খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল : জিতেছে ক্রিকেট, হারেনি কেউ

এস.কে. শাওন: তৃপ্তির মধ্যে সব সময় লুকিয়ে থাকে আত্নঘাতের বীজ, অতৃপ্তি বরং উম্মুক্ত বাতায়ন পথে দৃশ্যমান করে তোলে সম্ভাবনার সহস্র সড়ক। ইংল্যান্ড এতদিন সে পথেই হাঁটছিল। তাড়িয়ে বেড়ানো একটি লক্ষ্য ইংলিশদের সারাক্ষণ বয়ে চলছিল। কারও আস্ফালন কিংবা হম্বিতম্বি তাদের থামাতে পারেনি। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড জিতে নিয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ।
র্যাংকিংয়ের প্রথম স্থান অধিকারী দল হয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা যারা শুরু করে, তারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলে অবাক হওয়ার কি আছে! কিন্তু আপনি যদি উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনাল ম্যাচটি দেখে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি অবাক হবেন। কারণ বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ম্যাচ টাই হয়ে সুপার ওভারে গড়ায়। প্রথমে সুপার ওভারে ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ বলে সংগ্রহ করে ১৫ রান। ১৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ডও ৬ বলে ১৫ রান করে। পাঠকদের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে ইংল্যান্ড তাহলে জিতে কিভাবে? উত্তরটা এক নজরে দেখে নিন।
ফাইনাল ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৪ টি চার ও ২টি ছক্কায় মোট ১৬ টি বাউন্ডারি পায় নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে ২য় ইনিংসে ইংল্যান্ড ২২টি চার ও ২ ছক্কায় মোট ২৪ টি বাউন্ডারি সংগ্রহ করে। সেজন্য সুপার ওভারের নিয়মানুযায়ী চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড।

ভারতের সাথে সেমিফাইনাল ম্যাচে মার্টিন গাপটিলের থ্রোতে ধোনি আউট হলে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। ম্যাচের ফলাফল আসে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে। বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই গাপটিলের থ্রো নিউজিল্যান্ডের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর থ্রো স্টোকস এর ব্যাটে লেগে বাড়তি চার রান হয়। এই বাড়তি চারটি রান ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ইংলিশদের ম্যাচ জয়ের নায়কও সেই বেন স্টোকস। মূল ম্যাচে বল হাতে ৩ ওভার বোলিং করে ২০ রান দিয়ে উইকেট না পেলেও ব্যাট হাতে ৯৮ বলে ৮৪* রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। সুপার ওভারেও ব্যাট হাতে ৩ বলে ৮ রান করেন। ফলে ‘ম্যান অব দ্য ফাইনাল’ এর খেলোয়াড় খুঁজে নিতে ধারাভাষ্য প্যানেলকে তেমন সমস্যা পোহাতে হয়নি।

ইংল্যান্ড ২৪২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে স্টোকস, বাটলার ও বেয়ারস্টো ছাড়া বাকিরা তেমন সুবিধা করতে না পারায় ২৪১ রানে অলআউট হয়। বাটলারের সংগ্রহ ৬০ বলে ৫৯ রান। আর বেয়ারস্টো করেন ৫৫ বলে ৩৬ রান। কিউইদের পক্ষে ফার্গুসন ও নিশাম সমান ৩ টি এবং হেনরি ও গ্র্যান্ডহোম সমান একটি করে উইকেট পান। এর আগে লো স্কোরিং উইকেটে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেট হারিরে ২৪১ রান করে। কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন নিকোলস। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য রান বলতে লাথাম করেন ৪৭ রান এবং দলপতি উইলিয়ামসনের সংগ্রহ ৩০ রান।ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট সংগ্রহ প্লাঙ্কেটের এবং উড আর ওকস সমান ৩টি করে উইকেট পান। শিরোপা না জিততে পারলেও টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন উইলিয়ামসন। টুর্নামেন্ট সেরার তালিকায় বার বার সাকিবের নাম ভেসে আসলেও সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে ২ শতক ও ২ অর্ধশতকে ৫৭৮ রান সংগ্রহ করে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেন উইলিয়ামসন।উপমহাদেশের কোন দল ফাইনাল না খেলায় রং হারিয়েছিল বিশ্বকাপ। কারণ ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড হলেও সেখানে ক্রিকেট এতটা জনপ্রিয় নয়। কিন্তু একটা ফাইনাল ম্যাচ জমাতে যা যা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি কিছুই যে ছিল এ ম্যাচে! কারণ ম্যাচটির ফলাফল যে নির্ধারণ হলো নাটকীয়ভাবে। ১৯৯২ সালের ফাইনালে একটু উত্তেজনা ছিল। তারপর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল বলতে একপেশে লড়াই। ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সব উত্তেজনা। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল পূর্বের সব বিশ্বকাপ ফাইনালকে ছাপিয়ে গেল। কারণ প্রথমবারের মতো যে বিশ্বকাপের ফাইনাল গড়াল সুপারওভারে।

এর আগে তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেললেও শিরোপা জিতা হয়নি ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডের। লম্বা সময় অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা জয়ের আক্ষেপ ঘুচালো মরগানরা। তীর্থ ভূমি লর্ডসে খেলা চলাকালীন সময়ে গ্যালারিতে যখন ব্রিটিশ সমর্থকদের গানের সুর বাঁজছিল তখন সেই সুরের বিপরীতে লড়াই করে গেছে কিউইরা! ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাওয়া ম্যাচটি তো আসলে কোন দলই হারেনি! মূল পর্ব, সুপার ওভার দুই জায়গায়ই ম্যাচ টাই। ইতিহাস গড়া এ ম্যাচটি যেন ক্রিকেটের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিল!ক্রিকেটের জন্মদাতা ইংল্যান্ড ক্রিকেটের ‘কোহিনূর’ জিতে নিল। ক্রিকেটের রাজা যেন তাঁর সর্বোচ্চ সম্মানটা পেয়ে গেল!আগামী ১০০ বছরে কি আর এমন রাজসিক ঢংওয়ালা ম্যাচ দেখার সুযোগ মিলবে! ম্যাচটিকে বিশ্বকাপের সেরা ফাইনাল ম্যাচ বলে আখ্যায়িত করলে কি ভুল হবে?