বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
যে দুটি ইরানি সিনেমা অবশ্যই দেখা উচিত

মাহমুদুর রহমান: বিশ্ব সিনেমার বাজারে না হলেও সিনেমার দর্শকদের কাছে ইরানি সিনেমার কদর অনেক আগে থেকে। বিষয় বৈচিত্র্য আসলে তেমন নেই। তবে যাপিত জীবনের বাস্তবতা খুব সাদামাটা রূপে তুলে ধরাই ইরানি সিনেমার বৈশিষ্ট্য। আর সেই সাদামাটা সিনেমাই মানুষের মনকে ধাক্কা দেয় তীব্র ভাবে। আজ আমরা দুটো ইরানি সিনেমার কথা বলবো যা আপনার ভাবনার জগতে আলোড়ন তুলবে।
দ্য উইলো ট্রি কেবল ইরানি সিনেমা নয়, সিনেমার নাম নিলে বর্তমান যেসব পরিচালকের নাম শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হয়, মাজিদ মাজিদি তাদের মাঝে অন্যতম। ‘বারান’, ‘সঙ অফ স্প্যারো’, ‘চিলড্রেন অফ হেভেন’ নির্মাতার এই সিনেমাটি তুলনামূলক কম আলোচিত হয়।
সিনেমাটির মূল নাম ‘বিড়-এ-মজনুন’। গল্পটি ইউসুফ নামের এক অন্ধ লোকের। আট বছর বয়সে এক অগ্নিকান্ডে চোখ হারায় সে। অন্ধকারের মাঝেই সে নিজের মনের মধ্যে আলো খুঁজে নেয়। যখন এ গল্প শুরু হয় তখন সে ৪৫ বছর বয়স্ক এক প্রফেসর, যার বিষয় সাহিত্য। ঘরে একটি মেয়ে এবং স্ত্রী নিয়ে তার সংসার।
একটি অপারেশনের মাধ্যমে চোখের দৃষ্টি ফিরে পায় সে। আর দৃষ্টি ফিরে পেতেই তার পৃথিবী যেন আমূল বদলে যায়। ৪৫ বছরের প্রৌঢ় ইউসুফ, এক তরুণীর প্রেমে পড়ে। ইউসুফ দৃষ্টি হারিয়েছিল খুব অল্প বয়েসে। দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার পর আবার তার যাত্রা যেন সেইখান থেকে শুরু হয়।
শুধু প্রেম নয়। ইউসুফ সুন্দরেরও প্রেমী। সিনেমা আপনাকে ভাবাবে, ভাবাবিষ্ট করবে যখন ইউসুফ তার চোখ ফিরে পাওয়ার পর পৃথিবীকে দেখতে শুরু করে, তখন। নতুন চোখে পৃথিবী দেখার আনন্দ বিহ্বলতায় ইউসুফের সঙ্গে আপনিও বিহ্বল হবেন। পরিচালক আমাদের নিয়ে গেছেন জীবনে বাস্তবতার এমন এক সত্যে যেখানে ৪৫ বছরের প্রৌঢ় প্রেমে পড়তে পারে। তুষারের মাঝে তার একাকীত্ব, আমাদের একাকী করে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুলবে বারবার, ইউসুফের পরিণতি তবে কি?
২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি ২০০৪ সালের বিভিন্ন সময়ে ইরান এবং ফ্রান্সে ধারন করা হয়। ইউসুফের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পারভেজ পারাস্তুই।
এ সেপারেশন সমসাময়িক ইরানি পরিচালকদের মাঝে আসগার ফারহাদী স্বনামধন্য। ২০১১ সালে তার পরিচালিত এই সিনেমাটি নানা পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার সাথে সাথে মানুষের মনেও আলোড়ন তুলেছিল।
নাদের এবং সিমিনের গল্প। তারা স্বামী-স্ত্রী। আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের মতো সেখানেও সংসারে পুরুষের দায়িত্ব উপার্জন এবং নারী সংসারের কাজ করে। নাদেরের অসুস্থ পিতার সেবা করাও সিমিনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
এরকম সময়ে সিমিনের একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল থেকে ঘটে যায় নানা ঘটনা। আর সিমিন এবং নাদের বিবাহ-বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়।
আসগারের এই সিনেমাটি অতি সাম্প্রতিক বাস্তবতা এবং সত্যের সামনে আমাদের দাঁড় করায়। বিবাহ বিচ্ছেদ পৃথিবীতে খুব পরিচিত এবং স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করে নানা ভুল বোঝাবুঝি, মানুষের অধৈর্য মনোভাব। কিন্তু আসলে সংসার এবং সমাজের ঠিক কি ঘটছে, সে চিত্র দেখিয়েছেন ফারহাদঈ, এই সিনেমায়।
কেবল তা-ই নয়। সিমিন এবং নাদেরকে কেন্দ্রে রেখে দেখানো হয়েছে আরও কিছু গৌণ চরিত্র। অর্থনৈতিক মন্দায় ইরানে নারীর ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া, কাজের সন্ধানে ছোটার গল্প ফারহাদী দেখিয়েছেন যত্নের সাথে।
পায়মান মাদি এবং লেইলা হাতামি অভিনীত চলচ্চিত্রটি আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে, আসলেই সংসারে নারী পুরুষের দায়িত্ব কি? এবং বিবাহ বিচ্ছেদ কি এড়ানো সম্ভব? আপনার ভাবনাকে কিছুটা হলেও পাল্টে দেবে এই সিনেমা।