খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
রোনালদোর প্রত্যাবর্তন হবে কি?

মঞ্জুর দেওয়ান: তার বয়সী ফুটবলারদের জায়গা হয় দ্বিতীয় সারির দল কিংবা মেজর লিগ সকারে। পড়ন্ত বেলার ফুটবল মহারথীদের এখন অঘোষিত ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া লিগটি। তবে নামটি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বলেই চিত্রপট ভিন্ন। ৩৩ বছর বয়সেও ইতালির প্রথম শ্রেণীর ঘরোয়া লিগে যোগ দিয়েছেন। তাও আবার রেকর্ড পরিমাণ দামে।
এই বয়সে এসে ডেভিড বেকহাম, ওয়েন রুনি, রোনালদিনহোর মতো তারকার আলো একটু একটু করে নিভে গেছে। একসময় ইউরোপ মাতানো এসব তারারা এখন মার্কিন মু্ল্লুকে এসে বিদায়ের প্রহর গুনছেন। কেউ কেউ আবার অবসরের স্বাদ নিয়েও ফেলেছেন। বুড়োদের ঘর হিসেবে এমএলএসের কদর হয়তো বাড়িয়েছেন। তবে সেটা সেটা সাময়িক সময়ের জন্য।
তবে তিনি রোনালদোর বলেই ভিন্ন। ১৬ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে নিজেকে বারবার ফিনিক্স পাখির মতো আবিষ্কার করেছেন। নিরলস পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে নতুন করে জাত চিনিয়েছেন বারবার। সমালোচনাকারীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন সবুজ গালিচায়। নিজের অসাধারণ ফুটবল জাদুতে নিন্দুকের মুখ থেকে ’বাহবা’ আদায় করে নিয়েছেন সময়ের সেরা এই ফুটবলার।
তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের সেরা ফুটবলার রিয়াল মাদ্রিদের সাথে সুদীর্ঘ নয় বছরের সম্পর্ক চুকিয়েছেন। নিজেকে আরোও একবার প্রমাণ করতে স্পেন ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন জুভেন্টাসে। যেমনটি এসেছিলেন ২০০৯ সালে। ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড ছেড়ে শতাব্দীর সেরা ক্লাবে এসেছিলেন পর্তুগীজ সুপারস্টার। তবে আগের দুইবারের দলবদলের সাথে এবারের দলবদলের তুলনা করা অন্যায় হবে বৈকি! ইতালিতে এসে বলার মতো সুবিধা করতে পারেননি রোনালদো। লিগে টানা তিন ম্যাচ গোল খরায় ভুগেছেন। চার নম্বর ম্যাচে নিজেকে ফিরে পাবার সংকেত মিললেও সেটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচে। লাল কার্ড দেখায় ঘরের মাঠে ইয়ং বয়েজের বিপক্ষে খেলতে পারেননি। ৮ ম্যাচে অনেকটা গড়পড়তা পারফর্মেন্স। এমন গোলখরা রোনালদোর নামের সাথে যায় কিনা সেটাও ফুটবল মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনেক ফুটবল বোদ্ধা মনে করছেন রোনালদোর সোনালি দিনের ইতি ঘটেছে রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পরপরই। মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখতে শুরু করেছেন রোনালদো। যেখানে লেখা ’গোল নেই’!
শুধু মাঠ নয়, মাঠের বাইরের চ্যালেঞ্জও নিতে হচ্ছে রোনালদোকে। সম্প্রতি মার্কিন মডেল ক্যাথরিন মায়োরগার আনা ধর্ষণের অভিযোগে বিব্রত পর্তুগিজ সুপারস্টার। ইমেজ নিয়ে যে কতটা ক্রাইসিসে আছেন সেটা মুখে না বললেও চলবে। তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্মান নিয়ে রোনালদো আত্মবিশ্বাসী হলেও স্পন্সর প্রতিষ্ঠান গুলো বিব্রত পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। ক্লাব ম্যানেজমেন্টকে পাশে পেলেও দিনশেষে লড়তে হবে রোনালদোকেই।
এতো এতো চ্যালেঞ্জের মাঝে রোনালদোর ফিরে আসা নিয়ে শঙ্কিত তার ভক্তকূল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোনালদোর সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে মতামত দিচ্ছেন অনেকেই। নিজেকে আর নতুন করে ফিরে পাবেন না মনে করছেন। তবে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না রোনালদো। দূর্দিনে পাশে চেয়েছেন শুভাকাঙ্খিদের। ধর্ষণের অভিযোগ উপেক্ষা করে টুইটারে নিজেকে নির্দোষ দাবী করেছেন পর্তুগিজ মহাতারকা। যেকোন ধরনের আইনি লড়াই মোকাবিলার ইষ্পাতদৃঢ় মনোবল নিয়ে অপেক্ষা করছেন সিআরসেভেন।
রোনালদোর থাকা না থাকার প্রভাব চাক্ষুস দেখছে রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাস। একবিংশ শতাব্দিতে এসে এই প্রথম টানা চার ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছে শতাব্দির সেরা ক্লাবটি। অন্যদিকে রোনালদোর যোগ দেয়ার পর এই প্রথমবারের মতো টানা ১০ ম্যাচ জিতেছে জুভেন্টাস। তুরিনের ওল্ড লেডিতে গোলের বন্যা না বসাতে পারলেও প্লে মেকারের ভূমিকা পালন করছেন সিআরসেভেন।
খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প রোনালদোর চেয়ে ভালো হয়তো কম মানুষই জানেন। বর্ণিল ক্যারিয়ারে প্রায় পুরোটা সময় মোহিত করে রেখেছেন দর্শকদের। লিগ শিরোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপসহ ২৬ টি শিরোপা জিতেছেন পাঁচবারের বিশ্বসেরা এই ফুটবলার। পর্তুগিজ তারকার আরোও একটি প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় বিশ্বের কোটি ফুটবল প্রেমী!