খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের যত ‘অদ্ভুত’ ঘটনা

এস.কে. শাওন: বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় খেলার মধ্যে ক্রিকেট অন্যতম। স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য খেলাগুলোর মতো ক্রিকেটও অনেক অদ্ভুতুড়ে ঘটনার জন্ম দিয়েছে। অদ্ভুত ঘটনার গল্প কম নেই ক্রিকেটে। চলমান বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আজকের প্রতিবেদনে থাকছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ইতিহাসের কয়েকটি ‘অদ্ভুত’ ঘটনা।
কোন ম্যাচ না খেলেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন: সুনীল ওয়ালসন। পাঠকদের কাছে নামটা অপরিচিত মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনদিন মাঠে নামার সুযোগ পাননি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৫.৩৫ গড়ে ২১২ উইকেট নিয়ে বেশ সম্ভাবনা জাগিয়েই ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারতের জাতীয় দলের স্কোয়াডে জায়গা করে নেন এই বাঁ হাতি পেসার। কিন্তু কপিল দেব ও বলবিন্দর সিংদের মতো পেসারের কারণে একাদশে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জন্য। বিশ্বকাপ প্রস্ততি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো বোলিং করার পরও বিশ্বকাপ একাদশে সুযোগ মেলেনি সুনীলের। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয় করে নেয় ভারত। অথচ আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচ না খেলেই বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের তালিকায় নাম লেখান তিনি। আশ্চর্যজনক বিষয়, বিশ্বকাপের পরেও ভারতের হয়ে খেলার জন্য ভাগ্যের শিঁকে ছিড়েনি সুনীলের।সেই অভিমান থেকেই কিনা ১৯৮৭ সালে পেশাদার ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। তবে সুনীল ওয়ালসনের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না খেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার এই ‘অদ্ভুত’ রেকর্ড ক্রিকেট ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি নেই।
ইডেন গার্ডেনে দাঙ্গা: ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারত ও শ্রীলংকার মধ্যেকার সেমিফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় কোলকাতার ইডেন গার্ডেনে। শ্রীলংকা প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ভারতকে ২৫২ রানের লক্ষ্য ছুৃঁড়ে দেয়। সেই টার্গেট তাড়া করতে নেমে শ্রীলংকার বোলিং আক্রমণে কাবু হয়ে মাত্র ১২০ রানেই ৮ উইকেট হারায় ভারত। দর্শকরা ভারতের এই নির্মম পরাজয় মেনে নিতে না পেরে গ্যালারি থেকে বোতল ছুঁড়ে মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ জনতা গ্যালারিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। সেজন্য ১৫ মিনিট ম্যাচ রেফারি কর্তৃক খেলা বন্ধ রাখলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি আর মাঠে গড়ায়নি। নিরাপত্তা কর্মীরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে শ্রীলংকাকে জয়ী দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল।
অন্ধকারে ফাইনাল: ২০০৭ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ফাইনালে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলংকা। কেনসিংটন ওভালে ম্যাচটি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বেরসিক বৃষ্টির হানা। বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর ওভার কমিয়ে খেলা নামিয়ে আনা হয় ৩৮ ওভারে। এ্যাডাম গিলক্রিস্টের ব্যাটিং তান্ডবে অজিরা দাঁড় করায় ২৮১ রানের বিশাল সংগ্রহ। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলংকা ব্যাটিংয়ে নামার পর পুরো আকাশে আঁধার নেমে আসে। মাঠে ছিল না কোন ফ্লাড লাইটের ব্যবস্থা এবং আইসিসিও কোন রিজার্ভ ডে রাখেনি। দুই দলপতি পন্টিং এবং জয়াবর্ধনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় স্পিন বোলিং করে খেলা চালিয়ে যাওয়ার। তারপরও বল দেখতে সমস্যা হচ্ছিল লংকানদের। মাত্র তিন ওভার খেলা মাঠে গড়ানোর পর লংকানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯ রান। পরবর্তীতে আলো স্বল্পতার জন্য খেলা বন্ধ করে ডার্কওয়াথ লুইস পদ্ধতিতে অজিদের ৫৩ রানে জয়ী ঘোষণা করা হয়।কিন্ত ফাইনালে পুরো ঘটনার জন্য তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় আইসিসিকে।
চার ম্যাচ খেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন: ১৯৭৯ বিশ্বকাপে মাত্র চার ম্যাচ খেলেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখন ক্যারিবিয়ানদের গ্রুপে ছিল নিউজিল্যান্ড,শ্রীলংকা,ভারত। ৯ জুন নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতকে সহজেই পরাজিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৩জুন বৃষ্টির কারণে শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচটি মাঠে না গড়ালে দু’দল সমান পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নেয়।গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালের টিকিট কাঁটে ক্যারিবিয়ানরা।সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে। ফাইনালে ভিভ রিচার্ডস (১৩৮*) ও কলিস কিংয়ের (৮৬) ব্যাটিং নৈপুণ্যে ইংলিশদের ৯২ রানের বিরাট ব্যবধানে হারিয়ে অপরাজিত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাত্র ৪ ম্যাচ অর্থাৎ সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড এটাই।
শেন ওয়ার্নের নিষেধাজ্ঞা: সম্ভবত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সবচেয়ে হাস্যকর কাহিনী ছিল শেন ওয়ার্নের নিষেধাজ্ঞা। ২০০৩ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া মূল দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ওয়ার্ন। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার মাত্র একদিন আগে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন কিংবদন্তী এই লেগ স্পিনার। তবে তার ভাষ্যমতে,সুশ্রীর জন্য মায়ের দেওয়া একটি ঔষধ তিনি সেবন করেন। সেই ঔষধে ডোপ পজেটিভ উপাদান থাকার কথা তিনি জানতেন না। সেজন্য ওয়ার্নকে ১ বছরের নিষেধাজ্ঞা পেতে হয়। যদিওবা তাকে ছাড়াই ২০০৩ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া।