
সাকিব রহমান সিদ্দিকী শুভ: উইকিপিডিয়া মতে, কোন স্থানে অবস্থিত বস্তু সমূহের অবস্থান এবং সম্পর্কের দৃষ্টিগ্রাহ্য সাধারণ প্রকাশ হচ্ছে মানচিত্র। ইংরেজি map শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হল মানচিত্র। আগেকার দিনে কাপড়ের উপর ম্যাপ আঁকা হতো তাই ল্যাটিন শব্দ mappa, যার অর্থ হল কাপড়ের টুকরো, সেখান থেকেই map শব্দের উৎপত্তি। পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গা হিসেবে মানচিত্র হল নির্দিষ্ট স্কেলে অক্ষরেখা বা দ্রাঘিমারেখাসহ কোনো সমতল ক্ষেত্রের উপর পৃথিবীর বা এর অংশবিশেষের অঙ্কিত প্রতিরূপ। এই প্রতিরূপে সহজেই বর্ণনা করা যেতে পারে একটি স্থানের প্রাকৃতিক, মানবিক অনেক তথ্যই। যেসব তথ্য হয়ত লিখে প্রকাশ করা বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করা যথেষ্ট কঠিন এবং দূর্বোধ্য হবে। আজকে মানচিত্রের গঠন, শ্রেণী, প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করবো না। বরং আজ চমৎকার দুইটি মানচিত্র নিয়ে আলোচনা করবো।
বাংলাদেশ, এর মানে হচ্ছে বাংলা ভাষাভাষীর দেশ। ইন্ডিয়ার নামকরণ করা হয়েছে সিন্ধু নদীর নাম থেকে। পাকিস্তানের মানে হল শুদ্ধ দেশ আর মায়ানমারের মানে হল, swift and strong. এরকম ভাবে সবগুলো দেশেরই নামেরই একটা সুন্দর অর্থ রয়েছে। মজার ব্যাপার হল, একটা দেশের নামকরণে প্রভাব রয়েছে দেশের ভৌগলিক অবস্থান থেকে জলবায়ু থেকে বন্যপ্রাণীর। ইউরোপের দেশ এন্ডোরার নামের অর্থ হল, গুল্ম আচ্ছাদিত ভূমি। এর পেছনের কারনটা ভৌগলিক। আবার স্পেন শব্দের আক্ষরিক অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “বহু খরগোশের ভূমি” একটি বন্যপ্রাণী এই দেশটির নামকরণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে । আবার কখনো কখনো একটি দেশের নাগরিকদের আকার আকৃতিও দেশটির নামকরণে ভূমিকা রাখতে পারে। এই যেমন মেসিডোনিয়ার মানে হত, “ল্যান্ড অফ টল পিপল” বা “লম্বাদের দেশ”। এছাড়াও কিছু কিছু দেশের নাম চমৎকার কাব্যিক। আর্জেন্টিনা শব্দের মানে হল, “ল্যান্ড বিসাইড দ্য সিলভারি রিভার”। তবে সব দেশের নাম যে তার অধিবাসীদের জন্য প্রসংশাসূচক নয়, পাপুয়া নিউ গিনির মানে হল, “ফ্রিজি হেয়ারড মেন” বা কোঁকড়াচুলো মানুষ আবার ফ্রান্সের মানে হল, “ল্যান্ড অফ দ্য ফিয়ার্স” বা হিংস্রদের দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের নামের বিশেষ কোনো অর্থ নেই।
এই চমৎকার মানচিত্রটি তৈরী করেছে ক্রেডিট কার্ড কম্পেয়ার নামের একটি ওয়েবসাইট। এই মানচিত্রটি দেখার পর কেউ যখন আপনাকে জিজ্ঞেস করবে আপনি ফুটবলে কোন দেশ সাপোর্ট করেন, তখন কি উত্তর দেবেন আর সেই উত্তরটা শুনে সেই লোকের অভিব্যাক্তিটা একবার চিন্তা করে দেখুন!
এবার যে মানচিত্রটির কথা বলবো, সেটা একটু জটিল। বৃত্তাকার ডায়াগ্রামটিতে পৃথিবীর প্রধান ভাষাগুলো এবং সেই ভাষা ব্যবহারকারী ৪.১ বিলিয়ন মানুষকে তুলে ধরা হয়েছে এবং তুলনা করা হয়েছে। মূলবৃত্ত হতে ভাষাভাষীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ভাষা আন্দাজ কেটে নেয়া হয়েছে। সেই বৃত্তাংশ থেকে বিভিন্ন দেশ আন্দাজ জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে আরো কয়েকটা অংশে ভাগ করা হয়েছে। বৃত্তাংশগুলোর রঙ নির্ধারিত হয়ছে রিজিওন আন্দাজে, যা কিনা উপরের ওয়ার্ল্ড ম্যাপে দেখানো হয়েছে। চাইনিজ ভাষার ভাষাভাষীর সংখ্যা সর্বাধিক। এছাড়া আরবি, ইংরেজি, হিন্দিও বেশ পরিচিত। স্প্যানিশ ভাষাটি যেমন ইউরোপ থেকে দক্ষিন আমেরিকাতে ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি রাশিয়ান আর জার্মান ভাষা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। এছাড়াও কিছু মজার তথ্য এবং লেখচিত্র ম্যাপটিতে দেখানো হয়েছে। যেমন মাত্র ৭৫.৯ মিলিয়ন লোকের ভাষা হয়েও ফ্রেঞ্চ পৃথিবীর দ্বিতীয় জনপ্রিয় ভাষা। উল্লেখ্য যে এই ম্যাপটি আসলে ভাষাভাষীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যা অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যাপ হতে ভিন্ন। এই ম্যাপটি তৈরী করেছেন আলবার্তো লুকাস রদ্রিগেজ নামের একজন ইনফোগ্রাফিক সাংবাদিক।
তথ্যসুত্রঃ
কালচার ট্রিপ ওয়েবসাইট