
এস.কে. শাওন: উপমহাদেশের দলগুলোর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই দর্শকদের মাঝে বাড়তি উত্তেজনা বিরাজ করবে,এটাই স্বাভাবিক। এমনকি পাক-ভারত লড়াই দেখার জন্য উদগ্রীব থাকে গোটা বিশ্ব। তবে সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশও এখন ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। কারণ বিশ্বের কোন দলই এখন বাংলাদেশকে দুর্বল প্রতিপক্ষ হিসেবে নেয় না। বাংলাদেশ দল এখন বিশ্বের যেকোন দলের বিপক্ষে সমীহ জাগানো শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ওডিআইতে ভারতের বিপক্ষে কয়েকবারই জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্ত টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে টি-২০ তে কখনও বিজয়ের মালা পড়েনি টাইগাররা! তবে কয়েকটি ম্যাচে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও টিম বাংলাদেশকে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে বাংলাদেশ বনাম ভারতের টি-২০ ম্যাচগুলোর আদ্যোপান্ত।
৬ জুন, ২০০৯: ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামে প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয় দু’দল। ভারত টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে টপঅর্ডারদের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ১৮০ রানের দাপুটে স্কোর দাঁড় করায়। ওপেনিং ব্যাটসম্যান গৌতম গম্ভীর ৫০ রান করে আউট হলে রোহিত শর্মা(৩৬), ধোনী (২৬), যুবরাজ(৪১) ধারাবাহিকভাবে রানের চাকা সচল রাখেন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৫৫ রানে ইনিংস থামে টাইগারদের। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। ভারতের ২৫ রানের সহজ জয়ে ৪ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হন প্রাগান ওজা।
২৮ মার্চ, ২০১৪: দ্বিতীয়বারও টি-২০ বিশ্বকাপেই মুখোমুখি হয় দু’দল। মিরপুরে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট খুইয়ে ১৩৮ রানের নড়বড়ে স্কোর গড়ে টিম টাইগার্স। সেদিন আনামুল হক (৪৪) ও রিয়াদ(৩৩*) ছাড়া বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানরা ফ্লপ ছিলেন। সহজ রান তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মা ও কোহলির জোড়া ফিফটিতে ভর করেমাত্র ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌছে যায় ভারত। কিন্তু ৪ ওভারে মাত্র ১৫রান দিয়ে ২ উইকেট পাওয়ায় ম্যাচসেরা হন অশ্বিন।
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬: মিরপুরে এশিয়া কাপের এ ম্যাচটিতে টসে হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে রোহিত শর্মার ৮৩ রান ও পান্ডিয়ার ৩১ রানের ওপর ভর করে ১৬৬ রান সংগ্রহ করে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে মাত্র ১২১ রানে ইনিংস থামে বাংলাদেশের। টাইগারদের হয়ে উল্লেখযোগ্য রান করেছেন শুধুমাত্র সাব্বির রহমান(৪৪)। অর্থাৎ হেসে খেলে ৪৫ রানে ম্যাচ জিতে টিম ইন্ডিয়া। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন রোহিত শর্মা।
৬ মার্চ, ২০১৬: এশিয়া কাপের একই আসরে দুইবার সাক্ষাত হয় দু’দলের। কিন্তু তারপরও জয় অধরা রয়ে যায় বাংলাদেশের। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচ গড়ায় ১৫ ওভারে। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ উইকেটে ১২০ রান করে টিম বাংলাদেশ।লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৭ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জিতে ভারত। বাংলাদেশের হয়ে রিয়াদ(৩৩) ও সাব্বির (৩২) উল্লেখযোগ্য রান করেন। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৬০ রান করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেন শিখর ধাওয়ান।
২৩ মার্চ, ২০১৬: টি -২০ বিশ্বকাপের এ ম্যাচটিতে ১ রানের নাটকীয় জয় পায় ভারত। ব্যাঙ্গালোরে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ১৪৬ রান সংগ্রহ করে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৪৫ রানে ইনিংস থামে বাংলাদেশের। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটিতে শেষ ওভারে ৩ বলে ২ রান দরকার ছিল টাইগারদের। কিন্ত মুশফিক- মাহমুদউল্লার ভুলে শেষ পর্যন্ত ভারত জয় ছিনিয়ে নেয়। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন তামিম। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকারে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হন অশ্বিন।
৮ মার্চ, ২০১৮: শ্রীলংকার কলম্বোতে নিদাহাস ট্রফির এ ম্যাচটিতে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে মাত্র ১৩৯ রান করে বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে টাইগারদের হয়ে লিটন(৩৪) আর সাব্বির(৩০) ছাড়া বাকিরা তেমন আলো ছড়াতে পারেনি। ১৪০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৮ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের সহজ জয় পায় ভারত। ৩২ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন ভারতের বিজয় শংকর।
১৫ মার্চ, ২০১৮: কলম্বোতে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মা (৮৯) ও সুরেশ রায়নার(৪৭) অসাধারণ পারফরম্যান্সে ১৭৬ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ভারত। লম্বা টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১৫৯ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।বাংলাদেশের হয়ে মুশফিক(৭২) একাই লড়াই চালিয়ে যান। কিন্ত শেষ পর্যন্ত ভারত ১৭ রানে ম্যাচ জিতে নেয়। দাপুটে ব্যাটিং পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরা হন রোহিত শর্মা।
১৮ মার্চ, ২০১৮: নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেও কপাল পুড়ে টাইগারদের। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ১৬৬ রান সংগ্রহ করে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন সাব্বির রহমান। শাসরুদ্ধকর এই ম্যাচটিতে শেষ বলে ৫ রান লাগতো ভারতের। আর সেই বলেই ছক্কা মেরে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন দিনেশ কার্তিক। ফলস্বরূপ নিদাহাস ট্রফির শিরোপা জিতে নেয় ভারত। ৮ বলে ৩ ছক্কা ও দুটি চারের মারে ২৯ রান করে ম্যাচসেরা হন কার্তিক।