ক্রিকেটখেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
রিচার্ড স্টোনিয়ার : অন্য রকম একজন ক্রিকেট কোচ

“আমি প্রথমে তাদের নৈতিকতা শিখিয়েছি। নিজেদের মানসিকতা বদলানোর কথা বলেছি। আমি তাদের যা শিখিয়েছি তারা সেটা মাঠে এবং মাঠের বাইরে অনুশীলন করেছে। এখন তারা শারিরিক এবং মানসিকভাবে দারুন শক্তিশালী।” – রিচার্ড স্টোনিয়ার! (বাংলাদেশ যুবাদলের ফিটনেস ও কন্ডিশনিং (ট্রেনার) কোচ।) ক্রিকেটে মানসিকতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা মানুষগুলো সহজেই মানিয়ে নিতে সক্ষম! আমাদের জাতীয় দলে মানসিকতার বড্ড অভাব।
কিছুদিন আগে দারাজ লাইভে সাকিবকে একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল! ‘আপনি যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে সুযোগ পান তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কোন জিনিসটার পরিবর্তন করতে চান?’ সাকিবের উত্তর ছিলো – মানসিকতার! আসলেই জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে বেশ পিছিয়ে। কিন্তু একটু অন্যদিকে তাকিয়ে দেখলেই নজরে আসবে অ- ১৯ দল। যেই দল একজন রিচার্ডের সংস্পর্শে বদলে গেছে পুরোটাই, ভারতকে হারিয়ে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন! আকবর-জয়রা যদি বাইশ গজের হিরো হয় তাহলে পর্দার আড়ালের হিরো হবেন রিচার্ড স্টোনিয়ার! রিচার্ডের জন্ম ইংল্যান্ডে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে রিচার্ডের পথচলা শুরু হয় ২০১৮ সালে। এরপর আর পিছনে ফিরতে হয়নি তাকে, নিজের সেরাটা দিয়ে গড়ে তুলছেন জুনিয়র টাইগারদের! পুরষ্কার স্বরূপ বেড়েছে চুক্তির মেয়াদ। ২০১৮ সালে রিচার্ড যখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে ১ বছরের জন্য যুক্ত হয়েছিলো, তখন তাকে দেওয়া হয়েছিল যুবাদের একটা ভাল মানের দলের পরিণত করার দায়িত্ব। যুবারা যেনো দম, মনোবল, শক্তির দিকে যেনো এগিয়ে যেতে পারে এইসব দেখাশোনার মূল দায়িত্ব ছিলো তার কাঁধে! দায়িত্ব যে যথাযথ পালন করেছেন এটার প্রমাণ পেয়েছে বোর্ড! বয়সে ছোট হলেও যুবাদের তৈরি করেছেন দারুণ ভাবে, হয়েছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন!
২০১৮ সাল থেকে যুবাদের মাঠের বাইরে সেরা হিসেবে গড়ে তোলার কারিগর ছিলেন এই রিচার্ড স্টোনিয়ার। তিনি এই দলটাকে শক্তিমত্তার দিক দিয়ে এমন এক দলে পরিণত করেছেন যেটা এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখা যায়নি। এই সময়ে বাংলাদেশের যুবারা সাফল্যও পেয়েছে দারুণ। আকবর আলীদের পরের ব্যাচেও রিচার্ডের পরিকল্পনাগুলো চোখ ধাঁধানো! ছুটিতে দেশে ফিরলেও অনলাইনের মাধ্যমে সবর্দা নজরে রাখেন যুবাদের। রিচার্ডের সংস্পর্শে যেনো যুবারা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ২০২০ সালে অ- ১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হয়েছে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন! ফাইনাল ম্যাচে সীমানা দঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে রিচার্ডের কথাগুলো শুনে যেনো লড়াইয়ের শক্তি পয়েছিলো যুবারা। সর্বদা মাঠের বাহিরে বসে সার্পোট করেন যুবাদের, ধরিয়ে দেন ভুলগুলো। রিচার্ডের সংস্পর্শে যুবাদের সাফল্য যেনো আকাশচুম্বী! স্টোনিয়ার যুবাদের জন্য অনুপ্রেরণা! ‘মাথা ঠান্ডা, শেষ করে এসো’ এমন বাণীতে যুবাদের উৎসাহ দিয়ে থাকা রিচার্ড শুধু ট্রেনার হিসেবে নয়, কাজ করেন খেলোয়াড়দের নেট প্রাকটিসে, ব্যাটসম্যানদের মনোযোগী করতে পারেন ব্যাটিংয়ে, নজর রাখেন স্পিন বোলিংয়েও! রিচার্ড যেনো অলরাউন্ডার!
বিশ্বকাপ জয়ের পর যুবাদের নিয়ে রিচার্ড বলেছিলো, “এই দল থেকে ভবিষ্যতে এমন ক্রিকেটার আসবে যারা বড় ইনিংস খেলতে পারবে, বল হাতে টপাটপ উইকেট তুলে নিতে পারবে বা অসাধারণ কোনো ক্যাচ নিতে পারবে। আর এই দলটাই সবার আশা আগামীর জন্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এই দলটা বাংলাদেশকে একত্রিত করেছে যা খেলোয়াড়দের জন্য অসাধারণ এক কৃতিত্ব। ছেলেরা আশ্চার্যজনক কাজ করেছে যেটার জন্য আমি গর্বিত।“ সময়ের পরিবর্তে তার এই কথাগুলো সত্যি হতে চলছে। শরিফুল গায়ে জড়িয়েছে জাতীয় দলের জার্সি! তৌহিদ, জয়রা এসেছেন নজরে। একটা সময় এই দলের অনেকেই জাতীয় দলে খেলবে, তখন হয়তো রিচার্ড নিজের সাফল্যকে বড় করে দেখবে আর বলবে, রিচার্ড তুমি সফল!
- আরেফিন রুপক