ফিচারবাক্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
রথচাইল্ড কিংবা এক রহস্যময় ধনী পরিবার

মৃন্ময়ী মোহনা: বিচিত্র এ পৃথিবীতে রয়েছে বিচিত্র মানুষজন। বিভিন্ন কারনে যারা হয়ে ওঠে পৃথিবীর বাকি মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। আঠারো শতকের শেষের দিকে পৃথিবীতে আবির্ভাব ঘটে এমনই বিচিত্র এক পরিবারের। যেখানে পরিবারের সকল সদস্যই ভীষণ ধনী। নাম তার, ‘রথচাইল্ড পরিবার।’ বলা হয়ে থাকে, ইউরোপের ইহুদী এই পরিবারের এতই ক্ষমতা যে, তারা নিয়ন্ত্রণ করে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিকে। এই পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা মায়ার আমসেল রথচাইল্ড (১৭৪৪)।
রথচাইল্ড পরিবার সম্পর্কে অবাক করা কিছু তথ্য: আমসেলের বাবা মোজেস আমসেল বাউয়ার ছিলেন একাধারে একজন মহাজন এবং স্বর্ণকার। ১৭৫৫ সালে মারা যান তিনি। তার জীবদ্দশায়ই তিনি তার ছেলেকে ব্যাংক, সুদ প্রভৃতি বিষয়ে অনেক শিক্ষা দিয়ে যান। পিতার মৃত্যুর পর হ্যানোভারের একটি ব্যাঙ্কে কাজ শুরু করেন রথচাইল্ড। পূর্বজ্ঞান এবং বুদ্ধিমত্তার জোরে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র পার্টনার হয়ে যান। সেখানে কাজ করার সময় ইউরোপের প্রায় প্রতিটি রাজপরিবারের সাথে রথচাইল্ড গড়ে তোলেন ব্যবসায়িক সম্পর্ক। ধীরে ধীরে রথচাইল্ড বিপুল সম্পদের মালিক হতে থাকেন।
ব্যবসাকে সমৃদ্ধ করতে এবার তিনি ব্যবসায়ে তার সন্তানদের নিয়োগ করেন। মার্চেন্ট ব্যাংক খোলার জন্য তার পাঁচ ছেলেকে তিনি পাঠিয়ে দেন নেপলস , প্যারিস, ভিয়েনা লন্ডন এবং ফ্রাঙ্কফুটে। যেগুলোর সবগুলোই ছিলো ইউরোপের অভিজাত এলাকা। তার পুত্রদের একান্ত চেষ্টায় সমগ্র ইউরোপ জুড়ে তাদের পরিবারের একটি অর্থনৈতিক স্বতন্ত্রতা তৈরি হয়। বিভিন্ন যুদ্ধে এবার তারা অর্থ ঋণ দিতে শুরু করে। ফ্রান্স-ব্রিটেন যুদ্ধে তারা উভয় পক্ষকে বিশাল অংকের ঋণ প্রদান করে। রথচাইল্ডের ছোটভাই নাথান রথচাইল্ডের ভূমিকার কথা এখানে উল্লেখযোগ্য। জণগণের কাছে যুদ্ধ সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে যিনি ৫০ মিলিয়ন স্টার্লিং এর মালিক হন। নাথান রথচাইল্ডের এই ঘটনাকে বলা হয় ‘মোস্ট ওডেশিয়াস মুভ অব দ্য ফিনান্সিয়াল হিস্ট্রি।
১৮১২ সালে আমেরিকা রথচাইল্ড পরিবারকে ‘নিষিদ্ধ ‘ করে। তারই একরকম প্রতিশোধ স্বরূপ আমেরিকা-ইংল্যান্ড যুদ্ধে ইংল্যান্ডকে অর্থ প্রদান করে তারা। তবে, পরবর্তীতে আমেরিকাকেও তারা সাহায্য প্রস্তাব পাঠায়। আব্রাহাম লিঙ্কন তাদের আহ্বানে সাড়া দেননি। কথিত আছে, আব্রাহাম লিঙ্কন হত্যার পেছনে এই পরিবারের বিশেষ ভূমিকা ছিলো। কথিত আছে, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, ব্রাজিলের স্বাধীনতা, এমন কি রাশিয়ার জার ডাইনেস্টির পতন- সবকিছুর মূলে ছিলো রথচাইল্ড পরিবারের ইন্ধন। রথচাইল্ড পরিবার কখনো হারে না। যেকোন কাজ হাসিল করতে তারা যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। তাদের ব্যবসা এতোটাই বিস্তৃত যে, পরিবারের সবাই ই মিলিয়নার! তাদের পরিবারের মোট সম্পদ মূলত কতো,এটা কেউ জানে না।

কারন পরিবারটি ব্যবসায় আসার সময় থেকেই কাজ করে যাচ্ছে কঠোর গোপনীয়তার সাথে। কথিত আছে, পৃথিবীতে স্বর্ণের মূল্য, মূল্যের উত্থান-পতন সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে। আমেরিকার ‘ডলার প্রোভাইডার – ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক’ রথচাইল্ডদের নিয়ন্ত্রনে থাকে। এত বিপুল সম্পত্তির মালিকানা এদের হাতে থাকায় বলা হয়ে থাকে, ‘দ্য রথচাইল্ডস ইজ দ্য মানি!’ রথচাইল্ড এতো সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের প্রভাবশালী বা ধনকুবেরের তালিকায় তাদের নাম দেখা যায় না। এর কারন হিসেবে কথিত আছে, তাদের রিজার্ভ কারেন্সিতে হয় না; বরং স্বর্ণে হয়। রথচাইল্ড পরিবারকে অনেকে ‘ইলুমিনাতির’ সাথে মিলিয়ে ফেলে। তবে তার সত্যতা কতটুকু তা কেউ জানে না বা জানার অবকাশও নেই!
কঠোর গোপনীয়তা এবং অর্থের অস্বাভাবিক আধিক্য – এই দুই বিষয়কে পুঁজি করে রথচাইল্ড পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছে নানা কিংবদন্তী। সত্যের সাথে নানা জল্পনাকল্পনা মিশিয়ে পৃথিবীর সবদেশের মানুষের কাছেই পৌঁছে গেছে তাদের গল্প। সত্য হিসেবে বিশ্বাস করা বা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেওয়া তাই যার যার ব্যক্তিগত অভিরুচি!