ট্রেন্ডিং খবরপ্রযুক্তিহোমপেজ স্লাইড ছবি
ব্ল্যাকহোল নিয়ে কেন এত কৌতূহল?

মিজানুর রহমান টিপু: প্রথমবারের মতো ব্ল্যাকহোলের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। বুধবার ইভেন্ট হরাইজোন টেলিস্কোপ এস্ট্রোনোমার্স এই ছবি প্রকাশ করে। এর ফলে বিশ্ববাসী প্রথমবারের মতো ব্ল্যাকহোলের প্রকৃত ছবি দেখতে পেলো।
এই ছবির নেপথ্যে আছে কেটি বোওম্যান। কেটি বোওম্যান এবং তার দলের তৈরি এক জটিল অ্যালগরিদম দিয়েই এই ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। ব্ল্যাকহোলের ছবি একবারে তোলা আমাদের বর্তমান প্রযুক্তিতে প্রায় অসম্ভব। তাই প্রচুর ছবি একসাথে করে ডট এর সাথে ডট মিলিয়ে মিলিয়ে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। ৩ বছর আগে কেটি, ম্যাসাচ্যুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় রিসার্চারদের একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এই অ্যালগরিদম তৈরি করে যা বর্তমান পর্যায়ে এসে ব্ল্যাক হোলের এই ছবি তুলতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর ৮টি জায়গায় বসানো টেলিস্কোপের সমন্বয়, “ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ” এর সাহায্যে অসংখ্য ছবির ডাটা সংগ্রহ করা হয়। কেটি বোওম্যান ও তার দলের সাহায্যেই এই অসংখ্য ছবির সমন্বয়ে আমরা আজকের ছবিটি দেখতে পাই।
উল্লেখ্য, গত ৫০ বছর ধরে জ্যোতি বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোলের ছবি তোলার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এএইচটি এই প্রথম সরাসরি ব্ল্যাকহোলের ছবি ধারণ করেছে।
মহাকাশের এক অনন্ত বিস্ময় এই ব্ল্যাকহোল। ব্ল্যাকহোলকে কৃষ্ণবিবর, কৃষ্ণগহ্বর ইত্যাদি বলা হয়। জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুসারে, কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের এমন একটি বিশেষ স্থান যেখান থেকে কোন কিছু, এমনকি আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না। মহাকাশীয় এই দানবের কাছে পথ হারায় আলোকতরঙ্গ। মহাবিশ্বের এমন কিছু তারকা বা নক্ষত্র আছে, যারা এমন শক্তিশালী মহাকর্ষ বল তৈরি করে যে এটি তার কাছাকাছি চলে আসা যেকোন বস্তুকে একেবারে টেনে নিয়ে যায়, হোক তা কোন গ্রহ, ধুমকেতু বা স্পেসক্রাফট, তা-ই ব্ল্যাকহোল।
এই তারকাদের অস্বাভাবিক আকার, ভর ও ঘনত্ব থাকে, আর এর জন্যে এই সব তারকা থেকে নির্গত আলো বাইরে আসতে পারে না। সহজ ভাষায় বলতে গেলে- যখন একটি তারকার জীবনকাল শেষ হয়ে যায়, সেই মুহূর্তে তার অভিকর্ষ শক্তি এতই প্রবল হয় যে আলো ওখান থেকে বের হতে পারে না। আর এই ঘটনা তখনই ঘটে যখন একটি তারকার জীবনকাল অর্থাৎ তার নির্দিষ্ট জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। তারকাটি পরিণত হয় ব্ল্যাকহোলে। এভাবেই একটি ব্ল্যাকহোলের সৃষ্টি হয়। ব্ল্যাকহোলে রয়েছে শক্তিশালী মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র। প্রত্যেক ব্ল্যাকহোলের চারদিকে একটি সীমা আছে যেখানে একবার ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। এইভাবেই মহাকাশের মহাবিস্ময় হয়ে বেঁচে আছে ব্ল্যাকহোল। একে নিয়েই চলছে বিজ্ঞানের নিরন্তর চর্চা। আলোকে গিলে খাওয়া এই মহাকাশীয় দানবকে নিয়ে তাই আজও কৌতূহলের শেষ নেই।