ক্রিকেটখেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
বিশ্বজয়ের নেপথ্য নায়ক রিচার্ড স্টনিয়ার

আরিফুল আলম জুয়েল: সবাই খুব নাচানাচি করছেন, অবশ্য করারই কথা। যেন তেন কথা তো নয়, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বলে কথা! ফলশ্রুতিতে কেউ বা গাচ্ছেন সাম্যের গান, কেউ বা বিজয়ের গান, কেউ বা নিজের গান, কেউ বা বিসিবি’র গান! তবে আজ আমি গাইবো এক ভাইয়ের গান! ভাই কেন বলছি, সেটা লেখার শেষে পাবেন!
খেলা শেষ হওয়ার পর কেউ কেউ আবার পরামর্শ ও দিচ্ছেন বিসিবিকে, যেন তাদেরকে বেশি বেশি নগদ অর্থ সম্পদ এখনি না দেয়া হয়! বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়ার সুযোগটাও যেন এখনি না দেয়া হয়, টাকার বান্ডেল তাদেরকে না দিয়ে বরং তাদের পেছনে খরচ করার কথা কেউ কেউ বলছেন। বলছেন উচ্চতর ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করার কথা, স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং ট্রেনিংয়ের কথা বলছেন, বলছেন মনোসংযোগ বাড়ানোর কথা, ফ্ল্যাট-গাড়ি না দেয়ার কথা ও বলছেন।
কারন, এখন এতকিছু দিয়ে দিলে খেলার প্রতি মনোযোগ কমে যাবে, নগদ অর্থকড়ির দিকে সবার লোভ চলে যাবে, সুন্দর ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে। এবং নি:সন্দেহে বাংলাদেশ হারাবে তাদের ভবিষ্যত ক্রিকেট খেলোয়াড়দের!
কিন্তু এই যে এত উচ্ছ্বাস বা নাচানাচির সুযোগ যিনি করে দিয়েছেন, সেই সাদা চামড়ার মানুষটিকে আমরা ক’জনই বা চিনি!
আপনি চিনেন লোকটিকে! এতদিন মিডিয়া কাভারেজ পাননি, এখন তিনি অবশ্য কয়েকটি জায়গায় বেশ ভাল মিডিয়া কাভারেজ পেয়েছেন, তারপর ও অনেকেই জানি না কি করেছেন তিনি বা কি অক্লান্ত পরিশ্রম করে দলটিকে গড়ে তুলেছেন গত দু’বছর ধরে! দেখি দু’একটা কথা বলার চেষ্টা করবো সাদা চামড়ার সে মানুষটিকে নিয়ে মানে সে ভাইকে নিয়ে!
নাম তার রিচার্ড স্টনিয়ার, বাংলাদেশ যুব দলের স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ।
খেয়াল করলে দেখবেন, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রতিটি ম্যাচেই বহুবার ক্যামেরা চলে যাচ্ছিল রিচার্ড স্টনিয়ার দিকে।
বাইরে থেকে ক্রমাগত উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছিলেন মানুষটা। বাউন্ডারি লাইনের দড়ির বাইরে দাড়িয়ে অস্থির হয়েছেন, পাগলামি করেছেন, ঠিকই দলের খেলোয়াড়দের প্রতি ভালবাসাটা প্রকাশ করেছেন রোপের বাইরে দাড়িয়ে।
কি চনমনে আবেগ আমাদের রিচার্ডের! ফাইনাল খেলার দিকে একটু মনোযোগ দেই, ফিরে যাই একটু ৪০ ওভার খেলা শেষ হওয়ার ঠিক পরপর! ইমন আউট হয়ে ফিরে গেছেন কিছুক্ষণ আগে, জয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্বটা তখনও ১৬ রানের।
হাতে ওভার প্রচুর, কিন্ত উইকেট পড়লেই বিপদ!
ঠিক এরকম সময় টিভি ক্যামেরাটা চলে গেল আমাদের রিচার্ড স্টনিয়ার উপর, সীমানা দড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে উইকেটে থাকা আকবর আর রাকিবুলের উদ্দেশ্যে ভাঙা বাংলায় চিৎকার করে রিচার্ড বলছে- ‘শেষ কোড়ে আশো!’ তার মানে দু’জনকে ধৈর্য্য ধরে খেলে খেলাটা শেষ করে আসতে বলছে সে!
তাঁর প্রিয় ছাত্রদের কাছ থেকে বাংলা কিছু শব্দও শিখেছে স্টনিয়ার, এরইমধ্যে একটা হচ্ছে ‘শেষ কোড়ে আশো’, যেটার সফল প্রয়োগ তিনি ঘটিয়েছেন ফাইনালে। আরেকটা শব্দ তিনি শিখেছেন- ‘কীড়ে বাই’ (কীরে ভাই), কোন কিছু মনমত না হলেই শব্দ দুটো ব্যবহার করেন স্টনিয়ার। গত বছরটি তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন তিনি দলটিকে, নিজে কি পরিশ্রমটাই না করেছেন!
দায়িত্ব পাবার পরে স্টনিয়ার বলেছিলেন, এই দলটাকে শারীরিকভাবে তো বটেই, মানসিকভাবেও পরিপক্ক করে তুলবেন তিনি। সেই মিশনে স্টোনিয়ার কতটা সফল, সেটার সাক্ষ্য দেবে আকবর আলীর ঠান্ডা মাথার ব্যাটিং, রাকিবুলের দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা, কিংবা আইসিসির অফিসিয়াল পেজে নাবিলের দুর্দান্ত ইন্টারভিউটা!
দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ফেবারিটের ছোট তালিকায় কিন্তু বাংলাদেশ ছিল না। তবে সেমিফাইনালে ঠিকই নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারির ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছিল তখন গতবারের শিরোপা জয়ী দল ভারত। ফাইনাল নিয়ে রিচার্ড স্টনিয়ার বলেছিলেন- ‘ছেলেরা স্বপ্ন দেখছে, প্রচুর পরিশ্রম করেছে, তাদের স্বপ্ন সত্যি হবে, আমি স্বপ্ন দেখি, আমার স্বপ্নও সত্যি হবে, ফাইনালের শিরোপা নিয়েই ঘরে ফিরবো’! ঠিকই কথা রেখেছেন সাদা চামড়ার মানুষ, আমাদের রিচার্ড স্টনিয়ার!
রিচার্ড তার ছেলেদের (খেলোয়াড়দের) উদ্দেশ্যে বলেন- ‘তারা অন্য কোচদের স্যার ডাকে। আমাকে বলে ভাই। তার মানে তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে’! জ্বি, আমরাও আপনাকে অনেক ভালবাসি, রিচার্ড ভাই!