বিনোদন
শুভ জন্মদিন আয়নাবাজির কারিগর

‘কি আব্বা বলছিলাম না,আইজ অনেক মাছ উঠব,আমারে কিন্তু আজ মেলায় নিয়া যাইতেই হইবো’। জেলেদের নিয়ে দিন বদলের গল্প বলা বাংলালিংকের সেই চোখ ভিজিয়ে আনা বিজ্ঞাপনটি নিশ্চয় সবার মনে আছে,যেই বিজ্ঞাপনের সুবাদে শিশুশিল্পী মামুন বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন। আমাদের আজো নষ্টালজিয়া করা ‘ছোট ছোট আশা,ভীরু কিছু স্বপন।দেয় না ধরা,মনে রয় গোপণ’..সাহানা বাজপেয়ীর কন্ঠে দুই ভাইয়ের সেই কঙ্কা টিভির বিজ্ঞাপনের কথা নিশ্চয় মনে আছে,কিংবা গ্রামীনফোনের সেই বিখ্যাত বিজ্ঞাপন ‘আমারে ছাড়িয়ারে কই রইলারে’,আমাদের বারংবার মুগ্ধ করেছিল,পরিচিতি পেয়েছিলেন বিথী সরকার।
বেশ কিছু বছর আগে নির্মাতা আদনান আল রাজীব ও রাখীর সিলন গোল্ড চায়ের একটি বিজ্ঞাপন বেশ সাড়া ফেলেছিল,যার জনপ্রিয় সংলাপ ছিল ‘ময়না পাখি ক্লাস টুতে পড়ে”।চারটি বিজ্ঞাপন ই আমাদের বিজ্ঞাপন জগতে উল্লেখযোগ্য, চারটির নির্মাতা একজন ই। ২০০০ পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে বিজ্ঞাপনের যে পরিবর্তনের ধারা বয়েছিল, একেবারেই স্বল্প সময়ে যে সুন্দর গল্প ফুটে উঠতো। সেই বিজ্ঞাপন কে ভিন্নমাত্রায় পৌঁছে দেয়ার জন্য যাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য,তিনি তাদের মধ্যে একজন। তিনি আমাদের সবার প্রিয় নির্মাতা ‘অমিতাভ রেজা চৌধুরী’।
অমিতাভ রেজা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন সাড়া জাগানো সিনেমা ‘আয়নাবাজি’ নির্মাণ করে, বলতে গেলে বাংলা সিনেমার মোড় ই ঘুরিয়ে ফেলেছিলেন। দর্শকদের কাছে এই সিনেমাটি জায়গা করে নিয়েছিল অতি প্রতিক্ষীত সিনেমা। এই সিনেমায় ‘আয়না’ চরিত্র দিয়ে চঞ্চল চৌধুরী পেয়েছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা চরিত্র। প্রথম ছবিতেই তিনি পান সাফল্যের ছোঁয়া,অর্জন করেছেন আকাঙ্ক্ষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার থেকে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার। মুক্তির অপেক্ষায় আছে রিক্সা গার্ল নামে সিনেমা, অচিরেই ঘোষনা দিবেন নতুন সিনেমার। সিনেমা নির্মাতা হিসেবে নিজেকে অনেক উঁচুস্থানে বসাবেন, সেটা ভাবাই যায়। তবে তিনি আমাদের কাছে বিশেষ মানুষ হয়ে থাকবেন সুন্দর, গল্পনির্ভর বিজ্ঞাপন ও নাটক বানানোর জন্য। নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘হাফ স্টপ ডাউন’ থেকে গ্রামীনফোন, বাংলালিংক ,ল্যাব এইড, পন্ডসের সহ প্রচুর বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন, যার বেশিরভাগ ই পেয়েছে জনপ্রিয়তা, এই অতি অল্প সময়েই তিনি অনেক গভীর জিনিস তুলে ধরতেন, এখনো বিজ্ঞাপন বানিয়ে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন নির্মাতার বাইরে উনার আরেক পরিচয় তিনি একজন জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা। ২০০২ সালে আকরাম খানের সঙ্গে যৌথ ভাবে প্রথমবারের মত নির্মাণ করেন নাটক ‘হাওয়াঘর’। জাহিদ হাসান ও আফসানা মিমি অভিনীত এই নাটকটি তখন বেশ প্রশংসিত হয়। তবে তিনি নাট্যনির্মাতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন ‘একটি ফোন করা যাবে…. প্লিজ’ নির্মান করেন। ইরেশ যাকের ও জেনী অভিনীত এই নাটকটি ছিল ২০০৮ সালের অন্যতম জনপ্রিয় ও প্রশংসিত নাটক। এই নাটকের জন্য তিনি নির্মাতা হিসেবে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন। এর ঠিক পরের বছরেই অর্থাৎ ২০০৯ সালে নির্মাণ করেন ইজ ইক্যুয়াল টু, মায়েশা ও এই সময় নামে তিনটি নাটক, তিনটিই দর্শকদের কাছে বেশ গ্রহনযোগ্যতা পায়। আরেফিন শুভর স্বল্প ক্যারিয়ারে অভিনয়ের বিচারে ‘ইজ ইক্যুয়াল টু’ নাটকটিই সবচেয়ে সেরা হিসেবে সমাদৃত, জয়া আহসানের বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারে ‘মায়েশা’ নাটকটি অন্যতম। এছাড়া নির্মাণ করেছেন বড় পবিত্র আমার শহর,মায়া ও মৃত্যুর গপ্পো, সময় চুরি অন্যতম।
২০১৪ সালে ‘সারফেস’ নাটকের জন্য পান সেরা নির্মাতা হিসেবে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার। আয়নাবাজির ব্যাপক সাফল্যের পর টেলিভিশনের জন্য নির্মাণ করা আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ ও অস্থির সময়ে স্বস্থির গল্পের সঙ্গে নিজে জড়িত ছিলেন। দুই সিরিজই দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল, এর মধ্যে তিনি নিজে নির্মাণ করেন আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজের সবচেয়ে আলোচিত নাটক ‘মার্চ মাসে শূটিং’,এই সময়ের টিভি নাটকের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা অপূর্বর ক্যারিয়ারে এই নাটকটি বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। সামনেই আসছে ওয়েব সিরিজ ‘বাঘ বন্দী সিংহ বন্দী’। বিজ্ঞাপন ও নাটক নির্মাতা হিসেবে সফল পথচলার পর চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিশ্রুতিশীল নির্মাতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা এই প্রতিভাবান নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরীর আজ জন্মদিন ,শুভেচ্ছা রইলো। শুভ জন্মদিন অমিতাভ রেজা চৌধুরী!
- হৃদয় সাহা