানে তিনি গড়ে তুললেন সমৃদ্ধ এক লোকালয়। আর বৈঠক করার জন্য একটি দরবার হল গড়ে তোলেন, যা পরে ষাট গম্বুজ মসজিদ হয়।
মসজিদের সামনে সুন্দর ফুলের কেয়ারি। বিশাল মসজিদের দিকে তাকিয়ে সেখানে খান জাহানকে কল্পনা করা যায়। মনে হয় মসজিদটি নির্মিত হচ্ছে। পাথর আসছে রাজমহল হতে। আর খান জাহান তদারক করছেন নির্মাণের। সে রকম একটা দৃশ্য কল্পনায় তৈরি করে আমি ফিরে আসছিলাম।

ফিরে যেতে যেতে জানিয়ে দেই বাগেরহাটের একাংশ জুড়ে সুন্দরবন। এ ছাড়াও দেখতে পারেন খান জাহানের সমাধি, দুবলার চোর ইত্যাদি। বাগেরহাটে অনেকেরই চিংড়ি ঘের আছে। কোথাও তৈরি হয় লবণ। এই সকলই দেখার মতো বিষয়। কখনও সময় করে ঘুরে আসুন।