জাতীয়
শুভ জন্মদিন হে আলোর পথযাত্রী

খাজা নিজাম উদ্দিন: আমি এখনও শেষ আশাটা রাখতে চাই-বেশিদিন আগের কথা না, ২০০৬ সালে দেশের রিজার্ভ ছিলো ১ বিলিয়ন ডলারের কম। আজ তা ৪০ বিলিয়ন ডলারস! কিছুদিন আগের কথা, একটা দেশে ১২/১৪ ঘন্টা লোড শেডিং হতো, সেদেশে একটা সরকার ছিলো, সেই সরকার একটা দেশে বিদ্যুৎ কেন লাগে, তাই জানতো না। উন্নয়ন তো দূরের কথা। আজ বাংলাদেশে কোটি উদ্যোক্তা, তার পেছনের শক্তিটা বিদ্যুৎ। বৈদেশিক রফতানি আয় ছিলো ডাবল ডিজিটের নিচে, আজ রফতানি ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
কিছুদিন আগের কথা, যে দেশ ছিলো পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্রতম দেশ। সেখানে একটা মোবাইল সেট কিনতে লাগতো লাখ টাকার বেশি, আজকার হিসাবে ১০ লাখ টাকার বেশি, আর প্রতি মিনিটে চার্জ ছিলো আজকের হিসাবে ১০০টাকারও বেশি। আবার কল করলেও টাকা, কল ধরলেও টাকা। সেই লুটপাট ভাঙতে আইনের দরকার ছিলো। ডঃ ইউনূসসহ আরও দু কোম্পানিকে মোবাইল ফোনের ব্যবসা দেয়া হয়। আর তারপরেরটা ইতিহাস। এই ইতিহাসের স্রষ্টা একজন মানুষ। আর কৃষিতে? সারা দুনিয়াতে এত বিস্ময়কর সাফল্য কোন দেশের নাই। নানা দেশের হুমকি সত্ত্বেও কৃষিতে ভর্তূকি দিয়ে গেছে। আর ছিলো বিশ্বমানের কৃষিবিশেষজ্ঞদের দিবারাত্রি পরিশ্রম। আজ যে আমরা করোনার থাবা থেকে সবচেয়ে দ্রুত ধাক্কা কাটিয়ে উঠছি, তা ওই কৃষির জন্য। এই তো ১৯৯৮-৯৯ সালের কথা। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদে জড়িতে থাকার অপরাধে একটা এনজিও এর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়। ইউরোপের ছোট্ট একটা দেশের রাষ্ট্রদূতের চাপে সেই রেজিস্ট্রেশন ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফিরিয়ে দিতে হয়েছিলো। হ্যাঁ, কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের যখন তখন নাক গলানো ছিলো রীতিমতো ভয়ংকর। আজ আর সেইসব দেশের রাষ্ট্রদূতদের সেইসব হুংকার, অনধিকার চর্চার দুঃসাহস দেখতে হয় না। একটা স্বাধীনদেশকে এভাবে অপমান করার ধৃষ্টতা চিরতরে বন্ধ করেছেন একজন। দুনিয়ার বুকে পদ্মাসেতু সবচেয়ে জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং এক কাঠামো। এটি দুঃসাহসিক এক স্বপ্ন। সুশীল দালালরা জানতো একটা পদ্মা সেতু একটা দেশকে কীভাবে পাল্টে দিবে। কোন নির্মাণ কাঠামো তৈরি করতে দেশি আর বিদেশি এত অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করতে হয় নি। পদ্মা সেতু আমাদের উন্নত দেশ হতে বড় ভূমিকা রাখবে। আর সেতুটি হাজারো ষড়যন্ত্র আর দুনিয়ার জটিলতম নির্মাণ জটিলতা সব শেষ করে শেষ পর্যায়ে আছে।
মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের প্রায় ৬০ লাখের বেশি প্রবাসী আছে, যারা টাকা না পাঠালে উপরের অনেক কিছুই হতো না। আর মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আবার এই দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে সাম্রাজ্যবাদী এক মহাশক্তিধর রাষ্ট্র। তাদের উপর ভর করেই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যেমন দখল রেখেছিলো, তেমনি রাজনীতিকেও গ্রাস করতে বসেছিলো। আর সেই মহা শক্তিশালী শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর হুমকিকে উড়িয়ে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করেছে বাংলাদেশ। আহা! ইলিশ নিয়ে কত কী। ৫গুণের বেশি উৎপাদন বেড়েছে।একটা দেশে ইন্টারনেট কেন লাগে, একটা সরকার ছিলো এদেশে, তারা জানতো না। সেই দেশে আজ ফোর জি চলে। সেই দেশের মানুষ নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখে। সেই দেশের মানুষ শুধু মোবাইলেই প্রতিদিন ১-৩ হাজার কোটি টাকা লেনদেন করে। একটা ইমেইল পাঠাতেই যেখানে মিনিটে মিনিটে বাফারিং হতো, আজ সেখানে কোটি কোটি মানুষে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সিং করে।দেশে সমস্যা একটা ছিলো, গত ১২ বছরে স্রোতের মতো টাকা এসেছে, বিশাল বিশাল মেগাপ্রকল্প এসেছে।
আমরা দেখছি, সেখানে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। আমলাদের দুর্নীতি, সিন্ডিকেটেড ব্যবসায়ীদের দুর্নীতিবাজ, আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মীদের দুর্নীতি আমাদের ক্ষোভের বড় কারণ।যে মানুষটি বহু অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, সেই মানুষটি দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণ ও বিচার করতে পারবে না, সেটা বিশ্বাস করি না। আমি এও বিশ্বাস করি না, তিনি দুর্নীতিবাজ সাথে পারবেন না। আমি বিশ্বাস করি,তাঁর শেষ লড়াইটা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। এ লড়াই সামান্য হলেও চলছে। অন্তত ৫০০ এর বেশি দুর্নীতিবাজ পেশাজীবী জেলখানায় আছে। আরও দু হাজারের বেশি মামলা আছে। সাহেদ, পাপিয়া, মালেকদের না ধরলেও করার কিছু ছিলো না। ধরেছেন। দুর্নীতির খবরগুলো আসতেছে। প্রকাশিত হচ্ছে। বিচারের বিষয়ে জনগণের একটা প্রত্যাশা আছে। দেশের সব দলের সব পেশার সব দুর্নীতিবাজদের বিচারের অপেক্ষায় সারা দেশ। এদেশে দুর্নীতিবাজদের বিচার শুধু একজনই করতে পারবেন। আর কেউ পারে নি, আগামী ৫০ বছরেও কেউ পারবে না।
প্রিয় মানুষ, শেখ হাসিনা, আপনাকে তা পারতে হবে। সেই আশায় আছি। আপনার জন্য দোয়া করছি, আপনি দীর্ঘায়ু হোন। বাংলাদেশের শেষ শত্রু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আপনার সবচেয়ে বড় লড়াইটা শুরু হোক। এ লড়াইয়ে কোটি মানুষকে আপনি পাশে পাবেন। দুর্নীতিবাজ দানবদের হাত থেকে এদেশের মেহনতি মানুষকে মুক্তির লড়াইটা আর বড় পরিসরে দেখতে চাই। শুভ জন্মদিন হে আলোর পথযাত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।