বিনোদন
রবার্ট ডাউনি জুনিয়র এর আয়রন ম্যান কি আসলেই এম.সি.ইউ. এর সেভিয়র?

আব্দুল্লাহ আল মুনতাসির: ওয়েসলি স্নাইপস এর নাম কয়জন শুনেছেন? ব্লেড নামে যে একটা মুভি আছে তা হয়তো অনেকেই জানেন কিন্তু তা যে মারভেল এর প্রথম সুপার হিরো মুভি তা জানা আছে কি? জ্বী! মারভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স এর মুল হোতা বলে আমরা যে রবার্ট ডাউনি জুনিয়র কে চিনি তার আগে এম সি ইউ এর ভিত্তি প্রস্তর প্রস্তুতে হাত ছিল এই ওয়েসলি স্নাইপস এর ব্লেডের। ১৯৯৬ এ ব্যাংকরাপ্ট বা দেউলিয়া হয়ে যাওয়া মারভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স কিভাবে হলিউড এর এতো বড় মুভি জাগারনট হয়ে উঠলো তা আমরা অনেকেই জানিনা। কিভাবে ওয়েসলি স্নাইপসের আর রেটেড ব্লেডের সহযোগিতা মারভেল তাদের ভাগ্য ঘুরিয়ে সফলতার মুখ দেখে তাই আজকে আমরা জানানোর চেষ্টা করবো।
বছরের পর বছর টাকা খরচ করেও সফলতার মুখ দেখতে না পেয়ে মারভেল ১৯৯৬ এ দেউলিয়া হয়ে যায়। আশির দশক থেকে নব্বই এর দশক সুপার হিরো মুভির জন্য তেমন ভাল সময় ছিলনা। মারভেল তো দুরের কথা, তখনকার ফ্যান ফেভারিট ডিসি ইউনিভার্সের ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিনই ১৯৯৭ সালে সুপার হিরো মুভি জগতে মুখ থুবড়ে পড়ে। দেউলিয়া হয়ে যাওয়া মারভেলের হাল ধরে টয়বীজ নামক এক খেলনা কোম্পানির দুই মালিক, আইজ্যাক পার্লমাটার এবং আভি এরাড। তারা জানতো মারভেল এর ভবিষ্যৎ শুধু কমিক্স বিক্রি করে চলবে না। মুভি তেই আসল ভরসা। টাকার অভাব মেটাতে মারভেল তার ক্যারেক্টারের স্বত্ব বিভিন্ন মুভি কোম্পানিকে বিক্রি করার চেষ্টা করে। যার ফলশ্রুতিতে বের হয় ব্লেড এর মতো মুভি যা ৪৫ মিলিয়ন ডলারের বাজেটে ১৩১ মিলিয়ন ডলার কামিয়ে চমকে দেয় সবাইকে। কিন্তু তা থেকে মারভেলের পকেটে যায় শুধু ২৫ হাজার ডলার। তবে টাকা তা তাদের জন্য তখন বড় ব্যাপার ছিলনা কারণ ওয়েসলি স্নাইপস এর ব্লেড অন্যান্য বড় বড় কোম্পানিকে দেখিয়ে দেয় যে মারভেলের সি গ্রেড ক্যারেক্টারই কত টুকু আকর্ষণ আনতে পারে, তাহলে এ গ্রেড ক্যারেক্টার কি করতে পারবে। পরবর্তীতে স্পাইডার ম্যান এর স্বত্ব সনি কে বিক্রি করে মারভেল যা নিয়ে সনি বক্স অফিস কাপিয়ে ফেলে।
ব্লেড এর মতো মুভি কিভাবে এতো প্রশংসা কুড়ায়? এর পেছনে অনেকের হাত আছে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দুজন হলেন ওয়েসলি স্নাইপস নিজে যিনি ব্লেডের ক্যারেক্টারে অভিনয় করেন এবং পর্দার পেছনে থাকা রাইটার ডেভিড এস গয়ার। ওয়েসলি স্নাইপস যেমন ব্লেডের ক্যারেক্টারে ঢুকে গিয়েছিলেন তেমনি ডেভিড এস গয়ারও ব্লেড ক্যারেক্টারকে ওয়েসলি স্নাইপসের মতোই মুভিতে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। এই ডেভিড এস গয়ারই পরবর্তীতে ব্যাটম্যান ট্রিলোজির মতো মুভির স্টোরিতে কাজ করেন। এতো কিছুর পরও মারভেল তেমন কোন বড় লাভের মুখ যখন দেখছেনা তখন এক ট্যালেন্ট এজেন্টের বুদ্ধিতে মারভেলের ভবিষ্যতই বদলে যায়। ডেভিড মেইজেল নামক এই ট্যালেন্ট এজেন্ট মারভেলের দুই কর্ণধার আইজ্যাক পার্লমাটার এবং আভি এরাডের সাথে দেখা করে তাদেরকে বুঝান যে মারভেলের ক্যারেক্টারগুলোর স্বত্ব বিক্রি না করে মারভেলের উচিত নিজেই এই মুভি গুলো বানানো এবং সম্পূর্ণ লভ্যাংশের মালিক নিজেই হওয়া। এই বুদ্ধিতে মারভেল স্টুডিও এর অধীনে ২০০৮ সালে তৈরি হয় রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের আয়রন ম্যান। এর পরের কাহিনী তো আপনারা সবাই জানেনই। মারভেল কে আর পেছনে ফিরে এক সেকেন্ডের জন্যও তাকাতে হয়নি।
রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে আধুনিক মারভেলের গডফাদার বলা গেলেও মনে রাখতে হবে যে ওয়েসলি স্নাইপসের অভিনয়শৈলী মারভেলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গিয়েছে।