বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
মৃণাল সেন: যে জীবন সিনেমার

মাহমুদুর রহমান: বাংলা সিনেমার তিন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের একজন তিনি। সত্যজিৎ-এর শৈল্পিক উপস্থাপনা আর ঋত্বিকের কঠিন বাস্তব মিশেছিল যে বাঙালী পরিচালকের সিনেমায়, তিনি মৃণাল। তাঁর গল্পের বয়ান সরল। সাধারণ মধ্যবিত্তের গল্প, সাদামাটা চোখে, যেমন আমরা দেখি, দেখিয়েছেন তিনি। তাঁর কলকাতা ট্রিলজি অর্থাৎ ‘ইন্টার্ভিউ’, ‘ক্যালকাটা ৭১’ এবং ‘পদাতিক’ সিনেমায় ছিল তৎকালীন মধ্যবিত্ত তরুণ যুবার গল্প।
বেকারত্ব থেকে বামপন্থী আন্দোলনের গল্প বলেছেন তিনি। তাঁর সিনেমায় ছিল চলমান দুর্নীতি আর অস্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। কিন্তু কেবল মধ্যবিত্ত নয়, ছিল নিম্নবিত্তদের প্রতিও মমত্ববোধ। যখন ‘খারিজ’ দেখি, দেখা যায় সমাজের নিচুতলার মানুষের জীবন বাস্তবতা তিনি দেখতে পেতেন সেই সমান চোখে।
জন্ম তাঁর বর্তমান ফরিদপুরে। ১৪ মে, ১৯২৩ সালে। ব্রিটিশ ভারতে জন্ম নেওয়া আরও অনেকের মতো তিনি শৈশব কৈশোরে দেখেছেন সে সময়ের উত্তাল দিনগুলি। জীবনের প্রথম বেলা এই বাংলাদেশেই কাটিয়েছেন বাংলা সিনেমার অন্যতম এই দিকপাল। কলেজে পড়ার জন্য গিয়েছিলেন কলকাতায়। স্কটিশ চার্চ কলেজের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন পদার্থবিদ্যা নিয়ে।
মৃণাল সেনের প্রথম সিনেমা ‘রাতভোর’ মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালে। দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ১৯৫৮ সালে। নাম ‘নীল আকাশের নিচে’। তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘বাইশে শ্রাবণ’, এই চলচ্চিত্র তাঁকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়। মৃণাল সেনের সিনেমা, মানুষের সিনেমা। কলকাতাকে তিনি দেখেছেন গভীরভাবে। ‘চালচিত্র’, ‘একদিন প্রতিদিন’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে সে পরিচয় পাওয়া যায়। ক্যালকাটা ট্রিলজির কথা বলাই বাহুল্য। সেই সঙ্গে সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণে তিনি ছিলেন অনন্য। সমরেশ বসুর ডার্ক কিন্তু স্ট্রং গল্পকে দারুন মুন্সিয়ানায় সিনেমায় পরিণত করেছেন। নাম, ‘জেনেসিস’। শাবানা আজমি, নাসিরুদ্দিন শাহ্, অম পুরীর অভিনয়ে সে সিনেমা দেখা এক দারুন অভিজ্ঞতা। প্রেমেন মিত্তিরের গল্পের বেলায়ও তাই। ‘খান্ডার’ এখনও অনেকের প্রিয়। বনফুলের গল্প থেকে তৈরি ‘ভুবন সোম’-কে অনেকে তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে থাকেন।
অনেক অভিনেতা বেড়িয়েছেন মৃণালের হাত ধরে। ধৃতিমান তাদের মধ্যে একজন। সু গায়ক, বর্তমানে সফল পরিচালক অঞ্জন দত্ত মৃণালের কাছ থেকে সিনেমায় হাতেখড়ি পেয়েছিলেন। ‘খারিজ’, ‘অন্তরীণ’, ‘চালচিত্র’-র মতো চলচ্চিত্রে তিনি মৃণালের মূল অভিনেতা ছিলেন। মিঠুন চক্রবর্তীর অভিষেক হয়েছিল মৃণাল সেনের সিনেমায়।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার প্রাপ্ত মৃণাল সেন পেয়েছেন আরও অগণিত পুরস্কার। ৯৫ বছর বয়সে অনন্ত শূন্যতায় পাড়ি জমিয়েছেন এই সিনেমার যোদ্ধা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। পৈতৃক ভিটে ফরিদপুর থেকে বহু দূরে তিনি এখন।