ব্যবসা ও বাণিজ্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
সস্তা “পে লেস” ব্র্যান্ডের অভিজাত “পালেসি” ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার গল্প

আবদুল্লাহ আল মুনতাসির: চাহিদা এবং চাওয়া দুটি খুব কাছাকাছি শব্দ হলেও সব সময় একই অর্থ বহন করে না। চাহিদা বলতে আমি যেটা মনে করি তা হচ্ছে, এমন কোন কিছু যা না থাকলেই নয়। যেমন- খাদ্য কিংবা থাকার জন্য জায়গা। আর চাওয়া বলতে যা মনে করি তা হচ্ছে, এমন কোন কিছু যা না থাকলে তেমন কোন ক্ষতি নেই কিন্তু থাকলে ভালো হয়। যেমন- কোন ভালো রেস্তোরাঁর দামি খাবার অথবা কোন উন্নত এলাকার দামি এপার্টমেন্ট। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আমার এক শিক্ষক আমাকে বলেন- “মানুষের চাহিদা সীমিত এবং মানুষের মধ্যে চাহিদা সৃষ্টি করা খুবই কঠিন। যেটা আমরা সৃষ্টি করতে পারি তা হচ্ছে চাওয়া।” মানুষের চাওয়া অসীম যা একটি সত্য কথা। এবং এই চাওয়া তৈরি করাই একজন সফল মার্কেটার এর কাজ।
মানুষের চাওয়া, মানুষের দৃষ্টিকোণের অপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। কোন একটি জিনিষ এক দৃষ্টিকোণে দেখলে মূল্যহীন মনে হলেও অন্য দিক থেকে দেখলে অমূল্য লাগতে পারে। ঠিক এই ধারণাকেই পুঁজি করে যুক্তরাষ্ট্রের “পে লেস সু সোর্স ” (Payless ShoeSource) গত ২৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ, তাদের প্রচারণার একটি অংশ হিসেবে তাদের “পে লেস” ব্র্যান্ড এর জুতার নাম পরিবর্তন করে “পালেসি” (Palessi) করে দেয়। পরীক্ষামূলক প্রচারণার অংশ হিসেবে তারা ২০ ডলার এর পাম্প সু ও ৪০ ডলার এর বুট জুতো নিয়ে এসে নামের সাথে দামও পরিবর্তন করে দেয়। ২০-৪০ ডলার এর জুতোর দাম করে দেওয়া হয় ৪০০-৫০০ ডলার। অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও অনেক বেশি। জুতো গুলো বিক্রির জন্য ঠিক ও করা হয় লস এঞ্জেলেস এর সান্টা মনিকার মত অভিজাত এলাকা। এমন এক জায়গায় দোকানটি খোলা হয় যেখানে আগে ছিল বিখ্যাত “জর্জিও আরমানি” (Giorgio Armani) এর দোকান। দাওয়াত করে নিয়ে আসা হয় তথাকথিত “ইন্সটাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার” বা প্রভাবকদের। লাল গালিচায় বিখ্যাত মডেল ও ভিআইপি দের সমাগমে দোকান মুখর হয়ে ওঠে।
এক ইনফ্লুয়েন্সার এর মতে জুতো গুলো খুবই মার্জিত। তো আরেকজনের মতে জুতো গুলো খুবই অভিজাত। তাদের মতে জুতো গুলো দেখেই নাকি উচ্চ মানসম্পন্ন পণ্য মনে হচ্ছে। তারা সবাই ই এগুলো ৪০০-৫০০ ডলার দামে খুব সহজেই কিনতে ইচ্ছুক। একজন সর্বোচ্চ ৬৪০ ডলার পর্যন্ত দিতে রাজি হয়ে যায়। যখন একেকজন প্রভাবক একেক সাক্ষাতকারকারীর কাছে জুতোর ভাল মান ও সুন্দর ডিজাইন নিয়ে প্রশংসা করতে ব্যস্ত তখনি তাদেরকে জানানো হয় যে এগুলো সবই ২০-৪০ ডলারের “পে লেস” ব্র্যান্ডের জুতো। বিখ্যাত মডেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভি আই পি, সবাই বাকরুদ্ধ। তারা কেউ বিশ্বাসই করতে পারছেনা যে তারা ২০-৪০ ডলার এর জুতোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ছিল কিছুক্ষণ আগেও।
এখন আমাদের মনে একটাই প্রশ্ন। পে লেস এর উদ্দেশ্য কি ছিল? পে লেস বুঝাতে চেয়েছে যে পণ্য মানসম্মত বা দামি হতে হয়না শুধু মানুষের দৃষ্টিকোণে পণ্যকে সেরা হিসেবে তুলে ধরতে পারলেই মানুষ তা আনমনেই পছন্দ করতে শুরু করে। পে লেস আরও বুঝাতে চেয়েছে যে পণ্যের মান চোখ বন্ধ করে এই তথাকথিত ইনফ্লুয়েন্সার অথবা কোন সেলিব্রিটির কথায় কম বা বেশি মনে না করে নিজে যাচাই করে দেখা উত্তম। মার্কেটিং দৃষ্টিকোণ থেকে এটি পে লেস এর দুর্দান্ত একটি পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি, যা এই ব্র্যান্ডটিকে আরও ভাল ভাবে সবার কাছে উপস্থাপন করবে।