বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
সংগীতের এক ধূমকেতুর নাম হ্যাপি আখন্দ

ইশতিয়াক আহমেদ: মাত্র ২৭ বছরের জীবনে সংগীত উঠোনে ঝড় তুলেছেন দোর্দণ্ড প্রতাপে। বেঁচে থাকলে এতো দিনে হয়তো দেশের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীতজ্ঞ হতেন হয়তো। সংগীত পরিবারে জন্ম নেওয়ার ফলে বাবা এবং বড় ভাই লাকী আখন্দের কাছ থেকে পেয়েছেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংগীতজ্ঞান, আবেশী কণ্ঠস্বরের সঙ্গে সঙ্গে গিটার, পিয়ানো, তবলা সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সহজাত দক্ষতায় বিস্মিত করেছিল সেই সময়ের শ্রোতা ও শিল্পীদের।
১৯৭৩ সালে দুই ভাই মিলে গড়েছিলেন একটি ব্যান্ড। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ব্যান্ডটি ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর হ্যাপীর নামে ব্যান্ডের নামকরণ হয়েছিলো ‘হ্যাপীটাচ’। এছাড়া হ্যাপী নিজে ‘উইন্ডি সাইড অব কেয়ার’ নামে একটি ব্যান্ড গড়েছিলেন। ‘স্পন্দন’ ব্যান্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল তাঁর। এস এম হেদায়েতের লেখা ও লাকী আখন্দের সুরে ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটি তো কিংবদন্তি সম। সবার মুখে মুখে ফিরতো সেই গান। যে কটা গান মাইলফলক হয়ে থাকবে বাংলাদেশের গানের ইতিহাসে তাদের মধ্যে এটি একটি।
পরে তো সালাউদ্দিন জাকির বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘ঘুড্ডি’তেও ব্যবহার করা হয়েছিলো এই গান। তারপর ঐ গান চলে গেল অন্য এক দিগন্তে যে গান আজো সবার মুখে মুখে ফিরে। এই চলচ্চিত্রে গায়ক হিসেবেই অভিনয় করেছিলেন হ্যাপী। হ্যাপী আখন্দ সম্পর্কে ভাই সঙ্গীতজ্ঞ লাকী আখন্দ বলেছিলেন ‘হ্যাপির সংগীত-প্রতিভা ছিল আক্ষরিক অর্থেই বিস্ময়কর। সংগীতের প্রতি তাঁর একাগ্র নিষ্ঠা আর ভালোবাসার পাশাপাশি স্রষ্টা প্রদত্ত কিছু সহজাত গুণাবলি ও দক্ষতার কারণে আমরা যারা একই সময়ে সংগীত চর্চা করতাম, তাদের সবার মধ্যে ও ছিল সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল।’ গিটার, পিয়ানো, তবলা যা-ই বাজাতেন, এক অদ্ভুত ভালোলাগার জন্ম দিতে পারত তাঁর বাদন।
পৃথিবীর নানা ধাঁচের সংগীত শুনে শুনে ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুণী শিল্পীদের সান্নিধ্যে অর্জিত সংগীতের নানা জ্ঞান ও দর্শন অকাতরে বিলিয়ে দিতেন নিজের বন্ধুপ্রতিম সহশিল্পী আর ছাত্রদের মধ্যে। সেই সঙ্গে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ও নতুনত্ব আনতে হ্যাপি তাঁর উদ্ভাবনী শক্তিকে সব সময় কাজে লাগাতেন। একবার কলকাতার এইচএমভি সংগীত প্রযোজনা সংস্থার একটি গানের রেকর্ডিংয়ে আমি, হ্যাপি ও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল কাজ করছিলাম। হ্যাপি তবলা বাজানোর সময় শুধু তবলার “বায়া” দিয়ে এমন অদ্ভুত সুন্দর তাল বাজাচ্ছিলেন যে এইচএমভির তৎকালীন পরিচালক কলিম শরাফী রেকর্ডিং রুমে ঢুকে অবাক হয়ে হ্যাপির বাজানো দেখছিলেন। হ্যাপির সংগীত সবাইকে আনন্দ দিলেও তার নিজের জীবন কেটেছে অনেক অভিমান আর কষ্টে।’ আবার এল যে সন্ধ্যা’, ‘কে বাঁশি বাজায় রে’, খোলা আকাশের মতো তোমাকে হৃদয় দিয়েছি, ‘নীল নীল শাড়ি পরে’, ‘পাহাড়ি ঝরনা’, ‘এই পৃথিবীর বুকে আসে যায়’, স্বাধীনতা তোমায় নিয়ে গান তো লিখেছি’ র মতো মাস্টারক্লাস সব গান তাঁর গলায় অতুলনীয়।
ফিডব্যাকের মহড়া চলছিলো সেইদিন। বেশ ঠান্ডা পরিবেশে আড্ডাও চলছে মহড়ার মধ্যে। হঠাৎই ঝড়ের মতো খবর এলো হ্যাপি নেই! হ্যাপি মানে আমাদের হ্যাপি আখন্দ! ফিডব্যাকের সবাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেল! হ্যাপি চলে গেছে গন্ডির বাইরে এতো মানতে হবে. হ্যাপীর অকালে চলে যাওয়ায় বন্ধু হারানোর তীব্র বেদনা নিয়ে ফিডব্যাক ও মাকসুদুল হক লিখেলেন “তাকে বলে দাও আমি সেদিনের কথা ভুলিনি তাকে বলে দাও সেই মণিহার আজও খুলিনি” এই বাংলায় বহু কিংবদন্তি সংগীতের রথী, মহারথী আসবে, এসেছে কিন্তু হ্যাপি আখন্দ একজনই।