বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
ভিঞ্চি দা: একজন শিল্পী এবং সিরিয়াল কিলারের গল্প

মাহমুদুর রহমান: আমাদের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে নানা রকম লোক। তাদের কেউ শিল্পী, আবার কেউ অপরাধী। শিল্পের সঙ্গে অপরাধকে মিলিয়ে ফেললে একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতে পারে। এ বিষয়ে অনেক গল্প উপন্যাস লেখা হয়েছে, অনেক সিনেমা হয়েছে দেশে বিদেশে। সে রকমই একটা গল্প নিয়ে সিনেমা তৈরি করলেন সৃজিত। সিনেমায় দুটো মূল চরিত্র। একজন মেকাপ আর্টিস্ট, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ভক্ত বলে সিনেমা পাড়ায় তাঁকে সবাই ভিঞ্চি দা বলে ডাকে। সাধারণ ফরমায়েসি মেকাপ আর্টিস্ট সে নয়। কাজটাকে শিল্প বলে মানে এবং সেভাবেই কাজ করে। অন্যজন আদী বোস। ছোটবেলায় একটা খুন করে জেলে যায় সে। ইচ্ছে ছিল আইনজীবী হওয়ার কিন্তু সে আশা পূরণ হয় না। বরং হয়ে যায় সিরিয়াল কিলার।
গল্পের এক পর্যায়ে আদীর সঙ্গে পরিচয় হয় ভিঞ্চির এবং সেখান থেকে গল্প মোড় নেয়। সাইকোপ্যাথ আদী চায় সমাজের নানা অপরাধীর শাস্তি দিতে। সেজন্য সে ভিঞ্চির মেকাপের সাহায্য নেয়। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে সে নিজেই একেকটা ভয়ানক অপরাধ করে ফেলে। ভিঞ্চি প্রথমে জানতো না আদীর উদ্দেশ্য কিন্তু জানার পর সে সরে আসতে চাইলেও আদীর ষড়যন্ত্রে তা সম্ভব হয় না। আদী চাইছে সমাজের বেশকিছু অপরাধীকে শাস্তি দিতে। তাদের মধ্যে একজন ফ্রড করে মানুষের টাকা লুঠ করে নেয়। একজন গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ মারে। আরেকজন বিকৃত রুচির ধর্ষক। সকলেই সমাজের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু তাদের শাস্তি দিতে গিয়ে আদী যে পথ বেছে নেয় তা ঠিক কি ভুল এ নিয়ে ভিঞ্চির মতো আমাদের মনেও দ্বন্দ্ব আসে। এক পর্যায়ে বোঝা যায় আসলে আদীর মধ্যে হত্যার একটা নেশা আছে। সেটা বন্ধ করতে না পারলে সেও সমাজের ক্ষতির কারন হবে। কিন্তু সেটা কেমন করে করবে ভিঞ্চি? সে তো খুনি নয়, শিল্পী।
বাইশে শ্রাবণ, চতুষ্কোণের সৃজিত আবার ফিরে এলেন এই সিনেমার মাধ্যমে। একে ঠিক থ্রিলার বলা যায় না। অন্তত যে দুটো সিনেমার নাম করলাম, থ্রিলার অর্থাৎ কাহিনীর বাঁক ধরে রাখার জন্য সেগুলোর চেয়ে এটি কম নম্বর পাবে। কিন্তু মূলত সৃজিত কোন ক্লাইম্যাক্সে এমনিই যেতে চাননি। বাইশে শ্রাবণ বা চতুষ্কোণের মতো এই সিনেমা অনেক চরিত্র অনেক সাবপ্লট নিয়েও তৈরি না। এখানে কেবল ভিঞ্চি আর আদীর গল্প বলেছেন তিনি। সে গল্প এসেছে চমৎকার ভাবে।
সাথে গল্পের লেখক আর সিনেমার পরিচালক তুলে এনেছেন একজন মেকাপ আর্টিস্টের প্রয়োজনীয়তা। সিনেমায় তার অবদান যে কতটুকু তা ভিঞ্চির মাধ্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। ভিঞ্চি চরিত্রে রুদ্রনীল দারুণ অভিনয় করেছেন।
অনেকদিন পর তাঁকে তার ক্যালিবারের একটা চরিত্র দেওয়া হয়েছে। ভালো করেছেন আদী চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তী। রুদ্র আর ঋত্বিক, দুই জাত অভিনেতাকে এক সঙ্গে দেখা একটা ভালো অভিজ্ঞতা হবে দর্শকের জন্য। সেই সঙ্গে সোহিনীর অভিনয় ছিল বরাবরের মতোই ভালো। তবে পুলিশ অফিসার পোদ্দারকে আরেকটু সামনে আনা সম্ভব ছিল। অনির্বাণের মতো একজন পাকা অভিনেতাকে একদম একপাশে ফেলে রাখা উচিত হয়নি।
গল্প, চিত্রনাট্য, পরিচালনার দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে পুরনো সৃজিত অনেকটাই ফিরে এসেছেন এই সিনেমায়। দেখা যাক, সামনে কি আছে।