বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
‘ফাগুন হাওয়ায়’ মুগ্ধতার বয়ান

মাহমুদুর রহমান: ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে কেবল একটি জাতি। বাংলা ভাষার গৌরব তাই পৃথিবী-জুড়ে। ভাষা আন্দোলন আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। সেই গর্বের বিষয় নিয়ে যখন সিনেমা তৈরি হয়, তখন সে সিনেমার প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। আর তাই সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে কলাকুশলী, নির্মাতার দিতে হয় আলাদা মনোযোগ।
তৌকির আহমেদ তার ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমায় কোন কমতি রাখেননি। ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক সিনেমাটি তৈরি হয়েছে টিটো রহমানের লেখা ‘বউ কথা কও’ গল্প অবলম্বনে। ছোট এক মফস্বল শহরে একই দিনে আগমন ঘটে এক হিন্দু ডাক্তার এবং তার নাতনী দীপ্তি এবং পুলিশের এক কর্মকর্তা জামশেদের। সেখানে দীপ্তির সাথে পরিচয় হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাসিরের। বলা যায়, দেখা মাত্রই তারা প্রেমে পড়ে।
দীপ্তি আর নাসিরের প্রেমের সাথে সমান্তরালে চলে ভাষা আন্দোলন এবং সেই সংক্রান্ত ঘটনাবলী। মায়ের ভাষাকে প্রতিস্থাপন করার যে চেষ্টা পাকিস্তানি বাহিনী করেছিল, তার স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে জামশেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। একদিকে ছোট সেই শহরে জামশেদ যখন উর্দু প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, সে সময় নাসির তার বন্ধুদের নিয়ে মঞ্চস্থ করতে চাইছে ‘নীলদর্পণ’।
একটা ভালো সিনেমা তৈরি করতে হলে অসাধারণ গল্প হতে হবে, কিংবা সুন্দর জায়গায় সুন্দরী নায়িকার গান থাকতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অতি সাধারণ একটা গল্পকে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারলেই চমৎকার কিছু পাওয়া সম্ভব। এই সিনেমায় তৌকির আহমেদ সফল ভাবে কাজটি করেছেন। বাঙালীর ভাষা আন্দোলনের ছড়িয়ে পড়া এবং তার ব্যপ্তি কতদূর পৌঁছেছিল, সরাসরি সেদিকে না গিয়েও সে সত্য তিনি তুলে ধরেছেন।
অভিনয় শিল্পীরা চমৎকার অভিনয় করেছেন। নাসির চরিত্রে সিয়ামের অভিনয় দারুণ ছিল। নিজের গুণ প্রমাণ করেছেন তিনি। তিশাকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তেমনি অনবদ্য আবুল হায়াত। উর্দুভাষী হিসেবে যশপালকে সিনেমায় নেওয়া পরিচালকের কুশলতার পরিচয়। কেননা এখন পর্যন্ত বাংলা সিনেমায় ভুলভাল উর্দু উচ্চারণে পাকিস্তানি সৈন্য দেখেই আমরা অভ্যস্ত। যশপালও দারুণ অভিনয় করেছেন। রওনক হাসান, ফজলুর রহমান বাবু নিজের জায়গায় অনবদ্য।
সিনেমাটোগ্রাফিও একই রকম ভাবে ভালো ছিল। একরাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে। বেশ দারুণ কিছু লং শট, আর সেই সাথে লোকেশনগুলোও ছিল মনোমুগ্ধকর। তবে ট্রেইলারের মতো সিনেমাতেও এডিটিং নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্ট। কাজটা আরো ভালো হতে পারতো। কিছু জায়গায় ভালো এডিটিং সিনেমাটাকে নিখুঁত করে তুলতো।
বাংলাদেশে এখন হাওয়ায় ফাগুন ভাসছে। কিন্তু ’৫২ তে ভেসেছিল বারুদের গন্ধ। পথে জমেছিল রক্ত। আমার ভাইয়ের রক্ত। সে স্মৃতি আর ভাষার জন্য ভালোবাসা যেন নতুন করে তুলে আনলো ‘ফাগুন হাওয়ায়’। এ যাত্রা হোক ‘জয়যাত্রা’।