খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
সাকিব আল হাসান কিংবা একজন দূর্ভাগা রাজপুত্র

এস.কে. শাওন: বিশ্বকাপের জার্সি পরে তিনি দলের সব সদস্যেদের সাথে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেননি কেন? দলের সঙ্গে এক বিমানে না গিয়ে পরিবারের সাথে কেন আলাদা বিমানে গেলেন! এসব বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো সে গাঁয়ে মাখেনি। বলছিলাম বাংলার ক্রিকেটের প্রাণ সাকিব আল হাসান এর কথা। যেই সাকিবকে নিয়ে এতো সমালোচনা সেই সাকিবই বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিজ শরীরের ৬ কেজি ওজন কমিয়ে গেছেন। সমালোচনায় কান না পেতে দলের হয়ে বিশ্বকাপ রাঙিয়েছেন।
ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে উঠে করেছেন বিশ্ব রেকর্ড। বাংলাদেশের সেমির স্বপ্নের তরী ডুবে গেলেও সাকিব যে প্রাপ্তিটা এনে দিয়েছেন তা নি:সন্দেহে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। সাকিব তাঁর দলের হয়ে বিশ্বকাপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ফুল ফুটিয়ে গেছেন! ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ৩টি ম্যাচ জিতেছে। এই ৩টি ম্যাচেই জয়ের নায়ক বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে নতুন সব রেকর্ড গড়ে নিজের নাম নিয়ে গেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এভাবে রেকর্ড করতে করতে সাকিব হয়তো বিরক্ত হয়ে গেছেন! ক্রিকেট বিশ্বকাপ মাতানো কীর্তিমান অলরাউন্ডারের সংখ্যা কম নয়। বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক বিশ্বকাপে ১০ উইকেট এবং ৬০০ রানের রেকর্ড করেন সাকিব। তবে সাকিবের মতো এমন কীর্তি কোন অলরাউন্ডার গড়তে পারেননি। শুধু তাই নয়,বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে ৪০০ রান এবং ১০ উইকেটও নেই কোন অলরাউন্ডারের।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচে ফিফটি ও ৫ উইকেট পাওয়ার রেকর্ডও সাকিবের। ১০ ওভারে ২৯রানের খরচায় ৫ উইকেট সাকিবের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। এছাড়াও বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০০রান ও ৩২ উইকেটের মালিক এখন সাকিব। এর আগে বিশ্বকাপে ৯০০রান ও ২৫ উইকেটের রেকর্ড ছিল সাকিবসহ মাত্র ৩ জন ক্রিকেটারের। বাকি দু’জন ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ ও শ্রীলংকার সনাথ জয়সুরিয়া। অজিদের কিংবদন্তি অধিনায়ক ওয়াহ বিশ্বকাপে মোট ৩৩ ম্যাচ খেলে ৯৭৮ রানের সঙ্গে ২৭ উইকেন পেয়েছেন। আর জয়সুরিয়া মোট ৩৮ টি ম্যাচে ১১৬৫ রানের পাশাপাশি ২৭ টি উইকেট পেয়েছেন। ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৬ গড়ে ৬০৬ রান সংগ্রহ করেন। যা এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে একজন ব্যাটসম্যানেরর সর্বোচ্চ রান। ৮ ম্যাচে ২ টা শতকের পাশাপাশি রয়েছে ৫ টি অর্ধশতক।বল হাতে ৮ ম্যাচে নিয়েছেন ১১ উইকেট। বলতে গেলে এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে একাই টেনেছেন সাকিব!
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনাল। কিন্ত পঞ্চপান্ডবের মধ্যে সাকিব-মুশফিক ছাড়া বাকি তিন জনের কেউই আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারেননি।দলের হয়ে সাকিব একাই বুক চিতিয়ে লড়ে গেছেন। কয়েকটা ম্যাচে তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কোন সতীর্থ থাকলে হয়তো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ভাগ্যটা অন্যরকমও হতে পারতো। যেমন ইংল্যান্ডের সাথে পাহাড়সম টার্গেটে খেলতে নেমে বেশিরভাগ ক্রিকেটার আসা যাওয়ার মিছিলে থাকলেও এক প্রান্তে থেকে সেঞ্চুরীই করে ফেলেন সাকিব। ভারতের বিপক্ষেও একই কান্ড! ব্যাটসম্যানরা সেট হয়েও উইকেট বিলিয়ে দিচ্ছিলেন।
প্রতিটা মুহুর্তে সম্ভাবনা জাগিয়েও ভারতের সাথে টাইগারদের পরাজয় মেনে নিতে হয়। সেদিন অবশ্য সাকিবের পাশাপাশি সাইফউদ্দিনও অর্ধশতক করেছেন। যারা বিশ্বকাপের পূর্বে সাকিবকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন তারা হয়তো সাকিবের পারফরম্যান্সে দাঁত ভাঙা জবাব পেয়ে গেছেন। কিন্তু সাকিব ভালো পারফরম্যান্স করলেও তাঁর দল যে সেমিতে গেলো না! সম্ভবত সেমিফাইনালে না যাওয়ার এই যন্ত্রণা সাকিবকে আফসোসে পুড়াবে! তাই বলতে হয় যে- দুর্ভাগ্য সাকিবের! সে তাঁর ভক্তদের জন্য হৃদয় জেতার গল্প লিখলেও তাঁর মনে রচিত হলো অনন্ত আক্ষেপের গল্প।