ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
মনের প্রশান্তির খোঁজে মনপুরা দ্বীপে

এনামুল হক: ভোলা জেলার অন্তর্গত একটি বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা। ভোলা দ্বীপ থেকে প্রায় ৮০ কিঃ মিঃ দুরত্বে সাগরের বুকে নয়নাভিরাম আরেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। চারটি ইউনিয়ন নিয়ে মনপুরা উপজেলা। সুন্দরের দিক থেকে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য একটি আকর্ষনীয় স্থান হলো মনপুরা। বলা যায় সুন্দরের দিক থেকে একটি আদর্শ উপজেলার নাম মনপুরা।
তিন বন্ধু আর দুই ছোট ভাই মিলে ঠিক করেছিলাম ভোলা যাবো। বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা ভোলা। চট্টগ্রামের এ কে খান মোড় থেকে শাহী বাসে করে রওনা দিলাম লক্ষীপুরের মজু চৌধুরী ঘাট। ভাড়া নিয়েছিলো ৩৫০ টাকা। সময় লেগেছিলো প্রায় চার ঘন্টা। সেখান থেকে পারিজাত জাহাজে করে ভোলার ইলিশা ঘাটে। জাহাজ ভাড়া নিয়েছিলো ১৫০ টাকা। সেখান থেকে চলে গেলাম ভোলার সার্কিট হাউজে। পরিচিত এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সেখানে উঠেছিলাম। পরের দিন শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে চরফ্যাশন ঘুরতে গেলাম। কিন্তু চরফ্যাশনে তেমন ঘুরার মতো জায়গা না পেয়ে মনস্থির করলাম মনপুরা যাবো। তারপর জুম্মার নামাজ পড়ে চলে গেলাম ভোলার তজুমদ্দিন ঘাটে। সেখান থেকে মনপুরার সী-ট্রাক ছাড়ে। দুপুরের খাবার টা তজুমদ্দিন ঘাটে সেড়েই উঠে গেলাম সী-ট্রাকে। দুপুর ৩.২০ মিনিটে সী-ট্রাকটি ছাড়ে। ভাড়া নিয়েছিলো ১২০ টাকা জনপ্রতি। প্রায় দু ঘন্টা পর পৌছালাম মনপুরা দ্বীপে।


থাকার জন্য মনপুরা দ্বীপে তিনটি (সরকারি ডাকবাংলো, প্রেসক্লাব বাংলো, কারিতাস বাংলো) ডাকবাংলো আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সরকারি ডাকবাংলোতে স্বল্প মূল্যে থাকতে পারবেন। বাকি গুলোতে গিয়েই থাকার ব্যবস্থা করতে পারবেন। ডাক বাংলোতে থাকতে খরচ পড়বে ২০০-৩০০ টাকার মত। তাছাড়া বাজারের পাশে ১০০/২০০ টাকা দিয়ে থাকার জন্য রুম পাবেন।আমরা উঠেছিলাম মনপুরার ডাকবাংলোতে। ডাকবাংলোতে রাত কাটিয়ে সকালের নাস্তা সেরে আবার বাইকে করে বের হলাম মনপুরার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিছুক্ষণ পর পর মনপুরাতে রাস্তার দুপাশে মাছের প্রজেক্ট চোখে পড়বে। ছোট বড় ১০টি চর ও বনবিভাগের সহায়তায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব। বাইক নিয়ে ঘুরার সময় দেখবেন মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজি বিশাল মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। মনপুরার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস মাছ শিকার করা। ছোট ছোট ট্রলার নিয়ে সাগরে গিয়ে মাছ শিকার করে তারা। মনপুরা ছবিতে চঞ্চল চৌধুরীকে যেখানে নির্বাসনে দিয়েছিলো জায়গাটি দেখতে গিয়েছিলাম যদিও তা এখন নদীতে বিলীন। টানা তিন ঘন্টা বাইক নিয়ে ঘুরার পর ঘাটে আসলাম ভোলার জাহাজ ধরার জন্য। দুপুরের খাবার টা ঘাটেই সেরে নিলাম। ঘাটের খাবারের মান তেমন ভালো ছিলো না। তাই ঘাটে আসার আগে বাজার থেকে দুপুরের খাবার টা খেয়ে আসা শ্রেয়। তারপর দুপুর ১.৩০ মিনিটে হাতিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকার শিপে উঠে ভোলাতে চলে আসলাম। জনপ্রতি ১২০ টাকা ভাড়া নিয়েছিলো।

যদিও আমরা বৃষ্টির মৌসুমে মনপুরাতে গিয়েছিলাম। তবে মনপুরা ঘুরার আদর্শ সময় হচ্ছে শীতকাল।এই ট্যুরের সবচেয়ে বড় হতাশার বিষয় ছিলো নিঝুম দ্বীপ যেতে না পারা। ট্রলারে মনপুরা থেকে নিঝুম দ্বীপ যেতে সময় লাগে মাত্র ১.৩০ ঘন্টা। যারা যাবেন নিঝুম দ্বীপ সহ ঘুরে আসবেন।যেভাবে যাবেন: ঢাকা কিংবা বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে তজুমদ্দিন ঘাটের সি-ট্রাকে মনপুরায় যাওয়া যায়। সি-ট্রাকটি তজুমদ্দিন থেকে ছাড়ে প্রতিদিন বিকাল ৩টায় আর মনপুরা থেকে ছাড়ে সকাল ১০টায়।
অবশ্য করণীয়: দেশটাকে নিজের ঘর মনে করে যেখানে সেখানে প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় দ্রব্য ফেলবেন না।